Menu

তেল কূটনীতি বলতে কী বোঝো?

তেল কূটনীতি/  উপসাগরীয় সংকট;  আজকের আমাদের এই আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় তোমাদের দ্বাদশ শ্রেণীর ঠান্ডা লড়াই;  জোট নিরপেক্ষ নীতি,  উপসাগরীয় সংকট  অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর।  যেটি হল –  তেল কূটনীতি বলতে কী বোঝো?  এই তেল কূটনীতি কিভাবে উপসাগরীয় সংকটের সূচনা করেছিল তা ব্যাখ্যা করো,  যা তোমাদের আগামী বার্ষিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  তাই পুরো প্রশ্নের উত্তরটি ভালো করে পড়ো এবং পারলে তোমাদের খাতায় সেটিকে নোট করে নিও।

 

তেল কূটনীতি বলতে কী বোঝো?  এই তেল কূটনীতি কিভাবে উপসাগরীয় সংকটের সূচনা করেছিল তা ব্যাখ্যা করো।

 

বিংশ শতকের শুরুতে মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল পরিমাণ তেলের ভান্ডার এর খোঁজ পাওয়া যায়।  এরপর থেকে এখানকার তেলের ওপর প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়।  প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে মধ্যপ্রাচ্যে তেলের ওপর নিয়ন্ত্রণ কায়েম করার কাজে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে ছিল ব্রিটেন।  তার উদ্যোগে ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে  অ্যাংলো ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি গড়ে ওঠে।

 

১৯০৮  খ্রিস্টাব্দে ইরানিয়ান অয়েল  কোম্পানি তেল উৎপাদনের প্রথম ছাড়পত্র পায়।  এরপর  ফ্রান্স ডাচ এবং আমেরিকান তেল কোম্পানি গুলো আস্তে আস্তে মধ্যপ্রাচ্যের তেল উৎপাদনের অধিকার পায়। ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে স্ট্যান্ডার্ড অয়েল কম্পানি  বাহরিনে  এবং ১৯৩৩ খ্রিস্টাব্দে সৌদি আরবের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে তেল উৎপাদনের অধিকার পায়।  

তবে তেল উৎপাদনে এবং তা বিক্রি করার ওপর দেশের সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না।  তেল কোম্পানি গুলি স্থানীয় মাতব্বর বা সংশ্লিষ্ট মালিকদের সঙ্গে এ বিষয়ে চুক্তি করত। বদলে রয়েলটি বাবদ তাদের প্রচুর পরিমাণে অর্থ দিত।  জমি চ্যুত কৃষকরা কেউ কেউ হয়তো তেল কোম্পানিতে চাকরি পেতো।  অধিকাংশই কিন্তু চরম দারিদ্র্যের মধ্যে দিন কাটাতে।

 

এদিকে  রয়ালটির অর্থ ওইসব দালাল বা সামন্ত্রতান্ত্রিক প্রভুরা নিজেদের স্বার্থে খরচ করত। জনহিতকর কাজে  রয়েললটির ভগ্নাংশও খরচ হতো না।  এরকম শোষণের বিরুদ্ধে কৃষকদের ক্ষোভ  ক্রমশ দানা বাঁধতে থাকে।  তেল উৎপাদনকারী বহুজাতিক সংস্থা গুলি করে নানা কৌশলে মুনাফার সিংহভাগ নিজেদের কবলে রাখত আর বঞ্চিত করতো মালিক দেশগুলিকে।  তাছাড়া ব্রিটিশ রাষ্ট্রপতিরা বা রাজনৈতিক প্রতিনিধিরা এক্তিয়ারের বাইরে গিয়ে নানাভাবে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করত।  ফলে স্থানীয় মানুষের মধ্যে অসন্তোষ পুঞ্জিভূত হতে থাকে। 

 

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আমেরিকার উপলব্ধি করেছিল যে,  নিজের দেশে উৎপাদিত তেল অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে সক্ষম নয়।  এজন্য মধ্যপ্রাচ্যের তেলের ওপর আমেরিকার নজর পড়ে।  ব্রিটেন ও ফ্রান্সের সঙ্গে বহু দর কষাকষি করে আমেরিকা ১৯২৫  খ্রিস্টাব্দে এই অঞ্চলের তেলের উপর কিছুটা অধিকার কায়েম করে।  রাশিয়ার বলশেভিকরা ১৯১৭  খ্রিস্টাব্দে ইরানের তেলের ওপর বিশেষ অধিকার ছেড়ে দিলেও ১৯৪৪  খ্রিস্টাব্দে তারা ইরানে সেই অধিকার পুনঃপ্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তেল উৎপাদনকারী দেশ গুলি তাদের অধিকার নিয়ে ক্রমশ সজাগ হতে থাকে এবং তারা যে বঞ্চিত হচ্ছে বুঝতে পারে।  এ বিষয়ে ক্ষোভের প্রথম বিস্ফোরণটি আসে ইরান থেকে। ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের ২২শে  অক্টোবর ইরানের পার্লামেন্ট নিজস্ব বিনিয়োগের অনুসন্ধান ও উত্তোলনের কথা ঘোষণা করে এবং ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের  24 এপ্রিল  আইন পাস করে তেল কে জাতীয়করণ করে।  

এই অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার ১৯৩৩  খ্রিস্টাব্দের চুক্তি ভঙ্গের অভিযোগ তোলে।  বৃটেনের আন্তর্জাতিক আদালতের নিষ্পত্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে –  এই বলে যে,  কোন দেশের আভ্যন্তরীন ব্যাপারে হেগ আদালতের হস্তক্ষেপ করার অধিকার নেই। ১৯৫১ খ্রিস্টাব্দের অক্টোবরে ব্রিটেনের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদে  তোলে কিন্তু সেই প্রচেষ্টাও নিষ্ফল হয়। 

 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে বিশেষ করে ১৯৬০ এর  দশকে আমেরিকা পৃথিবীর নানা প্রান্তের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার ফলে প্রতিরক্ষা খাতে তার ব্যয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি পায় এবং অভ্যন্তরীণ উন্নয়নের গতি হ্রাস পায়।  তাছাড়া প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে চীনের উত্থানও আমেরিকার পক্ষে আনন্দদায়ক ছিল না।  

তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তীকালে আমেরিকার এসব সমস্যার চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল সম্পদের সংকোচন।  সংকোচন এর ফলে মার্কিন পরিবহন শিল্প ও অন্যান্য কিছু শিল্প অবক্ষয়ের মুখে পড়ে।  এর ফলে আমেরিকা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলে মধ্যপ্রাচ্যের তেল সমৃদ্ধ অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেয়।  আমেরিকার এই কূটনৈতিক পদক্ষেপ তেল কূটনীতি  বা Oil Diplomacy  নামে পরিচিত।

 

উপসাগরীয় সংকটঃ  

 

বিংশ শতকের 70 দশকের শেষদিকে মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি ঘটলে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও উত্তেজনা বৃদ্ধি পায়।  এই ঘটনা উপসাগরীয় সংকটের নামে পরিচিত।

 

প্রথমত, বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যে বৃহৎ শক্তি নিজেদের প্রভাব বিস্তারে ব্যস্ত।  এর কারণ একটাই,  এখানকার তেলের ভান্ডার।  বিশ্বে দ্রুত শিল্পোন্নতির প্রেক্ষিতে তেল এর প্রয়োজন অপরিসীম।  আমেরিকায় তেলের চাহিদা প্রচন্ড।  লাতিন আমেরিকা থেকে সংগ্রহ করা তেলে তার চাহিদা মেটে না।  মধ্যপ্রাচ্যের তেল এর উপর তার তাই নজর গিয়ে পড়ে।  আমেরিকার পেশিশক্তি ও অর্থ বলে প্রভাবিত হয়ে সৌদি আরব প্রমূখ দেশগুলি আমেরিকাকে তেল সরবরাহের রাজি হয়।

 

দ্বিতীয়ত, আমেরিকা  একা তেল পাবে আর ব্রিটেন ফ্রান্স প্রভৃতি শিল্পোন্নত দেশগুলি তাকিয়ে থাকবে তা হয় না।  তারাও তেল সংগ্রহে নেমে পড়ে,  এর ফলে জন্ম নেয় এক প্রতিযোগিতা আর সেই প্রতিযোগিতায় অবশ্যম্ভাবীরূপে অনুপ্রবেশ ঘটে রাজনীতির।  সকলেই নিজস্ব রাজনীতি খাটিয়ে তেল সংগ্রহে ব্যস্ত।  তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর এই প্রতিযোগিতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে উঠে পড়ে লেগেছে।  তারা তেলের উৎপাদন বেঁধে রেখে তেলের দাম বাড়িয়েই চলেছে।

 

তৃতীয়ত, তেল কেনাবেচার প্রতিযোগিতার সঙ্গে সমান্তরালভাবে আরেকটা প্রতিযোগিতা চলছে –  তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর বিক্রি করে হঠাৎ ফুলেফেঁপে উঠছে।  তাদের ঘরে ডলারের পাহাড়।  এই উদ্বৃত্ত অর্থ তারা কিভাবে খরচ করছে জানতে পারলে দ্বিতীয় প্রতিযোগিতার রহস্য উদ্ঘাটিত হবে।

 

চতুর্থত, তেল উৎপাদনকারী দেশগুলোর একটা অংশে সমরাস্ত্র কিনছে দেশের প্রতিরক্ষার জন্য আর শিল্পোন্নত দেশগুলি এদের সমরাস্ত্র বিক্রি করে তেল কেনার অর্থ নিজের দেশে লুট করে নিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে।  ফলে ঘরের অর্থ ঘরেই রইল পাওয়া গেল আর দেশের অস্ত্র কারখানায় চালু রইল।

 

পঞ্চমত, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো তো ইসলাম ধর্মাবলম্বী তাহলে কাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য তারা অস্ত্র সংগ্রহ করছে।  তার একটাই উত্তর –  মধ্যপ্রাচ্যের দেশ গুলির নিজেদের মধ্যে ভাব-ভালোবাসা একান্ত অভাব।  উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে,  ইরান ইরাক যুদ্ধের কথা,  কুয়েতের বিরুদ্ধে ইরাকের যুদ্ধ অভিযান,  তাছাড়াও  আরব  ইহুদি  দ্বন্দ্ব  তো আছেই,  আর আছে সিয়া সুন্নি বিবাদ।

 

আরো পড়ুনঃ 1949 খ্রিষ্ঠাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থানের প্রেক্ষাপট কি ছিল সেই বিষয়ে বিষদে আলোচনা করো। 

 

বিঃ দ্রঃ  তেল কূটনীতি /  উপসাগরীয় সংকট;  আজকের আমাদের  আর্টিকেল এর  এই তেল কূটনীতি বলতে কী বোঝো?  এই তেল কূটনীতি কিভাবে উপসাগরীয় সংকটের সূচনা করেছিল তা ব্যাখ্যা করো, প্রশ্নটির উত্তর তৈরি করার জন্য কিছু বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে।  যার জন্য আমরা হয়তো কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি।  

তাই আমাদের আজকের এই তেল কূটনীতি বলতে কী বোঝো?  এই তেল কূটনীতি কিভাবে উপসাগরীয় সংকটের সূচনা করেছিল তা ব্যাখ্যা করো, প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে তোমাদের কারো যদি কোন রকম সমস্যা থেকে থাকে  তাহলে আমাদের ইমেইল করো [email protected]  এই ঠিকানায়.  আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে।  আর এভাবেই  আমাদের ব্লগ https://artsschool.in  এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিও যাতে আমরা ভবিষ্যতে আরও গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের উত্তরগুলো তোমাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।  ধন্যবাদ। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!