Menu

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান দ্বাদশশ্রেণী

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান; দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হল ভারতের সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকা আলোচনা করো। আজকে তাই আমরা আমাদের আলোচনার বিষয় হিসাবে ভারতের সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকাকেই বেছে নিয়েছি, যা তোমাদের WBCHSE BOARD এর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে।

তবে তোমাদের কাছে আমার একটাই অনুরোধ থাকবে সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভূমিকাটি পড়ার আগে একটি বার পাঠ্য বই থেকে বিষয়টি ভালো করে পড়ে নিতে যাতে কোনো যায়গায় বুঝতে কোনোরকম অসুবিধা না হয়।

সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান দ্বাদশশ্রেণী
সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের অবদান দ্বাদশশ্রেণী

ভারতের সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভুমিকাঃ

 

ভুমিকাঃ ইতালির রেনেসাঁস এর ক্ষেত্রে পেত্রার্ক ও বোকাচ্চিও যেমন ছিলেন তেমনি রাজা রামমোহন রায় ছিলেন ভারতীয় নবজাগরণের অগ্রদূত। যার জন্য তাকেই ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ বলা হয়ে থাকে। তাই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাকে ভারতপথিক এবং অধ্যাপক দিলিপ কুমার বিশ্বাস তাকে বিশ্বপথিক বলে অভিহিত করেন। তিনি বিশ্বাস করতেন পাশ্চাত্য সভ্যতা সংস্কৃতির মধ্যেই রয়েছে জরাজীর্ণ ভারতীয় সমাজের মুক্তি। এটি ভারতীয় জনজীবনে রামমোহনের অবদান গুলি নিম্নে আলোচনা করা হল –

১. ধর্মীয় সংস্কারঃ জাতিভেদ প্রথা, সংকীর্ণতা, দুর্নীতি, কুসংস্কার রাজা রামমোহনকে ব্যথিত করেছিল। তার কাছে হিন্দু সমাজের প্রচলিত আচার অনুষ্ঠান সর্বস্ব পৌত্তলিকতা, পুরোহিততন্ত্র, কুসংস্কার লোকাচার রামমোহনের কাছে সব অর্থহীন ছিল।

তিনি নিরাকার ব্রহ্মের উপাসনা ও একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তিনি খ্রিস্ট ধর্মের কুসংস্কারগুলিকেও সমালোচনা করতে ছাড়েননি। ১৮০৩ সালে বহুদেবতাবাদের বিরুদ্ধে এবং একেশ্বরবাদের সমর্থনে ফার্সি ভাষায় তুহাফৎ উল্মুয়াহেদ্দিন নামক একটি পুস্তিকা প্রকাশ করেন।

বাংলা ভাষায় বেদান্তের ভাষ্য রচনা করেন এবং ঈশ, কেন, বাট, মান্ডূক্য ও মণ্ডূক এই পাঁচটি প্রধান উপনিষদের বাংলা অনুবাদ প্রকাশ করেন। নিজের ধর্মভাবনা সম্পর্কে আলোচনার উদ্দেশ্য ১৮১৫ সালে আত্মীয়সভা এবং ১৮২৮ সালে ব্রাহ্মসভা প্রতিষ্ঠা করেন। যেখানে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে সকলে উপাসনায় যোগ দিতে পারতো।

২. সমাজ সংস্কারঃ সমাজ সংস্কারক হিসাবে রাজা রামমোহন রায় ছিলেন নিরলস সংগ্রামী। তিনি প্রথম উপলব্ধি করেছিলেন, সামাজের কুসংস্কার দূর না হলে জাতি গঠন হবে না, হিন্দু নির্যাতিত নারী জাতির মুক্তির কথা তিনিই প্রথম ভেবেছিলেন। নারীদের বঞ্চিত করা, বহুবিবাহ প্রভৃতির বিরুদ্ধে তিনি জনমত সংগঠিত করেন।

নৃশংস সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে এবং বিধবাবিবাহের পক্ষে তিনি আজীবন সংগ্রাম করেছেন। তার সহযোগিতায় ১৮২৯ সালে লর্ড উইলিয়াম বেন্টিং আইন করে সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধ করেছিলেন। কৌলীন্য প্রথা ও গঙ্গায় সন্তান বিসর্জনের বিরুদ্ধে তিনি সরব হয়েছিলেন। এছাড়াও হিন্দু সমাজের জাত-পাত ব্যবস্থার অযৌক্তিক গোঁড়ামির বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার হয়ে ওঠেন।

৩. শিক্ষাসংস্কারঃ রামমোহন ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের পক্ষে পুরোপুরি সমর্থন জানান। তিনি মনে করতেন আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার উপর ভিত্তি করেই নতুন ভারত গড়ে উঠবে। এই উদ্দেশ্য তিনি একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে সচেষ্ট হয়েছিলেন। যেমন ১৮১৭ সালে হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন ডেভিড হেয়ারের সহযোগী। ১৮২২ সালে নিজ ব্যয়ে অ্যাংলো হিন্দু স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

শুধু তাই নয় ১৮২৬ সালে রামমোহন প্রতিষ্ঠিত বেদান্ত কলেজে পাশ্চাত্য সমাজ  বিজ্ঞান ও পদার্থবিদ্যায় শিক্ষা দেওয়া হত। এমনকি আলেকজান্ডার ডাফ কলকাতায় জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিলে তিনি ডাফকে সাহায্য করেছিলেন। পাশাপাশি লর্ড আর্মহাস্টকে একটি চিঠি লিখে ভারতবাসীর জন্য পাশ্চাত্য গনিত, প্রক্রতি বিজ্ঞান, রসায়ন, পাশ্চাত্য দর্শন এবং ইংরেজি ভাষা শিক্ষা প্রভৃতির দাবী জানান।

৪. রাজনৈতিক সংস্কারঃ রাজনৈতিক চেতনার উন্মেষের ক্ষেত্রে রামমোহনের অবদান অনস্বীকার্য। উচ্চহারে খাজনা আদায়, জমিদারদের অত্যাচার প্রভৃতি সামাজিক উৎপীড়ন ও শোষণের বিরুদ্ধে তিনি রুখে দাঁড়ান এবং প্রতিবাদ জানান। শাসন বিভাগ থেকে বিচার বিভাগ পৃথকীকরণ, জুরির সাহায্যে বিচার, উচ্চপদে ভারতীয়দের নিয়োগ প্রভৃতি ক্ষেত্রে দাবি জানিয়ে ছিলেন তিনি।

উপসংহারঃ সমাজ সংস্কারক হিসাবে রাজা রামমোহনের কিছু সীমাবদ্ধতা থাকলেও আধুনিক ভারতীয় সমাজ ও সভ্যতায় তার অবদান অনস্বীকার্য বলে মনে করা হয়। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে, “রামমোহন রায় ভারতে আধুনিক যুগের সূচনা করেন।“

 

আরো পড়ুন শব্দার্থতত্ত্ব দ্বাদশশ্রেণী বাংলা প্রশ্নোত্তর MCQ & SAQ

আরো পড়ুন ঔপনিবেশিক ভারতের শাসন ছোট প্রশ্ন ও উত্তর

 

অবশেষে তোমাকে বা আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভুমিকার এই আর্টিকেলটি পড়ার জন্য। এভাবেই www.artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা সমাজ সংস্কারে রাজারামমোহন রায়ের ভুমিকার মতো আরো উন্নতমানের Study material বা notes তুলে ধরতে পারি।

 

বিঃদ্রঃ সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভুমিকার এই নোটসটি কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষক ও কিছু বই এর সাহায্যে তৈরি করা হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ হয়ে ওঠেনি এবং তাদের অনুমতিও নেওয়া সম্ভব হয়নি। সমাজ সংস্কারে রাজা রামমোহন রায়ের ভুমিকার এই আর্টিকেলের ওপর কারো যদি কোনোরকম অভিযোগ থাকে তাহলে আমাদের জানান এই ঠিকানায় [email protected] ইমেল এর মাধ্যমে।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!