Menu

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতা সম্পূর্ণ আলোচনা

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতা; বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচিত উক্ত কবিতাটি বর্তমানে কল্যাণী ইউনিভার্সিটির (Kalyani University) অন্তর্গত বি এ ৩ বছরের ডিগ্রি কোর্সের অন্তর্গত প্রথম বছরের প্রথম সেমিস্টারের AECC বিষয়ের অন্তর্গত বাংলা সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আজকের এই আর্টিকেলটিতে তাই আমরা তোমাদের জন্য মানে যারা কল্যানী ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত প্রথম সেমিস্টারের ছাত্রছাত্রী; আশা করি তোমরা এখান থেকে কিছু জানতে পারবে-

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতা লেখক পরিচিত-

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতাটির লেখক হলেন বিশ্ব বরেণ্য কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। তার লেখা এই কবিতাটি তোমাদের মানে কল্যাণী ইউনিভার্সিটির অন্তর্গত বি এ অর্থাৎ গ্রাজুয়েশনের প্রথম ইয়ারের প্রথম সেমিস্টারের সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক আজকের কবিতাটি এবং কবির সম্পরকে কিছু কথা।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর; জদিও বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্পর্কে আমরা সকলেই কমবেশি কিছু কথা অবশ্যই জানি। তবুও এখানে কিছু কথা না বললেই নয়।

“একটি মাত্র পরিচয় আমার আছে, সে আর কিছুই নয়, আমি কবি মাত্র”

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের এই আত্ম মূল্যায়ন মোটেই অতিকথন নয়। সাহিত্যের সমস্ত শাখাতেই তাঁর নির্বাধ ও বিস্ময়কর পদচারনা হলেও তাঁর একমাত্র পরিচয় তিনি কবি। বস্তুত রবীন্দ্রনাথ স্বয়ং এক মহাকাব্য। শৈশব থেকে আমৃত্যু পর্যন্ত মানব জীবনের ‘কান্না হাসির দোলদোলানো পৌষ ফাগুনের পালা’ রচনা করে বিশ্বসাহিত্যের সূচীপত্রে তিনি এক অনন্যসাধারণ ব্যক্তিত্ব রুপে প্রতীয়মান হয়ে আছেন।

মাত্র সাত-আট বছর বয়স থেকেই রবীন্দ্রনাথ কবিতা লেখা শুরু করলেও শৈশবের সে অমুদ্রিত রচনাগুলোর কোনো অস্তিত্ব আজ নেই। তাঁর প্রথম প্রকাশিত কবিতা সম্ভবত ১২৮১ বঙ্গাব্দে তত্ত্ববোধিনী পত্রিকায় প্রকাশিত অভিলাষ। আর গ্রন্থাকারে প্রকাশিত প্রথম কাব্য ‘কবি কাহিনী’। কবি হিসাবে রবীন্দ্র প্রতিভার স্বকীয় আত্মপ্রকাশ ১৮৮২ খ্রিষ্টাব্দে প্রকাশিত ‘সন্ধ্যাসঙ্গীত’ কাব্যে।

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতা এর  উৎসঃ

ভারতী পত্রিকায় ১২৮৯ খ্রিষ্টাব্দের অগ্রাহায়ন মাসের সংখ্যায় নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতাটি প্রথম প্রকাশিত হয়।

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ  কবিতাঃ

আজি এ প্রভাতে রবির কর

কেমনে পশিল প্রাণের পর,

কেমনে পশিল গুহার আঁধারে প্রভাতপাখির গান!

না জানি কেন রে এত দিন পরে জাগিয়া উঠিল প্রাণ।

জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,

ওরে উথলি উঠেছে বারি,

ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ রুধিয়া রাখিতে নারি।

থর থর করি কাঁপিছে ভূধর,

শিলা রাশি রাশি পড়িছে খসে,

ফুলিয়া ফুলিয়া ফেনিল সলিল

গরজি উঠিছে দারুণ রোষে।

হেথায় হোথায় পাগলের প্রায়

ঘুরিয়া ঘুরিয়া মাতিয়া বেড়ায় –

বাহিরেতে চায়, দেখিতে না পায় কোথায় কারার দ্বার।

কেন রে বিধাতা পাষাণ হেন,

চারি দিকে তার বাঁধন কেন!

ভাঙ্ রে হৃদয়, ভাঙ্ রে বাঁধন,

সাধ্ রে আজিকে প্রাণের সাধন,

লহরীর পরে লহরী তুলিয়া

আঘাতের পরে আঘাত কর্।

মাতিয়া যখন উঠেছে পরান

কিসের আঁধার, কিসের পাষাণ!

উথলি যখন উঠেছে বাসনা

জগতে তখন কিসের ডর!

আমি ঢালিব করুণাধারা,

আমি ভাঙিব পাষাণকারা,

আমি জগৎ প্লাবিয়া বেড়াব গাহিয়া

আকুল পাগল-পারা।

কেশ এলাইয়া, ফুল কুড়াইয়া,

রামধনু-আঁকা পাখা উড়াইয়া,

রবির কিরণে হাসি ছড়াইয়া দিব রে পরান ঢালি।

শিখর হইতে শিখরে ছুটিব,

ভূধর হইতে ভূধরে লুটিব,

হেসে খলখল গেয়ে কলকল তালে তালে দিব তালি।

এত কথা আছে, এত গান আছে, এত প্রাণ আছে মোর,

এত সুখ আছে, এত সাধ আছে – প্রাণ হয়ে আছে ভোর।।

কী জানি কী হল আজি, জাগিয়া উঠিল প্রাণ –

দূর হতে শুনি যেন মহাসাগরের গান।

ওরে, চারি দিকে মোর

এ কী কারাগার ঘোর –

ভাঙ্ ভাঙ্ ভাঙ্ কারা, আঘাতে আঘাত কর্।

ওরে আজ কী গান গেয়েছে পাখি,

এসেছে রবির কর।।

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতা এর বিষয়বস্তুঃ

বহুদিন পর আজ এই প্রভাতে পাখির এক করুন গান আকাশ থেকে ভেসে এল। না জানি কেমন করে সেই সুর আমার হৃদয়কে স্পর্শ করেছে। আজ জেন রবির কিরণ কোথাও কোনো আশ্রয় না পেয়ে আমার প্রানের পরে এসে পরেছে, আমার আঁধার সলিলে একটি কনকের রেখার মতো। আমি প্রানের আবেগকে আর ধরে রাখতে পারছি না। আজ জেন আমার প্রান জেগে উঠেছে।

চারিদিকে কারাগারের ঘেরাটোপের মাঝে আমি একা নিজের মধ্যেই বাঁধা পরে আছি। আমার কণ্ঠস্বরই আমার প্রতিধ্বনি হয়ে ফিরে আসে। অন্ধকার ঘর থেকে বাইরের আকাশের সন্ধ্যাতারা দেখেই রাত শেষ হয়। মাঝে মাঝে সেই আলোতেও ছেদ পরে মেঘের কারনে। তখন দিন রাত শুধুই ঝর ঝর শব্দ। এরকম ভাবেই কবি নিজের কাছে মুক্ত হতে চান, নিজের গান শোনেন পরের কাছে।

প্রভাতে জেগে উঠে কবি তাঁর প্রানের বাসনা, আবেগকে আটকে রাখতে পারেননি। সারা জগৎ জুরে যেন এক উথাল পাথাল শুরু হয়েছে। ধরিত্রী কাঁপছে, রাশি রাশি শিলা খসে পড়ছে, ফেনিল হয়ে জল উথলে ফুটে উথছে। প্রান পাগলের মত এই রুদ্ধ কারাগার থেকে বের হতে চায়। কিন্তু কারাগারের দ্বার চোখে পড়ে না। আজ প্রান সমস্ত বাঁধন ছিঁড়ে ছুটে বেড়িয়ে আসতে চায়, কোনো বাঁধা সে মানতে চায় না। যখন প্রানের বাসনা উথলে উঠেছে, তখন ভয় কিসের, আজ হঠাৎ নতুন করে জগতের মুখ কেন দেখলাম।

নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ সম্পূর্ণ কবিতা বিষয়বস্তু সহকারে
নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ সম্পূর্ণ কবিতা বিষয়বস্তু সহকারে

পাখির অর্ধেক গানটি যেন জগতের গান গাইল। আজ জগৎ দেখতে বাহির হব, পাষাণের কারাগার ভেঙে আমি করুণার ধারা বর্ষণ করবো। সমস্ত বাঁধন ছিন্ন করে নদী হয়ে বয়ে যাব, হৃদয়ের গান গেয়ে যাব। প্রানের বিলি করে যাবো, তবু এ প্রান শেষ হয় না। এই মনে সাধ জেগেছে জগৎ দেখার, তাই প্লাবন বেগে বয়ে যায় প্রানের সাধ মেটাতে চাই।

আজ প্রান জেগে উঠে যেন দূর হতে মহাসাগরের গান শুনতে পেয়েছে। প্রানের মাঝে আমন্ত্রণের ডাক এসেছে। দূর কোনো অজানা দেশে গিয়ে আমি প্রানের ধারা বর্ষণ করব, সমুদ্রে গিয়ে প্রান মিলিয়ে গান শেষ করবো। আমার চারিদিকের অন্ধকার কারাগারের ঘর ভাঙতে হবে। আজ পাখি এ কী গান গেয়েছে! এনেছে রবির কর!

নির্ঝরের বাসনা শিখর থেকে শিখরে ছুটে যাওয়ার – ভূধর থেকে ভূধরে লুটিয়ে পড়ার। পাহাড়ী নদীর মত্ততায় ছুটে বেরানোয় অন্তরের ভেতরে যে এত কথা জমে আছে, এত গান জমে আছে – প্রানের সজীবতা এখানে যে এতখানি তীব্র – তা কবি আগে কখনও বোঝেননি। অন্তরের অসংখ্য কল্প সুখের ভাণ্ডার – স্বপ্নের সৌধ প্রানকে বিভোর ভাবে রেখেছিল। সংকীর্ন সেই সীমায় নিজের মধ্যে নিজেকে উপলব্ধি করার আনন্দে বিভোর কবি হঠাৎ অনুভব করলেন অন্তরের মুক্তির বিষয়টি। কবিতার শেষ অংশটিতে রয়েছে এই মুক্তির বার্তা।

আরো পড়ুনঃ খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর – সম্পূর্ণ গল্পের উৎস বিষয়বস্তু সংক্ষেপে পূর্ণ আলোচনা।

আরো পড়ুনঃ শিকল পরার গান – কাজী নজরুল ইসলাম – সম্পূর্ণ বিষয়বস্তু সংক্ষেপ আলোচনা

বিঃ দ্রঃ নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ কবিতা; এই আর্টিকেলটি কল্যানী ইউনিভার্সিটি এর প্রথম সেমিস্টারের স্টুডেন্ট দের কথা মাথায় রেখে করা হয়েছে। তাই পুরো আর্টিকেলটি পড়া হয়ে গেলে এর সন্মন্ধে তোমাদের মতামত নীচে কমেন্ট করে জানাতে ভুলো না যেন। আর এভাবেই আমাদের পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো জাতে ভবিষ্যতে আমরা এরকম আরো প্রয়োজনীয় তথ্য গুলি তোমাদের সামনে উপস্থাপন করতে পারি।

Comments 2

  • eta dara ki bjano hoice, ami etai bjtecina

  • Thanks for explained it… 🙏
    I think it’s a hard poem.., but now i understand the meanings of all lines….

    But., there are one person who was also helped me..by explaining this poem… So thanks.. to Pradip Sir.. 🙏

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!