Menu

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা;  আজকে আমাদের এই আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হলো তোমাদের  মানে  পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পর্ষদের মাধ্যমিক ইতিহাস  সিলেবাসের অন্তর্গত পঞ্চম অধ্যায় তথা  বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ এর  একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর;  যেটি তোমাদের আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক আজকের  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা ওপর নির্ভর করে লেখা প্রশ্ন উত্তরটিঃ

Table of Contents

প্রশ্নঃ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ১৮৩৬  খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথের পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর রায়পুরের জমিদার ভুবনমোহন সিংহের কাছ থেকে ভুবন ডাঙ্গা গ্রামে 20 বিঘা জমি ক্রয় করে শান্তিনিকেতন আশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।  এর উদ্দেশ্য ছিল নির্জন নিভৃতে ঈশ্বর সাধনা করা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা  এর অংশরূপে ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠাঃ  

রবীন্দ্রনাথ  পিতার প্রতিষ্টিত প্রতিষ্ঠানকে নিজের কর্মক্ষেত্র হিসেবে গ্রহণ করেন। ১৯০১  খ্রিস্টাব্দে ২২শে  ডিসেম্বর রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতন ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠা করেন।  ব্রহ্মচর্যাশ্রম ছিল একটি ব্যতিক্রমী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।  দেবেন্দ্রনাথের আধ্যাত্মিক সাধনার ক্ষেত্রকে রবীন্দ্রনাথ জীবন সাধনার ক্ষেত্রে পরিণত করেন এই ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে।

 ব্রহ্মচর্যাশ্রম আশ্রমের প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যঃ  

ব্রহ্মচর্যাশ্রম প্রতিষ্ঠার  পশ্চাতে রবীন্দ্রনাথের মনোভাব ছিল অন্যরকম।  এর গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্যগুলি হল-

  1. প্রাকৃতিক পরিবেশের মধ্যে শিশুদের জ্ঞানের বিকাশ ঘটানো  যেটা বাড়ির পরিবেশ পরিবেশ অনেক সময় সম্ভবপর হয়ে ওঠে না।
  2. শহর ও গ্রামের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে শিক্ষাদান করা,  যাতে শহর এবং গ্রামের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে কোন ভেদাভেদ সৃষ্টি না হয়।
  3. ঋক বেদের যুগের চতুরাশ্রম ও তপবনের আদর্শকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং প্রাচীন ঐতিহ্যকে সামনে তুলে ধরা।
  4. আনন্দময় পরিবেশে শিশুদের শরীর মন ও আধ্যাত্মিক বিকাশ ঘটানো।
  5. বৃহত্তর  বিশ্বকে কে আপন করে নেওয়ার মানসিকতা তৈরি করা।

ব্রহ্মচর্যাশ্রম  এর শিক্ষার্থীর পালনীয় নিয়মাবলীঃ

শান্তিনিকেতনে ব্রহ্মচর্যাশ্রম রবীন্দ্রনাথ ছাত্রীদের জন্য কিছু নিয়ম নীতি চালু করেছিলেন,  যেগুলি এখানে পড়তে আসা সকল ছাত্রদের মেনে চলতে হতো।  তার কয়েকটি হল –

  • শিক্ষার্থীদের পাদুকায় ছাতা ব্যবহার করা নিষিদ্ধ ছিল।
  • সকাল-সন্ধ্যায় প্রার্থনা সভায় যোগদান করতে হতো।
  • এরপর স্নান করে মুক্ত প্রাঙ্গণে ছাত্র শিক্ষক অধ্যাপকদের সমবেত হয়ে বেদগান করতে হতো।
  • উক্ত প্রাথমিক কাজ গুলি শেষ করে ছাত্ররা শিক্ষকদের পদধূলি গ্রহণ করত।
  • এরপর শুরু হতো গভীর মনোযোগের সঙ্গে সারা দিনের পাঠ অভ্যাস।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা  এর  অংশরূপে প্রতিষ্টিত ব্রহ্মচর্যাশ্রম এর  পাঠক্রমঃ  

গাছের তলায় প্রতিটি ক্লাশ হত।  ক্লাসে বাংলা ইংরেজি অংক ইতিহাস ভূগোল বিজ্ঞান প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করা হতো। এছাড়াও খেলাধুলা গান শেখা ছবি আঁকার ক্লাস হতো এবং সপ্তাহের শেষে একটি সাহিত্য সভা অনুষ্ঠিত হতো।  সহজ সরল জীবনযাপন,  গুরু সেবা,  অতিথিসেবা ও শিক্ষক পিতা-মাতার প্রতি শ্রদ্ধা মনোভাব বজায় রাখা ইত্যাদি আদর্শের মূল শিক্ষাগুলো এখানে দেয়া হতো।

প্রকৃতির কোলে শিক্ষাঃ

চার দেয়ালের মধ্যে আবদ্ধ করে শিশুর উপযুক্ত শিক্ষা দেওয়া সম্ভব নয় বলে রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন।  তার মতে শিক্ষা হবে উন্মুক্ত প্রকৃতির কোলে,  মুক্ত আকাশের নিচে গাছের তলায়।  তিনি রূপকার পরিবেশের কথা বলেছেন যেগুলি হলো সামাজিক পরিবেশ ও প্রাকৃতিক পরিবেশ।  এই উভয় প্রকার পরিবেশ থেকে শিশুর সার্বিক অগ্রগতি ত্বরান্বিত হবে।  সমাজ ও প্রকৃতি হবে শিশুর আসল শিক্ষক।  উন্মুক্ত পরিবেশে শিশু শিক্ষা পেলে সৃজনশীল প্রতিভার বিকাশ ঘটবে।

ব্রহ্মচর্যাশ্রম এর আনন্দময় শিক্ষাঃ

রবীন্দ্রনাথের মতে শিক্ষা হবে আনন্দময় এই চিন্তা ধারা থেকে তিনি শান্তিনিকেতনের আনন্দ নিকেতন গড়ে তোলেন।  কবি তাদের জন্য বর্ষা ও বসন্ত উৎসব এর ব্যবস্থা করেন,  গান রচনা করেন,  গানের শিক্ষা দেন,  খেলাধুলার ব্যবস্থা করেন অভিনয়ের শিক্ষা দেন সমস্ত দিক থেকে শান্তিনিকেতন আশ্রম আনন্দ মুখর হয়ে উঠেছিল।

শিক্ষার্থীদের মানবতাবোধ ও মূল্যবোধের শিক্ষাঃ  

রবীন্দ্রনাথ মনে করতেন যে,  মানুষকে বাদ দিয়ে শিক্ষার পরিপূর্ণতা প্রাপ্তি ঘটে না।  তার শিক্ষা ব্যবস্থার মূল সুর ছিল সাম্য ও ঐক্য স্থাপন করা।  মানুষের মানুষের যে ব্যাপক ব্যবধান আছে তাকে অপসারিত করে বিদ্যায়তনে মহামিলনের তীর্থভূমিতে পরিণত করা তাই পল্লীগ্রামের সঙ্গে শহরের সমন্বয় ঘটানোর জন্য পৌষ মেলার আয়োজন করেছিলেন তিনি এই শান্তিনিকেতনেই।  তিনি তার সামগ্রিক শিক্ষা পরিকল্পনার মধ্যে দিয়ে মানবতাবোধ ও মূল্যবোধের স্ফুরণ ঘটাতে চেয়ে ছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা এর  অংশরূপে বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠাঃ

১৯২১  খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী প্রতিষ্ঠা করেছিলেন,  এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের ভাবাদর্শের ভিত্তিতে সমস্ত রকম বিদ্যার প্রসার ঘটিয়ে আন্তর্জাতিকতাবাদী দৃষ্টিভঙ্গিসম্পন্ন মানব সৃষ্টি করা।  তাই দেখা যায় যে,  রবীন্দ্রনাথের শিক্ষা চিন্তা ধারা বিশেষ কোনো দেশ বা কালের গণ্ডির মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষা দর্শনের মধ্যে তিনি সন্ধান পেয়েছিলেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের মহামিলনের বার্তা।  তাই বিশ্বভারতী মধ্যে বিশ্ব ধর্ম ও সংস্কৃতির অটুট বন্ধন গড়ে তোলার জন্য ইউরোপ আমেরিকা চীন জাপান রাশিয়া প্রভৃতি দেশের পাণ্ডিত্যপূর্ণ ব্যক্তিদের এখানে নিয়ে এসেছিলেন।

বিশ্বভারতীর শাখা প্রতিষ্ঠানঃ

রবীন্দ্রনাথ বিশ্বভারতী তে শিক্ষা বিষয়ক নানা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন,  যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল –  বিদ্যাভবন পাঠভবন শিক্ষা ভবন কলাভবন সংগীত ভবন চিনা ভবন হিন্দি ভবন ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য শাখা গুলি।  এছাড়াও শান্তিনিকেতনের অনতি দূরে অবস্থিত শ্রীনিকেতনে  কৃষি ও পল্লী সংগঠন ভবন,  শিল্প ভবন ইত্যাদিও গড়ে তোলেন। ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে ছাত্রদের কথা ভেবে  আই এ,  আইএসসি,  এবং বি এ  পড়ানো শুরু হয়। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দে বিশ্বভারতী কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের স্বীকৃতি পায়।  এখানে পাঠ্যসূচীর অন্তর্ভুক্ত ছিল বৈদিক শাস্ত্র,  পৌরাণিক শাস্ত্র,  বৌদ্ধ শাস্ত্র,   জৈন শাস্ত্র ইসলামিক শাস্ত্র এবং পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান সম্বলিত পাঠ্য।

উপসংহারঃ

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা ভারতের সীমানা ছাড়িয়ে সমগ্র পৃথিবীর ইতিহাসে বিশেষ মর্যাদা পূর্ণ স্থান অধিকার করেছে।  বিশ্বভারতীর পঠন-পাঠন প্রক্রিয়ায় আকৃষ্ট হয়ে দেশ-বিদেশ থেকে বহু ছাত্র-ছাত্রী এখানে শিক্ষালাভের জন্য আসে।  রবীন্দ্রনাথ ব্রহ্মচর্যাশ্রম বিদ্যালয় থেকে বিশ্বভারতী স্থাপন পর্যন্ত শিক্ষার বিভিন্ন রূপ ও রীতি হাতে কলমে পরীক্ষা করেছেন।  তিনি মনে করতেন বিজ্ঞান কেবলমাত্র পরীক্ষাগারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকতে পারে না,  তার স্থান হবে ক্লাস ঘরের বাইরে,  হাটে মাঠে মাটিতে।  মোটকথা তার শান্তিনিকেতন ভাবনা ছিল সম্পূর্ণ কাল্পনিক এবং বাস্তব চিত্র ও বিজ্ঞানসম্মত ভাবনা।

 

আরো পড়ুন – উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি বিশ্লেষণ করো

 

বিঃ দ্রঃ আমাদের  আর্ট স্কুল ডট ইন  ব্লগের  আজকের এই আর্টিকেলটি  অর্থাৎ  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন ভাবনা  বিশ্লেষণ করো;  তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু পাঠ্যবই এবং রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে।  যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি।  তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোন রকম সমস্যা থেকে থাকে  তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected]  এই ঠিকানায়;  আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা সমাধানের।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!