বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর; আজকের আর্টিকেলের বিষয় হল মাধ্যমিক ভূগোলের বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলি যা তোমাদের আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে, তাই এই সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলি মনোযোগ দিয়ে পরে নাও যাতে তোমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে বিশেষ ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারো।
মাধ্যমিক প্রাকৃতিক ভূগোল
মাধ্যমিক ভূগোল বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তরঃ
১) অ্যারোসল কী?
উত্তরঃ Aero শব্দের অর্থ বায়ু এবং sol শব্দের অর্থ বায়ু মধ্যস্থ ভাসমান ধূলিকণা। বায়ুতে এই ধূলিকণা আসে প্রকৃতি ও মনুষ্যসৃষ্ট উৎস থেকে। যেমন সূক্ষ্ম বালু, পোড়া কয়লার ছাই, আগ্নেয়গিরির ভস্ম, সূক্ষ্ম খনিজ লবন ইত্যাদি। এই ধূলিকণার জন্যই মেঘের সৃষ্টি হয়। আবার মাত্রাতিরিক্ত ধূলিকণা পরিবেশ দূষণের কারণ।
2) জেট বায়ু কাকে বলে?
উত্তরঃ জেট বায়ু একটি দ্রুতগামী বায়ুস্রোত বা বায়ুমণ্ডলের ৭-১৩ কিমি ঊর্ধ্বে ট্রোপোস্ফিয়ারে প্রধানত পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে সংকীর্ণ আঁকাবাঁকা বলয়ের মতো পথে প্রবাহিত হয়। এটি একধরণের জিওস্ট্রপিক বায়ু। এর গতিবেগ সর্বোচ্চ প্রায় ৩৫০-৪৫০ কিমি/ঘন্টা।
৩) ডোল্ড্রাম কী?
উত্তরঃ নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের বায়ু হালকা ও ঊর্ধ্বগামী হয়। ফলে অনুভূমিক বায়ুপ্রবাহ প্রায় নেই বললেই চলে ও বায়ুপ্রবাহ বোঝা যায় না। এই অঞ্চলে বায়ুপ্রবাহ থাকে না বলে জাহাজ চলাচলে অসুবিধা হয়। তাই নাবিকরা এর নাম দেন ডোল্ড্রামস।
৪) ওজোন গহ্বর কী?
উত্তরঃ ওজোন স্তরের ওজোন গ্যাস ধ্বংস হওয়ার ফলে ওজোন গহ্বর সৃষ্টি হয়। ওজোন (O3) গ্যাস ক্লোরিন পরমাণু দ্বারা বিয়োজিত হয়ে অক্সিজেন অনু (o2) এবং ক্লোরিন মনোক্সাইড (CL2O) পরিণত হয়। ওজোন অণুর বিনাশে ওজোন স্তর পাতলা হয় বা ছিদ্র সৃষ্টি হয়। ১৯৫৮ সালে ডঃ জে. সি. ফারমেন কুমেরু অঞ্চলে ওজোন গহ্বর এর অস্তিত্ব প্রথম লক্ষ করেন।
৫) কার্যকরী সৌর বিকিরণ বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ সূর্য থেকে আগত সৌর বিকিরণের মাত্র ৬৬ ভাগ বায়ুমণ্ডলকে উত্তপ্ত করে থাকে। এই ৬৬ ভাগ সৌর বিকিরণের মধ্যে ৪৭ ভাগ ভূপৃষ্ঠে এসে ভূপৃষ্ঠকে উত্তপ্ত করে এবং ১৯ ভাগ বায়ুমণ্ডল ও মেঘ দ্বারা সরাসরি শোষিত হয়। এই ৬৬% সৌর বিকিরণকেই কার্যকরী সৌর বিকিরণ বলে।
আরো পড়ুন বাক্য বলতে কী বোঝ? একটি আদর্শ বাক্য গঠনের শর্ত গুলি বিষদে আলোচনা করো।
৬) ইনসোলেশন কাকে বলে?
উত্তরঃ সূর্যের বহিঃপৃষ্ঠের তাপমাত্রা প্রায় ৬০০০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। সূর্য থেকে নির্গত শক্তি ক্ষুদ্র তড়িৎ চুম্বক তরঙ্গরূপে বা আলোক তরঙ্গরূপে পৃথিবীতে এসে পৌছায়। একে ইনসোলেশন বলে। তবে সূর্যের দেহনির্গত তাপমাত্রার ২০০ কোটি ভাগের মাত্র ১ ভাগ পৃথিবীতে এসে পৌছায়।
৭) গ্রিন হাউস কী?
উত্তরঃ এটি হল কাঁচ বা স্বচ্ছ পলিথিন দিয়ে তৈরি ঘর। এই ঘরে সূর্যের আলো সহজেই ক্ষুদ্র তরঙ্গ রূপে প্রবেশ করে কিন্তু বৃহৎ তরঙ্গ রূপে সহজে বেরিয়ে যেতে পারে না। ফলে, ঘরের ভিতরের উষ্ণতা বাইরের উষ্ণতার থেকে কিছুটা বেশি হয়। এই ঘরগুলিকে ব্যবহার করে শীতপ্রধান দেশে ফুল ও সব্জির চাষ করা হয়ে থাকে।
৮) তাপবিষুব রেখা বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ একটি নির্দিষ্ট সময়ে প্রত্যেক দ্রাঘিমারেখার সর্বোচ্চ গড় উষ্ণতা বিশিষ্ট স্থানগুলিকে যোগ করে যে কাল্পনিক রেখা পাওয়া যায় তাকে তাপবিষুব রেখা বলে। এই কাল্পনিক রেখা উত্তরায়ণ ও দক্ষিয়ায়নের সাথে সাথে স্থান পরিবর্তন করে।
৯) আয়ন বায়ুকে বাণিজ্য বায়ু বলে কেন?
উত্তরঃ আয়ন শব্দের অর্থ হল পথ। উভয় গোলার্ধে ৫ ডিগ্রি থেকে ৩৫ ডিগ্রি অক্ষাংশের মধ্যে এই বায়ু নিয়মিতভাবে প্রবাহিত হয়। পূর্বে পালতোলা বাণিজ্য জাহাজ এই বায়ুকে অনুসরণ করে যাতায়াত করত, তাই আয়ন বায়ুকে বানিজ্য বায়ুও বলা হয়।
১০) শিশিরাঙ্ক কাকে বলে?
উত্তরঃ যে উষ্ণতায় বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেয়ে ১০০% অতিক্রম করে অর্থাৎ সম্পৃক্ত হয়, সেই উষ্ণতাকে সেই বায়ুর শিশিরাঙ্ক বলে। অর্থাৎ যে তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশির, কুয়াশা ইত্যাদিতে পরিণত হয় তাকে শিশিরাঙ্ক বলে।
আরো পড়ুন বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ছোটো প্রশ্নোত্তর – মাধ্যমিক ভূগোল।
১১) নিরপেক্ষ আর্দ্রতা বা চরম আর্দ্রতা কাকে বলে?
উত্তরঃ একটি নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে জলীয় বাষ্পের প্রকৃত পরিমাণকে নিরপেক্ষ বা চরম আর্দ্রতা বলে। সাধারণত প্রতি ঘনসেন্টিমিটার বায়ুতে যতগ্রাম জলীয় বাষ্প থাকে তার দ্বারা চরম আর্দ্রতার পরিমাণ বোঝানো হয়। যেমন ৩০ গ্রাম/ঘনসেন্টিমিটার।
১২) উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতসূচক লেখচিত্র বলতে কী বোঝ?
উত্তরঃ কোনো স্থানের উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতের পরিসংখ্যান (১২ মাসের) যখন কোনো ছক কাগজে নির্দিষ্ট স্কেলে ও নির্দিষ্ট নিয়মে যৌগিক লেখচিত্রের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়, তখন তাকে উষ্ণতা ও বৃষ্টিপাতসূচক লেখচিত্র বলা হয়। এখানে বৃষ্টিপাতকে স্তম্ভের আকারে এবং উষ্ণতাকে রেখার আকারে প্রকাশ করা হয়।
১৩) সীমান্ত বৃষ্টি কাকে বলে?
উত্তরঃ নাতিশীতোষ্ণ মণ্ডলে উষ্ণ, আর্দ্র এবং শুষ্ক শীতল এই দুটি বিপরীতধর্মী বায়ু পরস্পর দিক থেকে এসে মিলিত হয়। এই অবস্থায় শীতল ভারী বায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ হালকা বায়ু ওপরে ওঠে। এই উষ্ণ বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকায় তা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায়, যা সীমান্ত বৃষ্টি নামে পরিচিত।
১৪) ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু শনাক্তকরণের দুটি উপায় লেখো।
উত্তরঃ ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু শনাক্তকরণের দুটি উপায় হল-
ক) উষ্ণ ও আর্দ্র গ্রীষ্মকাল এবং শুষ্ক শীতকাল।
খ) শীত ও গ্রীষ্মে সম্পূর্ণ বিপরীত দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়।
১৫) ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু শনাক্তকরণের দুটি উপায় লেখো।
উত্তরঃ ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু শনাক্তকরণের দুটি উপায়-
ক) শীতকাল আর্দ্র এবং গ্রীষ্মকাল শুষ্ক।
খ) সারাবছর নাতিশীতোষ্ণ ও মনোরম জলবায়ু।
অবশেষে আপনাকে/তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলি পুরোপুরি পড়ার জন্য; এভাবেই www.artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলির মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক ভূগোলের প্রশ্নোত্তর গুলি তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি এবং সেগুলো পরে তোমরা তোমাদের আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারো।
বিঃদ্রঃ আজকের এই বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ মেনে যদিও তার সাথে সাথে সাথে কিছু পাঠ্য বইয়েরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তাই বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর গুলি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তবে আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়।