ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট; ভারতের প্রায় দুই তৃতীয় জনসংখ্যার মানুষের প্রধান জীবিকা হল কৃষিকাজ বা চাষবাস। বর্তমানে ভারত কৃষি উৎপাদনে বিশ্বে দ্বিতীয় স্থানের অধিকারী। ভারতের কৃষির বিশিষ্ট গুলি কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশের বা অঞ্চলের থেকে আলাদা।
ভারতের মোট শ্রমশক্তির ৫২ শতাংশই এই ক্ষেত্রে নিযুক্ত। জিডিপি-তে কৃষিক্ষেত্রের অবদান বর্তমানে অনেকটা কমলেও, এই ক্ষেত্র আজও ভারতের বৃহত্তম অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং দেশের সামগ্রিক আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানের অধিকারী। তাই ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট গুলিও কিন্তু একটু অন্য রকম, নীচে সেই বৈশিষ্ট গুলিই তুলে ধরা হল-
ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট গুলি হলঃ
১. জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষিঃ
ভারতের কৃষি শুধুমাত্র অধিবাসীদের জীবনধারণের জন্যই করা হয়। যেমন উত্তরপূর্বের পাহাড়ি অঞ্চলের রাজ্যগুলির কৃষি সম্পূর্ণ জীবিকাসত্তাভিত্তিক।
২. কৃষিতে পশুশক্তির ব্যবহারঃ
ভারতের কৃষিকার্য এখনও বিজ্ঞানের বিশেষ প্রয়োগ নেই। গোরু ও লাঙ্গল নিয়ে সেই প্রাচীন পদ্ধতিতে আজও ভারতের কৃষিকাজ চলে আসছে।
৩. জনসংখ্যার চাপঃ
ভারতে কৃষিজমির তুলনায় জনসংখ্যা বেশি, তাই কৃষিজমির ওপর চাপ খুব পড়ে। ফলে ফসল উৎপাদন ভালো হয় না।
৪. মৌসুমি বায়ুর ওপর নির্ভরতাঃ
ভারতীয় কৃষি মৌসুমি বায়ুর ওপর অত্যধিক নির্ভরশীল। মৌসুমি বায়ুর দ্বারা প্রতিবছর ভারতে সমান বৃষ্টিপাত হয় না, কোনো বছর খুব বেশি আবার কোনো বছর বৃষ্টিপাত হয় না বললেই চলে। তাই খরা ও বন্যা ভারতের কৃষির নিত্যসঙ্গী।
৫. জলসেচের ব্যবহারঃ
ভারতে মৌসুমি বৃষ্টিপাত সর্বত্র সমান না হওয়ায় জলসেচের ব্যবহার করতে হয়। বর্তমানে উচ্চফলনশীল শস্য চাষ, ভহুফসলি জমির বৃদ্ধিতে জলসেচের পরিমাণ ভারতীয় কৃষিতে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৬. কীটনাশক ও রাসায়নিক সারের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারঃ
ভারতে ৯০% কৃষকই কৃষিবিদ্যায় শিক্ষিত নন। তাই জমিতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার কী পরিমাণে ব্যবহার করতে হবে তা তাদের অজানা। এতে লাভের চেয়ে ক্ষতিই বেশি হয়।
৭. ক্ষুদ্রাকৃতি কৃষিজোতঃ
ভারতের অধিকাংশ জমি এত ছোট যে বড়ো বড়ো কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা যায় না, আইল দিলেও জমি নষ্ট হয়। তায় জমি গুলিকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র আকারে জোত করে চাষবাস করা হয়।
৮. খাদ্যশস্যের প্রাধান্যঃ
ভারতের কৃষিতে চিরাচরিত ধান, গম, ভুট্টার মতো খাদ্য ফসলের প্রাধান্য বেশি দেখা যায়। তুলনায় মশলা ফল চাষের আধিক্য কম।
৯. পশুখাদ্যের অভাবঃ
ভারতে রয়েছে পৃথিবীর সবচেয়ে বেশি পশু, যা পালন করা হয়ে থাকে মাংস ও দুধের ও অন্যান্য চাহিদা পূরণ করার জন্য। অথচ ভারতে সেই পশু খাদ্যের প্রধান ঘাস হে, ক্লেভার ইত্যাদি চাষ কম হয়। এছাড়া ভারতের পাহাড়ি অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও তেমন তৃণভূমিও নেই।
১০. বহুশস্যের উৎপাদনঃ
বর্তমানে ভারতে জমি থেকে বছরে দুই থেকে চার বার ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে এবং ভারতে বহুফসলি জমির পরিমাণ দ্রুত হারে বাড়ছে।
ভারতের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ জীবনধারণের জন্য গ্রামীণ কর্মনিয়োগের উপর নির্ভরশীল। এমতাবস্থায় ধীর কৃষি অগ্রগতি দেশের নীতিনির্ধারকদের একটি দুশ্চিন্তার কারণ। চাষাবাদের অধুনা প্রচলিত প্রথাগুলি আর্থিক বা পরিবেশগত কোনো দিক থেকেই স্থিতিশীল নয়। এবং অনেক ফসলের ক্ষেত্রেই ভারতের উৎপাদন কম।
আরো পড়ুন ইতিহাসের ধারা সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর, Madhyamik History
আরো পড়ুন বারিমন্ডল প্রশ্নোত্তর মাধ্যমিক ভূগোল তৃতীয় অধ্যায়
*****আপনাকে/তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট এর এই পুরো আর্টিকেলটি সময় করে পড়ার জন্য। এভাবেই চিরকাল www.artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো, যাতে ভবিষ্যতে আমরা ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট এর মতো আরো উন্নত মানের Notes বা Study Materials তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি এবং তোমরা তোমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারো।
ভারতের কৃষির প্রধান বৈশিষ্ট এর এই আর্টিকেল নিয়ে তোমাদের বা আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা বা জিজ্ঞাসা থাকে তবে আমাদের ইমেল করুন এই ঠিকানায় [email protected]