Menu

পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাস এর গুরুত্ব

পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাস এর গুরুত্ব আলোচনা করো;  আজকে আমরা তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পরিষদের একাদশ শ্রেণির ইতিহাস সিলেবাস এর অন্তর্গত প্রথম অধ্যায় অর্থাৎ অতীত ধারণা থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও তার উত্তর তোমাদের আগামী পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  তাহলে চলো দেখে নেওয়া যাক আজকের প্রশ্নটি-

প্রশ্নঃ পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাস এর গুরুত্ব আলোচনা করো।

 উত্তরঃ ইতিহাস হল মানব জাতির অতীত কর্মকাণ্ডের কালানুক্রমিক অধারাবাহিক লিখিত বিবরণ।  ইতিহাস হল অতীত ও বর্তমানের বিচার-বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পথ দেখায়।  অধ্যাপক মেটল্যান্ড  এর মতে,  মানুষ যা ভাবে এবং যা করে তাহলে ইতিহাস।  ইতিহাস শুধু মানুষের কর্মকান্ডের হিসাব রাখে না,  তার চিন্তা-ভাবনা ও হিসাব রাখে। এডমন্ড  বার্ক  বলেন,  ইতিহাস সবসময় প্রবহমান,  বহমান নদীর মত থেমে থাকে না।  এ এল রাইজ লিখেছেন  ভৌগলিক ও প্রাকৃতিক পরিবেশে সমাজবদ্ধ মানুষের কাহিনী ইতিহাস। মানুষ ক্রমাগত নিজের অবস্থার উন্নতি ঘটিয়েছে চলেছে,  সৃষ্টি করে চলেছে সংস্কৃতি ও সভ্যতা।  সংস্কৃতি হলো মানুষের চিন্তা ভাবনার শ্রেষ্ঠ ফসল,  আচার-আচরণ,  সাহিত্য-শিল্প ধর্ম-দর্শন।  ইতিহাস কতগুলি নীতির সমষ্টি নয়,  ইতিহাস হল মানুষের প্রগতির কাহিনী।  বর্তমান শতাব্দীতে ব্যবহারিক বিজ্ঞানের অগ্রগতি ঘটলেও,  ইতিহাস এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব মোটেই হ্রাস পায়নি।

পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো
পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো

ক) অতীতের প্রতিচ্ছবিঃ

ইতিহাস হল অতীতের আয়না।  অতীতে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলি  সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখে ইতিহাস।  বিভিন্ন সভ্যতার ক্রমবিকাশ,  বিভিন্ন জাতির উত্থান পতন,  বিভিন্ন রাষ্ট্র ও রাজা বাদশার কর্মকাণ্ড  প্রভৃতি সব ঘটনা ইতিহাসে সংরক্ষিত হয়।  সংরক্ষিত ইতিহাসের কল্যাণকর দিকগুলি অনুসরণ করে বর্তমান প্রজন্ম  সুপথে পরিচালিত হতে পারে।

খ)  বর্তমানের ভিত্তিঃ

অতীতের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান দাঁড়িয়ে আছে,  ইতিহাস হল অতীত এর সাক্ষী।  তাই বর্তমান কে ভালোভাবে জানতে হলে,  বুঝতে হলে অতীত ইতিহাসকে জানতে হবে।  তাই ইতিহাস বর্তমানকে জানার সুযোগ করে দেয়।

গ)  পথপ্রদর্শক  রূপে ইতিহাসঃ

সমাজ ও জাতির ধারাবাহিক অগ্রগতিতে বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন শাসকগণ যে সকল ভুল ত্রুটি করেছেন তার ফলে দেশ ও জাতির সংকটের সৃষ্টি হয়েছে বা কোন বিশেষ পদক্ষেপ দেশ বা জাতির ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছে,  এর ব্যাখ্যা ইতিহাসে  পাওয়া যায়।  এই সঠিক ঘটনাগুলি পদক্ষেপগুলি বর্তমানে আমাদের পথ প্রদর্শক এর ভূমিকা পালন করে।

ঘ)  রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক উন্নয়নঃ

ইতিহাস থেকে অতীতের বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক কার্যকলাপ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা যায়।  কোন শাসকের কোন রাজনৈতিক পদক্ষেপ ভুল ছিল কিনা,  বা কোন ত্রুটিপূর্ণ প্রশাসনিক পদক্ষেপের ফলে সেখানকার জাতীয় জীবনে বিপদ ঘনিয়ে এসেছিল কিনা,  অথবা কোন শাসক কোন পদক্ষেপ এর সাহায্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও প্রশাসনিক উন্নতি ঘটাতে পেরেছিলেন তার বিস্তৃতি ব্যাখ্যা ইতিহাসে পাওয়া যায়।

ঙ ) জ্ঞানের বিকাশঃ

ইতিহাস হল সর্ববৃহৎ জ্ঞান ভান্ডার।  জ্ঞানের সকল শাখা গুলি  যেমন –  সাহিত্য,  ধর্মনীতি,  রাজনীতি,  অর্থনীতি,  সমাজনীতি,  সংস্কৃতি,  বিজ্ঞান,  বিপ্লব,  আন্দোলন,  মহাপুরুষের কর্মকাণ্ড সকলেই ইতিহাসের আলোচনায় স্থান লাভ করে।

চ)  সাংস্কৃতিক অগ্রগতিঃ

ইতিহাসের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন জাতির সাংস্কৃতিক জীবনের অগ্রগতি ঘটতে থাকে।  ইতিহাস জানতে সাহায্য করে যে –  আমাদের বর্তমান সংস্কৃতি,  অতীতের সংস্কৃতির ধারাবাহিক বিবর্তনের পরিণাম বা ফল।  অর্থাৎ অতীতের সংস্কৃতির ওপর কোনো দেশ বা জাতির বর্তমান সংস্কৃতি দাঁড়িয়ে আছে।

ছ)  প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সতর্কতাঃ

প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে সভ্যতা ধ্বংস হয়।  বহুজাতিক সীমাহীন ক্ষতির সম্মুখীন হয়।  যেমন –  ছিয়াত্তরের মন্বন্তর  বা পঞ্চাশের মন্বন্তরে  বাংলার ব্যাপক প্রাণহানি ব্রিটিশ শাসনের ত্রুটিপূর্ণ শাসন নীতির ফলে হয়েছিল।  পরবর্তীকালে বিভিন্ন গবেষণায় এর থেকে প্রতিকারের উপায় বের করা হয়।  এর ফলে বর্তমানে প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটলে,  সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করে মানুষকে মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হয়।

জ)  জাতীয়তাবাদের বিকাশঃ

ইতিহাস কোন দেশ জাতির অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে।  এর ফলে সেই দেশ বা জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটে।  এর ফলে একটি জাতি বহিরাগত শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়,  দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।  যেমন ভারত  ও বাংলাদেশের স্বাধীনতা লাভ জাতীয়তাবাদী বিকাশের ফলে সম্ভব হয়েছিল।

ঝ)  আত্মপ্রত্যয় এর বিকাশঃ

ইতিহাস কোন জাতির জীবনে আত্মপ্রত্যয় এর বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয়।  অতীতে বিভিন্ন মানবজাতি বা মহান ব্যক্তি বিপুল কর্মকাণ্ড করেছেন তাই ইতিহাস থেকে বর্তমান প্রজন্মের মানুষ জানতে পারে।  এর ফলে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আত্মপ্রত্যয় এর বিকাশ ঘটে।

ঞ)  ইতিহাস-ই সঠিক দিশাঃ 

পরিশেষে বলতে হয়,  ইতিহাস বর্তমানকে  সচেতন করে থাকে,  অতীতের  স্থান,  কাল  ও মানুষের কাহিনী যথাযথ অনুশীলন করে।  আজ আমাদের জগৎ ও জীবনের জন্য তাই সঠিক পথের দিশা হল ইতিহাস।  সত্যিই ইতিহাস একটি বৃক্ষ,  একটি বটবৃক্ষ যা আমাদের শান্তির বড় আশ্রয়।

 

Read More প্রাচীন গ্রিসের নগররাষ্ট্র বা পলিস গুলি গড়ে ওঠার কারণ কি ছিল?

 

বিঃ দ্রঃ আমার আজকের  আর্টস স্কুল ডট ইন এর  পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাস এর গুরুত্ব আলোচনা করো। এই আর্টিকেলটি তৈরি করার জন্য  কিছু রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে।  যদিও এ বিষয়ে আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি।  তাই আমাদের  এই আর্টিকেলটি নিয়ে  আপনাদের  যদি কোনরকম  অভিযোগ থেকে থাকে  তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected]  এই ঠিকানায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণের।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!