Menu

নোঙর কবিতা  অজিত দত্ত সম্পূর্ণ আলোচনা

নোঙর কবিতা অজিত দত্ত; আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের আলোচনার বিষয়, WBBSE সিলেবাসের নবম শ্রেণির বাংলা সিলেবাসের অন্তর্গত নোঙর কবিতা অজিত দত্ত, বিষয় বস্তু, নামকরণ, উৎস এবং বিষদে আলোচনা।

নোঙর কবিতা  অজিত দত্ত

নবম শ্রেণি বাংলা

 কবি পরিচিতিঃ

বাংলা কাব্যজগতে কবি অজিত দত্ত এক স্মরণীয় নাম। 1907 খ্রিস্টাব্দে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।  কল্লোল যুগের সাহিত্যিক হয়েও তিনি রবীন্দ্রনাথের বিরোধিতায় উচ্চকণ্ঠ ছিলেন না।  নৈরাশ্যের বেদনা কবিকে জীবন থেকে বিমুখ না করে বরং জীবনবাদী করে তুলেছিল।  কবি অজিত দত্ত ছিলেন  ভাববাদী  ও রোমান্টিক কবি।  কবি অজিত দত্তের কাব্যের অন্যতম উপাদান হলো প্রেম।  সৌন্দর্য  ও  রোমান্স  তার লেখার অন্যতম বৈশিষ্ট্য।  তার লেখা  সনেট গুলিও  প্রশংসার দাবি রাখে।  তার লক্ষ্য করা যায় সমকালীন সমাজের প্রতি কবির  আক্ষেপ। প্রেম ও জীবনকে ঘিরে কবির কাব্য গুলি রচিত হয়েছিল।  এক কথায় বলা যায়,  তিনি প্রেমের কবি,  জীবনের কবি।  হাজার 979 খ্রিস্টাব্দে কবি অজিত দত্ত আমাদের সকলকে ছেড়ে পরলোকগমন করেন।  তার মৃত্যু বাংলা সাহিত্য জগতের এক অপূরণীয়  ক্ষতের সৃষ্টি করে  যা কোনদিনও পূরণীয় নয়।

কবির লেখা কাব্যগ্রন্থ গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি হলো –  কুসুমের মাস,  পুনর্ণবা,  ছায়ার আলপনা,  পাতাল কন্যা,  নষ্ট চাঁদ ইত্যাদি।  কুসুমের মাস কাব্যটি প্রকাশিত হবার পর পরেই বাংলা কাব্যজগতে কবির জয়জয়কার পরে যায়।  কথা সাহিত্যিক বুদ্ধদেব বসু  কুসুমের মাস কাব্যগ্রন্থটি সম্পর্কে বলেছিলেন –  প্রথমেই বলে রাখি টেকনিকের দিক থেকে অজিত কুমার এর সনেটগুলো অনবদ্য।

নোঙর কবিতা অজিত দত্ত উৎসঃ

তোমাদের প্রার্থনার কবিতাটি কবি অজিত দত্তের লেখা ‘সাদা মেঘ কালো পাহাড়’  নামো কাব্যগ্রন্থ থেকে গৃহীত হয়েছে।

 বিষয় সংক্ষেপঃ 

স্থিতি ও গতির চিরন্তন দ্বন্দ্বে  ক্ষতবিক্ষত মানব হৃদয়ের চিত্র নোঙ্গর কবিতায় কবি তুলে ধরতে চেয়েছেন।  অজিত দত্ত রোমান্টিক কবি,  তাই পরিচিত জগতের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে চায় না।  তরী নিয়ে কবি সাত সমুদ্র পাড়ে নতুনদেশ পাড়ি দিতে চান।  কিন্তু অজান্তেই কখন যেন সেই তরী  নোঙরের কাছিতে বাঁধা পড়ে গেছে।  সমুদ্রের ঢেউ গতির বার্তা নিয়ে আসে।  কবি সারারাত দার টানেন, টেনেই চলেন।  মাস্তুলে পাল  বাঁধেন তারার দিকে চেয়ে দিকে নিশানা করেন কিন্তু নৌকো   এগোয় না –

যতই তারার দিকে চেয়ে করি দিকের নিশানা

ততোই বিরামহীন এই দাঁড় টানা।

সাংসারিক,  সামাজিক মানুষ হিসেবে কবি বাঁধা পড়ে আছেন তার কর্ম জগতে  এবং দায়িত্ব-কর্তব্যের বাঁধনে।  অথচ তার সৃষ্টিশীল কল্পনাপ্রবণ মন সমস্ত বন্ধন ছিন্ন করে পাড়ি দিতে চায় নতুনের সন্ধানে।  বন্ধন মুক্তির এই ব্যর্থতা কবিকে বিষণ্ণ করে তোলে।  যে আশা পূর্ণ হবেনা কখনো তার জন্য কবি জেনেশুনেই বৃথা চেষ্টা চালিয়ে যান জীবনভর। তার নিস্তব্দ মুহূর্তগুলি সাগর গর্জনে কেঁপে ওঠে,  দাঁড়ের নিক্ষেপে তিনি যেন শুনতে পান  স্রোতের বিদ্রুপ –

নিস্তব্ধ মুহূর্তগুলি সাগরের গর্জনে ওঠে কেঁপে

স্রোতের বিদ্রূপ শুনি প্রতিবার দাঁড়ের নিক্ষেপে

নিজের সৃষ্ট সাহিত্য সম্ভারে নৌকা বোঝাই করে কবি পাড়ি দিতে চান সপ্তসিন্ধু পারে। দূর দেশে দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে চান তার কৃতিকে,  কিন্তু গতিহারা তার জীবন তরী রূঢ় বাস্তবতার নিগড়ে আবদ্ধ হয়ে আছে।  নানা প্রতিবন্ধকতায় তার জীবন আবদ্ধ হয়ে আছে।

 

নোঙর কবিতা অজিত দত্ত নামকরণঃ 

সাহিত্যের অন্যান্য অংশের মতো  কবিতা শিরোনাম  তার অন্তর্নিহিত  ভাব  বা  ব্যঞ্জনাকে  আভাসিত করে।  কবি অজিত দত্তের সাদা মেঘ কালো পাহাড় কাব্যগ্রন্থের  নোঙর কবিতাটিও  এর বাইরে নয়।  আলোচ্য কবিতার নামেও ব্যঞ্জনার আভাস পাওয়া যায়। নোঙর হল  লোহার তৈরি একটি বস্তু যার সাহায্যে নৌকো বাঁধা হয় তীরে। কাছি বা শিকল দিয়ে নোঙরের সঙ্গে নৌকাকে বেঁধে রাখা হয়। নোঙর থাকে জলের নিচে,  তাকে দেখা যায় না।  অনুরূপভাবে,  অদৃশ্য বন্ধনে মানুষের জীবন বাঁধা পড়ে থাকে।  মন চাইলেও অনেক কিছুই আমরা করতে পারি না,  শতশত বন্ধন পিছুটান আমাদের স্বপ্ন কল্পনার গতিকে রুদ্ধ করে।

কবি চান তরী নিয়ে সাত সাগরের পাড়ে যাত্রা করতে,  কিন্তু সংসার সীমান্তে তিনি বাঁধা পড়ে আছেন,  যতই দাড় টানেন যতই চেষ্টা করেন সেই বন্ধন ছিন্ন করতে পারেন না।  রোমান্টিক কবি মন চিরচঞ্চল  সমুদ্রের আহবানে সাড়া দিতে চান।  পরিচিত জগতের গন্ডি পেরিয়ে চলে যেতে চান  দূর দেশে নতুনের সন্ধানে  কিন্তু তা তিনি পারেন না।  এই ব্যর্থ অসহায়তা কবির হৃদয়কে ক্ষত বিক্ষত করে।

নোঙর এখানে স্থিরতা আর বন্ধন এর প্রতীক। নোঙরের কাছি ছিন্ন করে কবি গতির জগতে পাড়ি দিতে পারেন না,  কারণ বাস্তব বড় নির্মম।  বহুবিধ কাজ দায়িত্ব-কর্তব্য মায়া-মমতা কবিকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে রাখে। নোঙরে বাধা নৌকোর মতোই কবির জীবন তরীটি গতিহারা।  তাই নোঙর কবিতার এই ব্যঞ্জনা ধর্মী নামকরণ সম্পূর্ণ সার্থক একথা বলাই যায়।

 

Read More: আমৃত্যু দুঃখের তপস্যা এই জীবন – কবি জীবনকে দুঃখের তপস্যা বলে মনে করেছেন কেন? 

 

বিঃদ্রঃ নোঙর কবিতা অজিত দত্ত; এর এই আলোচনাটা / আর্টিকেলটি তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু পুস্তকের সাহায্য নিতে হয়েছে। যদিও নোঙর কবিতা অজিত দত্ত এই আর্টিকেলটি তৈরি করার জন্য আমরা কোনো প্রকাশকের অনুমতি নিতে পারিনি। তাই নোঙর কবিতা অজিত দত্ত এই আলোচনা পর্বটি নিয়ে আপনাদের কারো কোনো সমস্যা হয় তাহলে আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়, আর এভাবেই https://artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো। ধন্যবাদ।

Comments 1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!
%d bloggers like this: