Menu

বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলন – মাধ্যমিক ইতিহাস

বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলন; wbbse board এর মাধ্যমিক ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলন যা তোমাদের আগামী ২০২১ এর মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, তাইতো তোমাদের জন্য আমাদের এই প্রয়াস, তাহলে চলো দেখে নেওয়া যাক –

 

বিংশ শতকের ভারতবর্ষে শ্রমিক আন্দোলন-এর অগ্রগতি সম্পর্কে যা জানো লেখো।

সূচনাঃ ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী প্রথম জাতীয় আন্দোলন হল ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে সংগঠিত বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন, ১৯২০ – ২২ খ্রিষ্টাব্দে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন, ১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে আইন অমান্য আন্দোলন এবং ১৯৪২ এর ভারতছাড়ো আন্দোলন। ব্রিটিশ বিরোধী এই সমস্ত আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণিও সক্রিয়ভাবে অংশ গ্রহন করে আন্দোলনের গতিকে এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। আলোচনার সুবিধার্থে আমরা এই চারটি আন্দোলনে শ্রমিক শ্রেণীর ভূমিকাকে পৃথক পৃথকভাবে আলোচনা করতে পারি –

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে শ্রমিকদের ভূমিকা (বিংশ শতকের ভারতবর্ষে শ্রমিক আন্দোলন): 

 

১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে লর্ড কার্জন বঙ্গভঙ্গের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলে বাংলা সহ ভারতবর্ষের অন্যান্য শ্রেণীর মতো শ্রমিকরাও কার্যকরী ভুমিকা নিয়েছিল –

১. এই আন্দোলন পর্বে শ্রমিকরা প্রতিবাদ মিছিল ঘর্মঘট ও বয়কটে অংশ নিয়েছিল।

২. অন্ত্যজ শ্রেণীর মানুষ যেমন মুচিরা বিদেশিদের জুতো সারাতে, ধোপারা বিদেশিদের কাপড় কাচতে, রাঁধুনিরা রান্নায় বিদেশী দ্রব্য ব্যবহার করতে অস্বীকার করেছিল।

৩. কলকাতার বিভিন্ন কারখানা, ছাপাখানা, রেলওয়ে, হাওড়ার বার্ন স্ট্যান্ডার্ড কোম্পানি প্রভৃতি অঞ্চলে শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিল।

৪. এছাড়া জামালপুর রেলওয়ে ওয়ার্কশপ, বাউড়িয়ার জুটমিল, বরিশালের সেটেলমেন্ট, তুতিকোরিনের বস্ত্র কারখানা, বোম্বাই ও রাওয়ালপিন্ডির অস্ত্র কারখানা প্রভৃতি জায়গায় শ্রমিকরা ধর্মঘট করেছিল।

এছাড়া বোম্বাইয়ের শ্রমিকরা তিলকের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে ধর্মঘট করেছিল। ব্রিটিশ সরকার দমনপীড়ন চালালে এবং সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আন্দোলন দুর্বল হয়ে শ্রমিক আন্দোলন গতি হারিয়েছিল।

অহিংস – অসহযোগ আন্দোলনপর্বে শ্রমিক আন্দোলনঃ

 

১৯২০ থেকে ২২ খ্রিষ্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে অহিংস অসহযোগ আন্দোলন শুরু হলে ভারতের শ্রমিকরা তাদের সক্রিয় ভুমিকা রাখতে পেরেছিল। ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে রাশিয়ার বলশেভিক আন্দোলন ভারতীয় শ্রমিকদের আন্দোলনে উৎসাহিত করেছিল। ওই বছরেই গান্দিজির নেতৃত্বে আমেদাবাদে বস্ত্র কারখানায় শ্রমিকদের নিয়ে সত্যাগ্রহ আন্দোলন এবং ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে মন্টেগু চেমসফোর্ড আইন নিয়ে ভারতীয়দের অসন্তোষ, কুখ্যাত রাওলাট আইন, জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড প্রভৃতি ঘটনায় শ্রমিকরা ক্ষুব্ধ হয়েছিল এবং ভারতের বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা ধর্মঘটে অংশ নিয়েছিল –

১. এই সময় ভারতে অন্ততঃ ৪৫০ টি শ্রমিক ধর্মঘট হয়েছিল।

২. মাদ্রাজ ও কলকাতা শ্রমিক আন্দোলনের গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল।

৩. কলকাতার বিভিন্ন  ওয়ার্কশপ, রেলওয়ে, ট্রাম, বন্দর, পাটকল, জামশেদপুর TATA ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়লাখনিতে শ্রমিকদের ব্যাপক ধর্মঘট সফল হয়েছিল।

৪. বোম্বাই, কানপুর, সোলাপুর, জামালপুর প্রভৃতি শহরেও ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘট পরিচালিত হয়েছিল। বিভিন্ন বামপন্থী নেতা যেমন বি.পি ওয়াদিয়া, এম এন যোশী, জোসেফ ব্যাপ্তিস্তা, প্রভাতকুসুম রায়চৌধুরি, সুরেন্দ্রনাথ হালদার প্রমুখ বামপন্থী নেতৃবৃন্দ শ্রমিক আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে আসে।

আইন অমান্য আন্দোলনপর্বে শ্রমিক আন্দোলন (বিংশ শতকের ভারতবর্ষে শ্রমিক আন্দোলন):

 

১৯৩০ খ্রিষ্টাব্দে গান্ধিজির নেতৃত্বে ব্রিটিশ বিরোধী আইন অমান্য আন্দোলন শুরু হলে এই সময় শ্রমিক আন্দোলনও নতুন মাত্রা পেয়েছিল। এই সময় বোম্বাইতে প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল –

১. মহারাষ্ট্র, বাংলা, আসাম, মাদ্রাজসহ বিভিন্ন অঞ্চলে শ্রমিক ধর্মঘট হয়।

২. মহারাষ্ট্রের সোলাপুর, নাগপুর ও বোম্বাইতে ব্যাপক শ্রমিক ধর্মঘটের পাশাপাশি রেল অবরোধ ইত্যাদি সত্যাগ্রহ আন্দোলন সংগঠিত হয়েছিল।

৩. বাংলার ক্ষেত্রে বিভিন্ন চটকল, পরিবহণ শিল্প, শিল্প কারখানা, কুলটির লৌহ – ইস্পাত কারখানা, রানিগঞ্জের কয়ালাখনি প্রভৃতি শ্রমিকরা আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।

৪. করাচি বন্দর, হিরাকুঁদ লৌহ – ইস্পাত কারখানা, আসামের ডিগবয় তৈল শোধনাগার, মাদ্রাজের শিল্প কারখানার শ্রমিকরা এই ধর্মঘটে সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিল। এই আন্দোলনে কমিউনিস্টদের ভুমিকাও গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

বি টি রণদীভে, সোমনাথ লাহিড়ী প্রমুখ কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে শ্রমিকরা এই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল। তবে সরকারের দমননীতি, কমিউনিস্টদের অনৈক্য শ্রমিক আন্দোলনের ভিত্তিকে দুর্বল করেছিল।

ভারতছাড়ো আন্দোলনপর্বে শ্রমিক আন্দোলনঃ

 

১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে শেষ বড়ো জাতীয় আন্দোলনে শ্রমিকদের ভুমিকাকে কোনোমতেই অস্বীকার করা যায় না –

১. ১৯৩৯ খ্রিষ্টাব্দে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সুত্রপাত ঘটলে বোম্বাইয়ে প্রায় ৯০ হাজার শ্রমিক যুদ্ধ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছিল।

২. ভারতছাড়ো আন্দোলনে কমিউনিস্টরা বিরোধীতার পন্থা অনুসরণ করেছিল এবং ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের আন্দোলন থেকে বিরত রাখার ঘোষণা করলেও শ্রমিক শ্রেণির একটা বড়ো অংশ ভারতছাড়ো আন্দোলনে সামিল হয়েছিল।

৩. গান্ধিজিসহ কংগ্রেসের বড়ো বড়ো নেতাকে গ্রেপ্তার করা হলে দিল্লি, বোম্বাই, আমেদাবাদ, লখনউ, কানপুর, নাগপুর, জামালপুর, মাদ্রাজ, ব্যাঙ্গালোর প্রভৃতি স্থানে শ্রমিকরা সপ্তাহব্যাপী ধর্মঘট বা হরতাল পালন করেছিল।

৪. জামসেদপুরের টাটা ইস্পাত কারখানার শ্রমিকরা ১৩ দিন, আমেদাবাদের বস্ত্র শ্রমিকরা তিনমাসেরও বেশি ধর্মঘট সম্পন্ন করেছিল।

১৯৪৩ খ্রিষ্টাব্দে ৮২০, ১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে ১৬২৯টি শ্রমিক আন্দোলন সংঘটিত হয়েছিল। কোথাও কোথাও পুলিশ শ্রমিক খণ্ডযুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল। দিল্লি, বোম্বাই, লখনউ, মাদ্রাজ, কানপুর, নাগপুর প্রভৃতি অঞ্চলের শ্রমিকরা ধর্মঘটে অংশ নিয়ে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয় আন্দোলন জোরদার করেছিল।

 

 

Read More বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণের চরিত্র ও বৈশিষ্ট পর্যালোচনা করো।

Click Here to Download The PDF Version Of – বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলন

 

অবশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলন এই পুরো আর্টিকেলটি বা প্রশ্নোত্তরটি পড়ার জন্য। এভাবেই চিরদিন আর্টস স্কুল ডট ইন এর পাশে থেক তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলনএর মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর গুলি তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি এবং তোমরা সেগুলো পড়ে তোমাদের আগামী পরিক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারো।

বিঃদ্রঃ বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলন এর এই প্রশ্নোত্তর বা আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শে এবং পাঠ্য বইয়ের সাহায্য নিয়ে। যদিও শিক্ষকদের কাছে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি, তাই বিংশ শতকের শ্রমিক আন্দোলন এর এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে অবশ্যই আমাদের ইমেল করুন, আমাদের ইমেল এর ঠিকানা – [email protected] ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!