বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলন; আজকের আমাদের এই আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় যা WBBSE BOARD এর অন্তর্গত মাধ্যমিক সিলেবাসের ইতিহাস এর একটি গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার বিষয়, তাহলে চলো দেখে নেওয়া যাক –
বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলন এর প্রসার সম্পর্কে আলোচনা করো।
ভূমিকাঃ ভারতের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসে কৃষক আন্দোলন এক বিশেষ ভূমিকা পালন করেছিল। কৃষক আন্দোলন শুরু হলেও বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলন ব্যাপক প্রসার লাভ করে। এই কৃষক আন্দোলনগুলি ভারতের জাতীয় সংগ্রামকে অনেকটা ত্বরান্বিত করেছিল।
বিশ শতকের কৃষক আন্দোলন সমূহঃ
বিশ শতকের কৃষক আন্দোলন গুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য আন্দোলন গুলি হল-
১. চম্পারন সত্যাগ্রহঃ
কৃষক আন্দোলনগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল বিহারের চম্পারন সত্যাগ্রহ। বিহারের চম্পারনে তিন কাঠিয়া প্রথার বিরুদ্ধে সংগঠিত কৃষক আন্দোলনে গান্ধিজি যোগদান করেন (১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে)। সরকার ‘চম্পারন কৃষিবিল পাশ করে’ তিন কাঠিয়া প্রতিপ্রথার অবসানের কথা ঘোষণা করলে চম্পারন সত্যাগ্রহ বন্ধ হয়।
২. খেদা সত্যাগ্রহঃ
ব্যাপক মূল্যবৃদ্ধিজনিত কারনে গুজরাটের খেদা জেলার কৃষকেরা খাজনা হ্রাসের দাবী করে ও আন্দোলন শুরু করে। গান্ধিজি খাজনা বৃদ্ধির প্রতিবাদে খেদা সত্যাগ্রহ (১৯০৬ খ্রিঃ) শুরু করেন। শেষ পর্যন্ত সরকার খাজনা অনেকটা হ্রাস করেছিল আন্দোলনকারীদের চাপের মুখে পরে।
৩. মোপলা বিদ্রোহঃ
কেরালার মালাবার অঞ্চলে মোপলা নামক মুসলিম কৃষকেরা স্বরাজের সমর্থনে যে আন্দোলন শুরু করে তা মোপলা বিদ্রোহ নামে পরিচিত। কৃষক বিদ্রোহ হলেও মোপলা বিদ্রোহ পরবর্তীতে সাম্প্রদায়িক রূপ পরিগ্রহ করে। তা সত্ত্বেও বলা যায় মোপলা বিদ্রোহ ছিল সামন্ত্রতান্ত্রিক শোষণের বিরুদ্ধে এক সংগঠিত বিদ্রোহ।
৪. একা আন্দোলনঃ
১৯২১-১৯২২ খ্রিষ্টাব্দে যুক্ত প্রদেশের হরাদাই, সিতাপুর, বারাচ জেলায় ব্যাপক কৃষক আন্দোলন শুরু হয়, এটি মূলত কৃষক আন্দোলন। ভারতের জাতীয় কংগ্রেস ও খিলাফৎ নেতারা প্রথমদিকে একতা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। পরে এর রাশ নিম্নবর্গের নেতাদের হাতে চলে যায়। এই আন্দোলনের প্রধান নেতা ছিলেন মাদারী পাশি।
৫. বারদৌলি সত্যাগ্রহঃ
অহিংস অসহযোগ আন্দোলনকালে গুজরাটের সুরাট জেলার বারদৌলি তালুকে গান্ধিজির সত্যাগ্রহ আদর্শের প্রভাব পড়ে। এই অঞ্চলের ভূমিকর ৩০% বৃদ্ধি করা হয়, কৃষকদের ওপর নানা নির্যাতন ও শোষণ চালানো হতে থাকে। এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন সর্দার বল্লভভাই প্যাটেল। শেষ পর্যন্ত আন্দোলনের চাপে পড়ে ইংরেজ সরকার ভূমিকর ৬.২৫% নামিয়ে আনলে এই আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়।
৬. বখস্ত আন্দোলনঃ
বিহারের জমিদারদের খাসজমিকে বখস্ত জমি বলা হয়। খাজনা বাকি পড়ায় জমিদাররা এই জমিগুলি বাজেয়াপ্ত করে খাস জমিতে পরিনত করে এবং কৃষকদের উচ্ছেদ করতে থাকে। আইন অমান্য আন্দোলনের পূর্বে এই আন্দোলন ছিল একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। গয়া, মুঙ্গের, দ্বারভাঙ্গা প্রভৃতি জেলায় আন্দোলন ব্যাপকতা লাভ করে।
৭. তেভাগা আন্দোলনঃ
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কিষাণ সভার উদ্যোগে এবং কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে বাংলার বিস্তীর্ন অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলন শুরু হয়। ‘আধি নয়’ ‘তেভাগা চাই’ ‘কর্জ ধানের সুদ নাই’ লাঙল যার জমি তার প্রভৃতি ছিল এই আন্দোলনের দাবী। বাংলার প্রায় ৬০ লক্ষ কৃষক এই আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েছিল। চারু মজুমদার, ভবানী সেন, গুরুদাস তালুকদার, সুনীল সেন প্রমুখরা এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিল।
৮. পুন্নাপ্রা – ভায়লার গণআন্দোলনঃ
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে উত্তর – পশ্চিম ত্রিবাঙ্কুরে পুন্নাপ্রা – ভায়লার অঞ্চলে কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে যে কৃষক আন্দোলন সংগঠিত হয় তা পুন্নাপ্রা ভায়লার গণআন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলন ত্রিবাঙ্কুরের ভায়লার অঞ্চলে ব্যাপক আকার ধারণ করে। এর ফলে ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যের ভারতভুক্তি সহজ হয়।
৯. তেলেঙ্গানা আন্দোলনঃ
আধুনিক ভারতের একটি তীব্র জঙ্গি আন্দোলন হল হায়দ্রাবাদের তেলেঙ্গানা আন্দোলন। নিজামের শোষণ, বেগার শ্রম ও ধানের কারনে তেলেঙ্গনার কৃষকেরা যে তীব্র বিদ্রোহ শুরু করে তা তেলেঙ্গনা আন্দোলন নামে পরিচিত। এই আন্দোলনে প্রায় ৩০ লক্ষ কৃষক সামিল হয়েছিল।
মূল্যায়ন; উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বলা যায়, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে যেসব কৃষক আন্দোলন হয়েছিল সেগুলির উপর কংগ্রেসের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল। কিন্তু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর কৃষক আন্দোলনগুলি ছিল পুরোপুরি কমিউনিস্ট পরিচালিত। ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী অভ্যুত্থান হিসেবে কৃষক আন্দোলন গুলির গুরুত্ব অস্বীকার করা যায় না।
আরো পড়ুন বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে লেখো।
অবশেষে আপনাকে / তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলন এর এই আর্টিকেল অথবা প্রশ্নোত্তর পর্বটি ভালো করে পড়ার জন্য। এভাবেই চিরদিন আর্টস স্কুল ডট ইন এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলন এর মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর গুলি তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি আর যেগুলো পরে তোমরা তোমাদের wbbse board এর আগামী মাধ্যমিক পরিক্ষার জন্য ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারো।
বিঃ দ্রঃ – বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলন এর এই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষক দের পরামর্শ নিয়ে এবং তার সাথে কিছু পুস্তকেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের কাছে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তাই আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে বিশ শতকের ভারতে কৃষক আন্দোলন এর এই নোটসটি নিয়ে অবশ্যই আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়।