Menu

মিথ ও লিজেন্ড বলতে কী বোঝো?

মিথ ও লিজেন্ড;  আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা তোমাদের জন্য উপস্থাপন করেছি  পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ  মাধ্যমিক শিক্ষা পরিষদের  দ্বাদশ শ্রেণীর অন্তর্গত ইতিহাস সিলেবাস এর প্রথম অধ্যায় তথা  অতীত ধারণা  থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর;  যেটা হলো –  মৃত লিজেন্ড বলতে কী বোঝো?  অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কিভাবে রূপ দান করে?  চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক আজকের প্রশ্ন উত্তরটিঃ

প্রশ্নঃ মিথ ও লিজেন্ড বলতে কী বোঝো?  অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কিভাবে রূপ দান করে?

উত্তরঃ ইতিহাসকে অতীতের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা বলে ঐতিহাসিকরা মনে করেন।  ইতিহাস ইতিহাসের যথাযত সেই সফল।  কিন্তু ধূসর অতীতের অনেক কিছুই সব সময় ইতিহাসের উপাদান রূপে পাওয়া যায় না।  তখন কল্পনাকে নির্ভর করে অতীতকে বিশ্লেষণের মাধ্যমে সঠিক ইতিহাস খুঁজে বের করতে হয়।  আর তখন নানা কল্পকাহিনী বা মিথ,  বিভিন্ন কাহিনী ও কিংবদন্তি নির্ভর করে ইতিহাসের দিকে অগ্রসর হতে হয়।

মিথ বা উপকথাঃ

মিথ বা কল্পকাহিনী হলো আমাদের পূর্বপুরুষদের থেকে প্রাপ্ত কাহিনী।  এগুলি পাওয়া গেছে প্রাচীন লেখকদের বিভিন্ন নথিপত্র ও কবিতা থেকে।  তবে এগুলি সঠিকভাবে উদ্ধার হয়নি।  প্রাচীন এর প্রতি চূড়ান্ত বিশ্বাস এবং তার ওপর আরোপ কে কেন্দ্র করে বা উপকথার উৎপত্তি হয়েছে।

এনসাইক্লোপিডিয়া অফ মিথলজি-  গ্রন্থে পৃথিবীর সব দেশের কিছু না কিছু কল্পকাহিনীর গল্প রয়েছে।  খ্রিস্টান ধর্মের সূচনা আগে ও পরে বিশ্ব সংস্কৃতির অঙ্গ ছিল মিথ।  চীনকে বলা হয় রূপকথার দেশ।  নরওয়ে সুইডেন জার্মানি ডেনমার্ক প্রভৃতি দেশে মিথ একটি প্রচলিত ও পরিচিত শব্দ।  খ্রিস্টান ধর্মের আগে জার্মানির আদি ধর্ম ছিল প্যাগান ধর্ম। এই যুগের রূপকথা বা কল্পকাহিনী ছিল ধর্মবিশ্বাসের অঙ্গ।  চীনে তাওবাদ ও কনফুসীয় বাদের আগেই কিংবা জাপানে সিন্দবাদের আগে মিথলজি ছিল ধর্মবিশ্বাসের অঙ্গ।  তথাকথিত সেকশন ফিনিশীয়দের মধ্যেও ঐতিহাসিক গল্প সংস্কৃতি ছিল।  ক্যাথলিক ধর্ম যাজকরা কালচার বিস্তারে ভূমিকা নিয়েছিল।  প্রাচীন ভারতে অথর্ববেদ ও বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর নানা কিংবদন্তি ব্যক্ত করা হয়েছে।  বর্তমানে যুগের বিতর্কিত লেখক সালমান রুশদির স্যাটানিক ভার্সেস ও ডেভিড এন্ড ইমাজিনারি লাইফ গ্রন্থে মিথের পর্যাপ্ত আমদানি রয়েছে।   তাই অনেকের ধারণা ইতিহাস কেবল স্মৃতিকথা কল্পকথা  নয়  বরং উভয়েরই সংমিশ্রণ।

লিজেন্ড বা কিংবদন্তিঃ

লিজেন্ড কথার অর্থ কিংবদন্তি বা বীরগাথা।  যখন কোন একটি বিশেষ অঞ্চলের ঘটিত কোন বিশেষ ঘটনা বা কাহিনী ওই অঞ্চলের মানুষ কয়েক প্রজন্ম ধরে স্মরণ করে তথা  বিশ্বাস করে তখন ওই ঘটনা বা কাহিনী কে বলা হয় লিজেন্ড।  পুরাকালে বিশেষ কোনো উৎসবে কোন সন্ন্যাসী বা ধর্মগুরুকে সমস্ত জীবন বৃত্তান্ত কথিত হতো তাকে কিংবদন্তি বলা হয়।  কিংবদন্তি হল সুন্দর গল্প জানতে এবং এগুলি বর্ণনা করে,  যা প্রকৃত ঘটেছে তার পরিবর্তে যা ঘটে উচিত ছিল সেই বিষয়কে।

কিংবদন্তি একটি বর্ণিত বিষয়ে রূপেই প্রচলিত হয়েছে ঘটনার ওপর ভিত্তি করেই গড়ে উঠেছে এর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে ঐতিহ্যগত উপাদান যাতে কোন ব্যক্তি স্থান অথবা ঘটনার কথা বলা হয়।  ইংরেজি অভিধান মতে,  লিজেন্ড হলো এমন একটি কাহিনী যা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইতিহাস রূপে উপস্থাপিত হয়েছে,  আসলে যা সত্যি নয়,  আসলে কিংবদন্তির কাহিনী গড়ে উঠেছে কোন ব্যক্তির বীরত্বপূর্ণ কর্মকাণ্ড ও তাদের চরিত্র কে ঘিরে।  এক কথায় বলা যায় যে সত্য মিথ্যা ও সম্ভাবনার মিলিত সমষ্টি হল কিংবদন্তি।

ইতিহাস রচনায় মিথের অবদানঃ

মিথ হল প্রাচীনকাল থেকে কোন সমাজের পুরুষানুক্রমে প্রবহমান কাহিনী,  বিশেষ করে কোন জাতি বা ধর্মের আদি ইতিহাস সম্পর্কে বিশ্বাস বা ধারণা।  কখনো কখনো মিথ নৈসর্গিক ঘটনাবলী,  যেমন-  ঋতু পর্যায়ের সূর্য চন্দ্র প্রভৃতির ব্যাখ্যা প্রদান সংক্রান্ত ব্যাখ্যা কে বোঝায়,  সৃষ্টি সংক্রান্ত বিষয়ও মিথের এর মধ্যেই পড়ে, মিথ সংক্রান্ত বিষয়ে মিথলজি বলা হয়।  পৃথিবীর নানা দেশের ইতিহাসের উপাদান  হিসেবে মিথ  এর ব্যবহার দেখা যায়।  গ্রিস ও ভারত হলো মিথের  পীঠস্থান।

সুতরাং মিথ  হল প্রাচীনকাল থেকে মুখে মুখে প্রচলিত ঐতিহাসিক দলিল,  সমাজ ধর্ম বা নৈসর্গিক ঘটনাবলীর বিবরণ এবং তার ব্যাখ্যা ঐতিহাসিক’ ও সত্য বলেই বিবেচিত হয়।  পৌরাণিক কাহিনীর সঙ্গে তুলনামূলক পদ্ধতিতে যাচাই করে ইতিহাসের সাল তারিখ নির্ণয় সম্ভব হয়।  তাছাড়া থেকে প্রাচীনকালের বিভিন্ন রাজবংশের বংশতালিকা জানা যায়।  বিভিন্ন বিভিন্ন রাজবংশের নাম ও পরিচয় পাওয়া যায়।

স্পেনের বার্সেলোনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা মনে করেন, মিথ এর মাধ্যমে  অদ্ভুত ও আশ্চর্য সব বিষয়ের প্রতি মানুষের আকর্ষণ দিন দিন বাড়ছে।  মানুষ অতীতকে জানতে গিয়ে মিথের মাধ্যমে নতুন ও পুরাতন এর মধ্যে তফাৎ করতে শিখেছে।  পন্ডিত বাউ দ্রিলাউ বলেছেন,  আধুনিক যুগের ইতিহাস মিথে  রূপান্তরিত হয়।  অতীত মরে না।  অতীত আমাদের সম্পর্কের সমস্ত কথাই বলেছেন। মিথ হল ঐতিহাসিক ঘটনার ধারকত্ব।  তাই মানুষের ইতিহাস মানেই তাতে মিথলজিক্যাল ছোঁয়া থাকবে।

ইতিহাস রচনায় কিংবদন্তির অবদানঃ  

মানব সভ্যতা বিকশিত হওয়ার অনেক পরে সৃষ্টি হয়েছে কিংবদন্তি।  কিংবদন্তি চরিত্র গুলো সব জীবন্ত।  পৌরাণিক কাহিনীতে অর্ধসত্য,  কল্পনা ও অতিরঞ্জন থাকলেও কিংবদন্তীতে অতীতের অনেক ঐতিহাসিক তথ্য ও সূত্র থাকে।  কিংবদন্তি ঘটনাগুলি মানুষের মনে ভয় পেলোনা ও ঐক্যের চিন্তা সৃষ্টি করে।  অনেক সময় চোর-ডাকাতদের কর্মকাণ্ডে কিংবদন্তি চরিত্র আরোপ করে,  মানুষের মনে থাকে বীরের আসনে বসানো হয়।  কিংবদন্তির ঘটনাবলীতে যে সকল চরিত্র গল্প কথা বর্ণনা করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা ও তত্ত্ব পরবর্তীকালে লক্ষ্য করা গেছে।  মানুষের মনে হয় কিংবদন্তির ঘটনাবলী তাদের মনে সাহস আর প্রেরণা সৃষ্টি করতে সাহায্য করে।  পৌরাণিক কাহিনীর মতো কিংবদন্তিতে কল্পনা ও অতিরঞ্জন অনেক কম থাকে।  ঘটনার একটা বাস্তব ভিত্তি ও থাকে এক্ষেত্রে।  এই ঘটনাবলী থেকে মানুষের মধ্যে নীতিশিক্ষাঃ আর মূল্যবোধের শিক্ষা সঞ্চার হয়।

 

আরো পড়ুনআধুনিক ইতিহাস লিখন পদ্ধতি বলতে কী বোঝো?  আধুনিক ইতিহাস রচনার উপাদান গুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

 

বিঃ দ্রঃ আজকের  আর্টস স্কুল ডট ইন ব্লগের  মিথ ও লিজেন্ড বলতে কী বোঝো?   অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কিভাবে রূপ দান করে? প্রশ্নটির উত্তর তৈরি করতে আমাদের কিছু পাঠ্যবই এবং রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে;  যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি;  তাই আমাদের আজকের এই  মিথ ও লিজেন্ড বলতে কী বোঝো?  প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোন রকম সমস্যা থেকে থাকে;  তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected]  এই ঠিকানায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!