Menu

ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব কি?

ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব/পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব; আজকের আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা দেখতে চলেছি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পরিষদের  দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সিলেবাস এর অন্তর্গত  প্রথম অধ্যায়  অতীত ধারণা থেকে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর।

Table of Contents

 প্রশ্নঃ ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব কি?  পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো।

উত্তরঃ  মানুষের স্মৃতিপটে অতীতের অনেক কিছুই  বিধৃত থাকে অতীতের কোনো আসা ইতিহাস বা মানব জীবনের নানা ঘটনা জানতে আমাদের বিশেষ ভাবে সাহায্য করে।  স্মৃতিকথা মানুষকে কখনো ভাবায়,  আবার কখনো কাঁদায়।  মধুর স্মৃতি মনে আনন্দ  জাগায়।  কিন্তু বেদনা ভরা স্মৃতি মনে মনে দুঃখ ব্যথা বয়ে নিয়ে আসে।  মানুষের স্মৃতিকথার সংকলন যথাযথ ও সুবিন্যাস্ত হলে আগামী প্রজন্ম তার থেকে অনেক কিছু জানতে পারে।

ইতিহাসের উপাদান রূপে স্মৃতিকথার গুরুত্ব অপরিসীম।  ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব পূর্ণ দেশ গুলি হল-

 গুণীজনদের বিবরণঃ 

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্মৃতিকথা  গুলি গুণী ব্যক্তি রচনা করেন।  ফলে তাতে অবান্তর,  পক্ষপাতমূলক ও অতিরঞ্জিত ঘটনার প্রবেশ হ্রাস পায়। এবং এগুলি থেকে অতীতের বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার তথ্য ও বিবরণ পাওয়া যায়।  যেমন-  মণিকুন্তলা সেন এর সেদিনের কথা,  সুফিয়া কামালের  একাত্তরের ডায়েরী  ইত্যাদি।

 প্রত্যক্ষদর্শীদের বিবরণঃ

বিভিন্ন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে বিভিন্ন ঘটনার বিবরণ তাদের স্মৃতিকথা গুলিতে আলোচনা করেন।  উক্ত বিবরণে ঐতিহাসিক তথ্যের সত্যতা অনেক বেশি থাকে।

 ঐতিহাসিক গুরুত্বঃ 

বিভিন্ন স্মৃতিকথা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে  বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের  বর্বর কাহিনী পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষের ওপর যে নৃশংস অত্যাচার ও হত্যালীলা চালিয়েছিল,  তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান হলো স্মৃতি কথাগুলি কেননা পাক সামরিক বাহিনী তখন পূর্ব বাংলার সমস্ত সংবাদ গোটা বিশ্ব থেকে আড়াল করেছিল।

ভিয়েদা স্কার্লটন তাঁর দি টেস্টিমোনি অব লাইভস ন্যারেটিভ এন্ড মেমোরি ইন পোস্ট সোভিয়েত-  লাটভিয়া এবং এস্তনিয়ান লাইফ হিস্ট্রিজ  গ্রন্থে স্মৃতিকথার গুরুত্ব সম্পর্কে বলেছেন –

১)  স্মৃতিকথা মুক্তচিন্তার বিকাশ ঘটায়।
২)  ব্যক্তি জীবনের  নানা ঘটনা থেকে আত্মজীবনী  মূলক  লেখার প্রবণতা গড়ে তুলতে  সাহায্য করে।
৩)  স্থান কাল পাত্র সম্পর্কে অনেক ধারণা দিয়ে থাকে।
৪) ইতিহাসের নানা উপাদান,  উৎস তথা উপকরণ স্মৃতিকথা থেকে সংগ্রহ করা সম্ভবপর হয়।
৫)  অনেক বিতরকের অবসান ঘটায় এবং নতুন ধারণা তৈরি করে দিতে সাহায্য করে।

ডক্টর  স্কালটন  নিজেই বলেছেন,  স্মৃতিকথা স্মৃতিকথার সংকলন বাল্টিক সাগরীয় অঞ্চল এর  জীবনযাত্রার বিশ্লেষণ অনেকগুলি সহায়ক হয়েছে।  কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়ে লিখিত ও অলিখিত স্মৃতিকথা নিয়ে প্রচুর গবেষণা আজও হচ্ছে।

ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব কি? পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো।
ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব কি? পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব আলোচনা করো।

 পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্বঃ 

ইতিহাস হল মানবজাতির অতীত কর্মকান্ড কালানুক্রমিক ও ধারাবাহিক লিখিত বিবরণ।  ইতিহাস হল সেই বিষয় যা অতীতের আলোকে বর্তমানের বিচার-বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পথ দেখায়।  অধ্যাপক  মেটল্যান্ড এর মতে,  মানুষ যা ভাবে এবং যা করে তাই হল ইতিহাস।  ইতিহাস শুধু মানুষের কর্মকান্ডের হিসাব রাখে না,  তার চিন্তাভাবনারও হিসাব রাখে।  ইতিহাস সবসময় প্রবহমান,  বহমান নদীর মত থেমে থাকে না।  সংস্কৃতি হলো মানুষের চিন্তা-ভাবনা শ্রেষ্ঠ ফসল,  আচার-আচরণ,  সাহিত্য,  শিল্প,  ধর্ম, দর্শন।  ইতিহাস কতগুলি নীতির সমষ্টি নয়,  ইতিহাস হল মানুষের প্রগতির কাহিনী।  বর্তমান শতাব্দীতে ব্যবহারিক বিজ্ঞানের চরম অগ্রগতি ঘটলেও  ইতিহাস এর প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব  মোটেই  হ্রাস পায়নি। পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ দিক গুলি হল-

১)  বর্তমানের ভিত্তিঃ  

অতীতের ওপর ভিত্তি করেই বর্তমান দাঁড়িয়ে আছে,  ইতিহাস হল অতীত এর সাক্ষী।  তাই বর্তমান কে ভালোভাবে জানতে হলে,  বুঝতে হলে অতীত ইতিহাসকে অবশ্যই জানতে হবে।  তাই ইতিহাস বর্তমানকে জানার সুযোগ করে দেয় এ কথা আমরা নিঃসন্দেহে বলতে পারি।

২)  অতীতের প্রতিচ্ছবিঃ  

ইতিহাস হল অতীতের আয়না।  অতীতে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলি  সযত্নে সংরক্ষণ করে রাখে ইতিহাস।  বিভিন্ন সভ্যতার ক্রমবিকাশ,  বিভিন্ন জাতির উত্থান পতন,  বিভিন্ন রাষ্ট্র ও রাজা বাদশার কর্মকাণ্ড  প্রভৃতি সব ঘটনাই ইতিহাসের সংরক্ষিত হয়।  সংরক্ষিত ইতিহাসের কল্যাণকর দিকগুলি অনুসরণ করে  বর্তমান প্রজন্ম সুপথে পরিচালিত হতে পারে।

৩)  জ্ঞানের বিকাশঃ  

ইতিহাস হল সর্ববৃহৎ জ্ঞান ভান্ডার।  জ্ঞানের সকল শাখা গুলি,  যেমন –  সাহিত্য,  ধর্মনীতি,  রাজনীতি,  অর্থনীতি,  সমাজনীতি,  সংস্কৃতি,  বিজ্ঞান,  বিপ্লব,  আন্দোলন,  মহাপুরুষের কর্মকাণ্ড ইতিহাসের আলোচনায় স্থান লাভ করে।

৪)  জাতীয়তাবাদের বিকাশঃ  

ইতিহাস কোন দেশের বা জাতির অতীত ঐতিহ্য তুলে ধরে।  এর ফলে সেই দেশ বা জাতির মধ্যে জাতীয়তাবোধের বিকাশ ঘটে।  যার ফলে একটি জাতি বহিরাগত শোষণ ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ায়।  দেশ স্বাধীনতা লাভ করে।

৫)  আত্মপ্রত্যয় এর বিকাশঃ  

ইতিহাস কোন জাতির জীবনে আত্মপ্রত্যয় এর বিকাশ ঘটাতে সক্ষম হয় । অতীতে বিভিন্ন মানব জাতি বা মহান ব্যক্তি কী বিপুল পরিমাণ কর্মকাণ্ড করে গেছেন তা ইতিহাস থেকে বর্তমান প্রজন্মের মানুষ জানতে পারে।  এর ফলে বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে আত্মপ্রত্যয়ের বিকাশ ঘটে।

পরিশেষে বলতে হয় যে,  ইতিহাস বর্তমানকে সচেতন করে থাকে,  অতীতের স্থান,  কালো মানুষের কাহিনী যথাযথ অনুশীলন করে।  আজ আমাদের জগৎ ও জীবনের জন্য তাই সঠিক পথের দিশা হল ইতিহাস।  সত্যিই ইতিহাস একটি বৃক্ষ,  একটি বটবৃক্ষ যা আমাদের শান্তির বড় আশ্রয়।

 

আরো পড়ুনপেশাদারী ইতিহাস বলতে কী বোঝো?  পেশাদারী অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য আলোচনা করো?

 

বিঃ দ্রঃ আজকে আমাদের  আর্ট স্কুল ডট ইন  এর  এই ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব/পেশাদারি শাখা হিসেবে ইতিহাসের গুরুত্ব আর্টিকেলটি তৈরি করতে কিছু বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে;  যদিও যার জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি;  তাই আমাদের এই  আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোন রকম সমস্যা থেকে থাকে  তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected]  এই ঠিকানায়;  আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!