অর্থনীতির বিভিন্ন দিক প্রশ্নোত্তর পর্বটি তৈরি করা হয়েছে তোমাদের অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পরিষদের অন্তর্গত একাদশ শ্রেণির ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য। তোমাদের অর্থনীতির বিভিন্ন দিক অধ্যায় থেকে আজকের এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ গুলো তুলে ধরা হয়েছে; আশা করা যায় যেগুলি তোমাদের আগামী বার্ষিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে
একাদশ শ্রেণী – ইতিহাস
অর্থনীতির বিভিন্ন দিক প্রশ্নোত্তর
প্রশ্নঃ ক্রীতদাস প্রথা কি?
উত্তরঃ প্রাচীনকালে বিভিন্ন দেশের সমাজ ব্যবস্থায় কোন প্রভুর মালিকাধীন কোন কোন ব্যক্তির বসবাস করা ও বেঁচে থাকার প্রথা চালু ছিল। অধিনস্তদের উপর তার প্রভুর এই সার্বিক মালিকানার অধিকার ক্রীতদাসপ্রথা নামে পরিচিত।
প্রশ্নঃ দাস অর্থনীতি কি?
উত্তরঃ প্রাচীন রোমান, মিশরীয় ভারতীয় সভ্যতায় ক্রীতদাসপ্রথা একটি সুনির্দিষ্ট কাঠামো লাভ করেছিল। ক্রীতদাসদের শ্রমের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা অর্থনীতি দাস অর্থনীতি নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ ভার্নি কি?
উত্তরঃ ক্রীতদাসদের যেসকল সন্তান জন্মসূত্রে ক্রীতদাসে পরিণত হতো তারা ভার্নি নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ ডেলোস কী?
উত্তরঃ পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের ডেলোস ছিল একটি বড় ক্রীতদাস বাজার।
প্রশ্নঃ ম্যানুমিসিও কী?
উত্তরঃ প্রাচীন রোমান সভ্যতায় যেসব ক্রীতদাস অমানুষিক পরিশ্রম ও প্রচুর নির্যাতন থেকে মুক্তি পাওয়ার উদ্দেশ্যে পালিয়ে যেত, তারা ম্যানুমিসিও নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ গ্লাডিয়েটর কি?
উত্তরঃ প্রাচীন রোমে সাধারন নাগরিকদের অবসর বিনোদনের অঙ্গ হিসেবে গ্লাডিয়েটর এর লড়াই নামে এক ধরনের নিষ্ঠুর খেলা প্রচলিত ছিল। এই খেলায় কোন ক্রীতদাসকে খোলা মাঠে বাঘ সিংহ ও অন্যান্য হিংস্র এবং ক্ষুধার্ত পশুর সঙ্গে লড়াইয়ে অংশ নিতে হতো। এই যোদ্ধা ক্রীতদাসরা গ্ল্যাডিয়েটর নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ সতুরনালিয়া উৎসব কি?
উত্তরঃ প্রাচীন রোমে ডিসেম্বর মাসে কৃষি দেবতার সন্তুষ্টির জন্য বার্ষিক উৎসব অনুষ্ঠিত হতো, এই উৎসব সতুরনালিয়া বা কৃষি দেবতার উৎসব নামে পরিচিত ছিল। এই উৎসবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল এইযে, উৎসব চলাকালীন পর্বে দাতাদের দাস বা ক্রীতদাসদের নিয়ে একসঙ্গে উৎসবে মেতে উঠতো।
প্রশ্নঃ লিবারটাস কি?
উত্তরঃ প্রাচীন রোমান সভ্যতায় মুক্তিপ্রাপ্ত ক্রীতদাস লিবারটাস নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ স্পার্টাকাস কে ছিলেন?
উত্তরঃ ক্রীতদাস বিদ্রোহের ইতিহাসে স্মরণীয় ব্যক্তি ছিলেন স্পার্টাকাস। ৭৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দে রোমের কাপুয়া শহরে তার নেতৃত্বে শুরু হয় দাস বিদ্রোহ। যদিও তার নেতৃত্বে দাস বিদ্রোহ ব্যর্থ হয়েছিল।
প্রশ্নঃ কালোসিয়াম কী?
উত্তরঃ প্রাচীন রোমান সভ্যতায় গ্ল্যাডিয়েটররা যে জায়গায় লড়াই করতো বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তা ছিল চতুর্দিকে দেয়াল দিয়ে ঘেরা এক আবদ্ধ জায়গা। এ ধরনের আবদ্ধ জায়গায় এক বড় উদাহরণ হল রোমান সুবিখ্যাত কলোসিয়াম এটি অবশ্য ৮০ খ্রিস্টাব্দের এক রোমান স্থাপত্যকর্ম হিসেবেই বেশি চিহ্নিত।
আরো পড়ুন – পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাস এর গুরুত্ব আলোচনা করো।
প্রশ্নঃ সামন্ততন্ত্র কি?
উত্তরঃ যে মধ্যযুগীয় ব্যবস্থায় রাজা নামসর্বস্ব প্রধান, আর ভূস্বামী প্রকৃত ক্ষমতার অধিকারী, যার নিচে বিভিন্ন স্তরের শাসক পারস্পারিক প্রভুত্ব কে মেনে নিয়ে, যে পিরামিডের মতো আকৃতির আর্থসামাজিক ব্যবস্থার বিন্যাস ঘটিয়েছে তাকেই সামন্ততন্ত্র বলা হয়।
প্রশ্নঃ ভিলেন কি?
উত্তরঃ মধ্যযুগের ইউরোপের সামন্ততন্ত্রের সমাজ ব্যবস্থায় সমাজের তৃতীয় শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত ছিল বিপুল সংখ্যক কৃষক, ক্ষুদ্র কৃষকেরা ভিলেন নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ ভ্যাসাল কি?
উত্তরঃ সামন্ততান্ত্রিক পিরামিডের সর্বনিম্ন স্তরে অবস্থানকারী অগণিত দরিদ্র কৃষকদের বলা হত ভ্যাসাল। তারা নির্দিষ্ট কিছু শর্ত নাইট দের কাছ থেকে প্রাপ্ত জমিতে উৎপাদনের কাজে নিযুক্ত থাকতো। এরা কারো আনুগত্য লাভ করার সুযোগ পেত না।
প্রশ্নঃ ইনভেস্টিচার কি?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপে সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে উর্দ্ধতন সামন্ত প্রভুর প্রতি অধঃস্তন সামন্ত আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করতেন। এই বিশেষ অনুষ্ঠান ইনভেস্টিচার নামে পরিচিত। এর বিনিময়ে উর্দ্ধতন সামন্ত প্রভু অধস্তন সামন্ত কে জমি দান করতেন।
প্রশ্নঃ ফিফ কী?
উত্তরঃ ফিফ কথাটির অর্থ হল নির্দিষ্ট শর্তের বিনিময়ে কোন ব্যক্তি কে কিছু জমি বা পদ প্রদান করা। মধ্যযুগের ইউরোপের সামন্ততন্ত্র ব্যবস্থায় সামন্ত প্রভুর প্রতি নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনের বিনিময় অধীনস্থ প্রজা যে ভূখণ্ড লাভ করত, তাকেই ফিফ বলা হত।
প্রশ্নঃ কমিটেটাস প্রথা কি?
উত্তরঃ প্রাচীন জার্মানিতে কমিটেটাস নামে এক ধরনের প্রথা প্রচলিত ছিল। এই প্রথা অনুসারে, স্বাধীন যোদ্ধারা স্বেচ্ছায় কোনো শক্তিশালী সামরিক নেতা বা সেনাপতির প্রতি আনুগত্য জানিয়ে তার স্বার্থ পূরণের বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দান করতো। আনুগত্যের বিনিময়ে সেই শক্তিশালী সামরিক নেতা বা সেনাপতি তার প্রতি অনুগত যোদ্ধাদের নিরাপত্তা ও আশ্রয়দান করতেন।
প্রশ্নঃ নাইট কি?
উত্তরঃ মধ্যযুগে ইউরোপের সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা বীরযোদ্ধাদের বলা হত নাইট। এরা আবার নির্দিষ্ট কিছু শব্দের মাধ্যমে তাদের অধঃস্তন অগণিত কৃষকদের জমি বন্দোবস্ত দিতেন এবং কৃষকদের জীবন সম্পত্তি রক্ষার দায়িত্ব নিতেন।
আরো পড়ুন – প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র বা পলিস গুলি গড়ে ওঠার কারণ কি ছিল?
প্রশ্নঃ করভি কি?
উত্তরঃ সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থা সপ্তাহে দুই থেকে তিন দিন কৃষক বাধ্যতামূলকভাবে বিনা পারিশ্রমিকে এ প্রভুর জমিতে শ্রম দিতে, রাস্তা ও সেতু তৈরিতে বাধ্য ছিল – এই নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ ম্যানর ব্যবস্থা কি?
উত্তরঃ সামন্ততান্ত্রিক ব্যবস্থার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ ছিল ম্যানর ব্যবস্থা। এই ব্যবস্থা ছিল সামন্ততান্ত্রিক সমাজের অর্থনৈতিক কাঠামো। এই প্রথার মাধ্যমে সামন্ত প্রভু নিজের খাস জমি তার অধীনস্থ কৃষকদের দ্বারা চাষ করাতে এবং এর দ্বারা কৃষকদের ওপর শোষণের ধারা অব্যাহত রাখতেন।
প্রশ্নঃ শিভালরি কী?
উত্তরঃ ইউরোপে সামন্ততন্ত্রের শেষদিকে, বিশেষ করে ত্রয়োদশ শতকে সামন্ত ব্যবস্থায় বিশেষ এক ধরনের বীরত্বের আদর্শ গড়ে ওঠে। এই ব্যবস্থা সাধারণভাবে শিভালরি নামে পরিচিত। সামন্তপ্রভুদের নিরাপত্তা প্রয়োজনে নাইটদের নিয়ে গঠিত বিশেষ প্রতিরক্ষা বাহিনী ছিল শিভালরি।
প্রশ্নঃ ট্রবাদুর – কারা?
উত্তরঃ মধ্য যুগে নাইট দের বীরত্ব আদর্শ ও প্রেমের কাহিনী ইউরোপে একদল চারণ কবি গ্রাম ও শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে গেয়ে শোনাতেন, এইসকল চারণকবি দক্ষিণ ফ্রান্সে ট্রবাদুর নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ মিনেসিঙ্গার নামে কারা পরিচিত ছিল?
উত্তরঃ মধ্য যুগে নারীদের বীরত্ব ও আদর্শ প্রেমের কাহিনী ইউরোপে একদল চারণকবি গ্রাম ও শহরে বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ করে শোনাতেন, এইসকল চারণকবি জার্মানিতে মিনেসিঙ্গার নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ অগ্রহার প্রথা বা ব্রহ্মদেয় কী?
উত্তরঃ ভারতবর্ষে খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতকের পরবর্তীকালে পুণ্য অর্জনের উদ্দেশ্যে ব্রাহ্ম ধর্ম প্রতিষ্ঠান নিষ্কর জমি দান করার প্রথা চালু ছিল, এই প্রথা অগ্রহার প্রথা বা ব্রহ্মদেয় নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ ইক্তা শব্দের অর্থ কি?
উত্তরঃ আক্ষরিক অর্থে ইক্তা বলতে বোঝায় একটি অংশ বা একটি এলাকা।
প্রশ্নঃ ইক্তা ব্যবস্থা কি?
উত্তরঃ ভারতবর্ষে সুলতানি আমলে রাজকীয় জমির ছোট ছোট বিভিন্ন অংশে ভাগ করে সেনাধ্যক্ষ, সৈনিক এবং অন্যান্য মুসলিম অভিযানের মর্যাদা অনুসারে তাদের মধ্যে বিলি করা হতো, এই ব্যবস্থায় ইক্তা ব্যবস্থা নামে পরিচিত ছিল।
প্রশ্নঃ গিল্ড বা নিগম কি?
উত্তরঃ প্রাচীন ভারতের শিল্প ও বাণিজ্যের বিভিন্ন শাখায় নিযুক্ত ব্যক্তিরা নিজেদের স্বার্থ সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে পেশাদারী সংগঠন গড়ে তুলেছিল তা গিল্ড বানিগ্রম নামে পরিচিত, এটি ছিল একটি স্ব-শাসিত সংস্থা।
প্রশ্নঃ শ্রেষ্ঠী কি?
উত্তরঃ প্রাক মৌর্য যুগের ধনী বনিকদের বলা হত শ্রেষ্ঠী।
প্রশ্নঃ নগর বিপ্লব কি?
উত্তরঃ ভারতের তুর্কি আক্রমণের পরবর্তীকালে কৃষি ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন ঘটে এবং উন্নত অর্থ ব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এর ফলে শিল্প ও বাণিজ্যের বিকাশ ঘটে এবং নগরায়নের সূত্রপাত ঘটে। নগরের এই অগ্রগতিকে মোহাম্মদ হাবিব নগর বিপ্লব আখ্যা দিয়েছেন।
আরো পড়ুন – মহাজনপদ গুলির মধ্যে মগধের উত্থানের কারণ গুলি আলোচনা করো.
বিঃ দ্রঃ আমাদের আজকের আর্টস স্কুল ডট ইন এর এই আর্টিকেলটি অর্থাৎ অর্থনীতির বিভিন্ন দিক প্রশ্নোত্তর পর্বটি তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু পাঠ্যবই ও রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে; যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি; তাই আমাদের আজকের এই অর্থনীতির বিভিন্ন দিক প্রশ্নোত্তর পর্বটি নিয়ে তাদের যদি কোনরকম সমস্যা হয়ে থাকে; তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়, আমরা আপনার সমস্যা দূরীকরণের যথাসাধ্য চেষ্টা করব। ধন্যবাদ।