Menu

জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদান গুলি

জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদান; আজকের এই আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় হল পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পরিষদের (WBCHSE) অন্তর্গত একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সিলেবাসের  জাতীয়তাবাদ,  জাতি ও রাষ্ট্র অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার যথার্থ উত্তর,  যা তোমাদের আগামী পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্নঃ জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদান গুলি উল্লেখ করো।

উত্তরঃ  যে কোন জাতির কাছে জাতীয়তাবাদ হলো একটি আদর্শ।  এই জাতীয়তাবাদের  স্বরূপ উপলব্ধি করতে হলে  জাতীয় জনসমাজ সম্পর্কে ধারণা ব্যাখ্যা করা প্রয়োজন।  রাজনৈতিক চেতনা সম্পন্ন ঐক্যবদ্ধ জনসমাজ হলো জাতীয় জনসমাজ।  বিভিন্ন উপাদানের মাধ্যমে এই ঐক্য গড়ে ওঠে।  এই উপাদানগুলো দুটি ভাগে ভাগ করা যায় –  বাহ্যিক ও ভাবগত উপাদান।

 বাহ্যিক উপাদান গুলি নিম্নরূপ-

 ক) ভৌগোলিক ঐক্যঃ

একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে জনসমাজ দীর্ঘদিন থাকলে  তাদের মধ্যে গভীর একাত্মবোধ ও ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ গড়ে ওঠে।  এর ফলে তাদের মধ্যে দেশপ্রেম জেগে ওঠে।  একই পরিবেশে বসবাস করায় তাদের আচার-ব্যবহার,  চিন্তাভাবনা  ও সংস্কৃতির মধ্যে একটা সমন্বয়ে গড়ে ওঠে।  এই নৈকট্যেই  জাতীয় জনসমাজের পরিণত হয়।  ইসরাইল রাষ্ট্র  সৃষ্টির পূর্বে  ইহুদীরা পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে থাকলেও  তাদের মধ্যে ঐক্য গড়ে ওঠে

 খ) বংশগত ঐক্যঃ

যখন কোন জনসমাজের অন্তর্ভুক্ত  প্রতিটি মানুষ নিজেকে একই বংশোদ্ভূত বলে মনে করেন,  তখন তাদের একাত্ম বোধ গড়ে ওঠে।  এই বংশগত ঐক্য তাদের মধ্যে স্বজনপ্রীতি গড়ে তোলে এবং গভীর জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করে।  এটি জাতীয়তা সৃষ্টির অন্যতম সহায়ক উপাদান হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।  কারণ পৃথিবীর কোন জাতীয় অবিমিশ্র নয়। যেমন –  ইংরেজ ও জার্মান জাতি  একই বংশ থেকে এসেছে।

জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদান গুলি উল্লেখ করো
জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদান গুলি উল্লেখ করো
 গ) ভাষাগত ঐক্যঃ 

মানুষের মনের ভাব ভাষার মাধ্যমে ব্যক্ত হয়।  একই ভাষা গোষ্ঠীর জনসমাজের মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান সহজে হয়।  যারা একই ভাষায় কথা বলে এবং একই সাহিত্য পাঠ করে তাদের চিন্তা ভাবনার মধ্যে একটা ঐক্য গড়ে ওঠে যা জনসমাজ গঠনের  প্রধান উপাদান হিসেবে গণ্য করা যেতে পারে।  উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে –  পূর্ব পাকিস্তানের  কথা।  জার্মান দার্শনিক ফিকটে এর  মতে –  ভাষা হলো জাতীয় ঐক্য গড়ার অন্যতম প্রধান উপাদান।

 ঘ) ধর্মগত ঐক্যঃ

সব ধর্ম বিশ্বাস মানুষকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।  প্রাচীন যুগ থেকেই ধর্ম মানুষকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করতে সাহায্য করেছে।  বর্তমান যুগেও ধর্মের ভিত্তিতে বিভিন্ন রাষ্ট্র গড়ে উঠেছে।  যেমন –  পাকিস্তান।  কিন্তু ভারতবর্ষে এখনো বহু বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের বাস দেখতে পাওয়া যায়।  কারণ ভারত একটি প্রকৃতপক্ষে ধর্মনিরপেক্ষ দেশ,  যার ফলে বিভিন্ন ধর্মের মানুষের সমাগম ঘটেছে এই ভারতের পূণ্যভূমিতে।

 ঙ) রাষ্ট্রীয় সংগঠন বা রাজনৈতিক ঐক্যঃ

যদি কোন জনসমাজ দীর্ঘদিন ধরে একই রাষ্ট্রের অধীনে একই শাসন ব্যবস্থার মধ্যে বসবাস করে,  তবে তাদের মধ্যে  ঐক্যবোধ জন্ম নেয়।  এই ঐক্যবোধ কোন জনগোষ্ঠীকে জাতীয় জনসমাজের পরিণত করে।  এক্ষেত্রে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলা যেতে পারে।

 চ) অর্থনৈতিক স্বার্থঃ

অর্থনৈতিক স্বার্থ একনা হলে একটি জাতির মধ্যে ঐক্য প্রতিষ্ঠা হতে পারে না।  অর্থনৈতিক সমস্বার্থ  কোন জনসমাজের মধ্যে ঐক্য সৃষ্টিতে সাহায্য করে।  অর্থনৈতিক প্রয়োজনে জনসমাজের মধ্যে ঐক্যবোধ জাগতে পারে।

 ২) ভাবগত উপাদানঃ

জাতীয় জনসমাজ গঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভাবগত উপাদান।  জাতীয় জনসমাজ  হলো মূলত ভাবগত ধারণা।  যখন কোন  জনসমাজ মনে করে,  তাদের মধ্যে ঐক্য বোধ জাগরিত হয় ইতিহাস  ও ঐতিহ্য এক তারা একই সুখ-দুঃখের সমান অংশীদার যা তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধকে আরো শক্তিশালী করে তোলে।

জিমার্ন  বলেছেন,  যদি কোন জনসমাজ নিজেদের জাতীয় জনসমাজ বলে মনে করে,  তবে তারা জাতীয় জনসমাজ হিসেবে গণ্য হয়।  গেটেল জাতীয়তাকে,  একটি ভাবগত বিষয় বলে উল্লেখ করেছেন।  অতীতের  স্মৃতি,  একসঙ্গে বসবাস করার ইচ্ছা এবং ঐতিহ্যকে ধরে রাখার বাসনা থেকে  ভাবগত উপাদান সৃষ্টি হয়।  সুতরাং;  জাতীয় জনসমাজ গড়ে ওঠার পক্ষে বাহ্যিক ও ভাবগত উভয়  উপাদান সমান ভাবে তাৎপর্যপূর্ণ।  এখানে দেশ ও জাতি প্রেম হল সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।  যা   সহস্র জীবনকে একসূত্রে বাঁধতে পারে।  স্বদেশ প্রীতিই  জাতীয় ঐক্যকে  সুদৃড় করে। অধ্যাপক গেটেল বলেছেন, আধুনিক রাষ্ট্রে ঐক্যের ভিত্তি হল মানসিক।

 

আরো পড়ুনজাতি এবং রাষ্ট্রের পার্থক্য গুলি কি কি তা বিষদে আলোচনা করো?

 

বিঃ দ্রঃ আর্ট স্কুল ডট ইন  ব্লগের আজকের এই আর্টিকেল তথা  জাতীয় জনসমাজের প্রধান উপাদান গুলি উল্লেখ করো  তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে;  তাই আমাদের আজকের এই প্রশ্নটি নিয়ে তোমাদের কারো যদি কোন রকম সমস্যা থেকে থাকে,  তাহলে আমাদের এই মেইল করো [email protected]  এই ঠিকানায়।  আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনাদের সমস্যার দূরীকরণের।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!