রামকৃষ্ণদেব এবং নরেন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ; আজকের এই ব্লগের আলোচনার বিষয় হল পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষা পরিষদের wbchse একাদশ শ্রেণির সংস্কৃত সিলেবাস এর অন্তর্গত ভারতবিবেকম নাটকের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর; যা কিনা রামকৃষ্ণ দেব ও নরেন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ কিভাবে ঘটেছিল তা আলোচনা করো. যা তোমাদের আগামী বার্ষিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক আজকের প্রশ্নের উত্তরটি –
প্রশ্নঃ রামকৃষ্ণদেব ও নরেন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ কিভাবে ঘটেছিল তা আলোচনা করো।
উত্তরঃ শ্রী যতীন্দ্র বিমল চৌধুরী রচিত ভারতবিবেকম নাটকের প্রথম দৃশ্যের বিষয়বস্তু হলো ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেব এবং তার প্রিয় শিষ্য নরেন্দ্র নাথ দত্তের প্রথম সাক্ষাৎকার। এই অবিস্মরনীয় ঘটনাটি ঘটে ১৮৮১ খ্রিস্টাব্দে, কলকাতার শিমুলিয়া অঞ্চলে সুরেন্দ্রনাথ মিত্রের বাসভবনে। ঠাকুর শ্রীরামকৃষ্ণের অনুরোধে সুরেন্দ্রনাথ এই সাক্ষাৎকারের ব্যবস্থা করেছিলেন।
নাট্যাংশ টির প্রারম্ভেই দেখা যায় যে শ্রীরামকৃষ্ণ একজন যোগ্য উত্তর সাধক প্রাপ্তির আকাঙ্ক্ষায় দিবারাত্র মা ভবতারিণীর নিকট প্রার্থনা করে চলেছেন। এমনকি তার অত্যন্ত প্রিয় গৃহী ভক্ত সুরেন্দ্রনাথের গৃহে উপস্থিত হলেও ঠাকুরের এই উত্তর সাধক এর সন্ধান নিবৃত হয়নি। তাই তিনি নিজেও উৎকণ্ঠা থেকে কিছু সময়ের জন্য নিষ্কৃতি পেতে সুরেন্দ্রনাথ এর কাছে মাতৃ নাম শোনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন এবং তার গৃহের নিকট কোন তরুণ গায়ক থাকেন কিনা তাও জানতে চান ঠাকুর শ্রী রামকৃষ্ণ দেব।
সেই তরুণ গায়ক শ্রীরামকৃষ্ণের অপরিচিত তবুও তার দৈবিক দৃষ্টি সম্পন্ন মন এই তরুণের জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এরপর সুরেন্দ্রনাথ বলেন যে নরেন্দ্র নামে দত্ত বংশজাত এক যুবক তার গৃহের নিকটে থাকেন, তিনি বিদ্যা অর্জন রত এবং ব্রাহ্ম মন্দির এ যান আর একইসাথে সঙ্গীতেও তিনি যথেষ্ট নিপুন। নরেন্দ্র নাম শ্রবণ মাত্রই শ্রীরামকৃষ্ণ বলেন – সত্যং সর্বনরশ্রেষ্ঠ অর্থাৎ ঠাকুরের মনে তখন উত্তর সাধক প্রার্থীর ইচ্ছা আরো প্রবলভাবে নাড়া দিয়ে ওঠে। তিনি নরেন্দ্র দর্শন পাওয়ার জন্য অত্যন্ত ব্যাকুল হয়ে ওঠেন।
তিনি মনে মনে বলে ওঠেন – অপ্যেষ নরেন্দ্র বরনীয়তমো মম মানসপুত্রঃ স্যাৎ। তাই শীঘ্রই নরেন্দ্র এর উদ্দেশ্যে বার্তা পাঠাতে বলেন ঠাকুর রামকৃষ্ণ দেব। অন্যদিকে সুরেন্দ্রনাথ শ্রীরামকৃষ্ণের আকুলতা দেখে বিস্মিত হলেও তা মহতের গভীর মনোবৃত্তি ভেবে স্বয়ং নরেন্দ্রকে আনতে চলে যান। নরেন্দ্রনাথকে সঙ্গে করে সুরেন্দ্রনাথ যখন ঘরে প্রবেশ করেন তখন নরেন্দ্র মোদিকে শ্রীরামকৃষ্ণ আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়েন। কুঞ্চিত কেশ সজ্জিত মস্তক আকর্ণ বিস্তৃত বিস্ফোরিত চক্ষু, বিস্তৃত বক্ষদেশ বিশিষ্ট নরেন্দ্রনাথ এর মধ্যে তিনি নিজে উত্তর সাধক এর সন্ধান পান। আর এই প্রাপ্তিতে ঠাকুর আনন্দে উন্মাদ হয়ে ওঠেন। প্রথমে তিনি মা ভবতারিণীর উদ্দেশ্যে বিলম্বে নরেন্দ্রকে প্রেরণের জন্য অনুরোধ জানালেও পরে খুশি হয়ে ধন্যবাদ জানান।
অন্যদিকে নরেন্দ্র শ্রীরামকৃষ্ণকে উন্মত্ত মনে করলেও তার প্রতি নিজের আবেগকে প্রশমন করতে অসমর্থ হন তিনি। শ্রীরামকৃষ্ণের নরেন্দ্রকে দিকভ্রষ্ট করে। সে নিজেও বিদ্যাচর্চা ক্ষণিকের জন্য ঠাকুরকে দেবস্থানে প্রতিষ্ঠা করেন। কিন্তু বাস্তব সচেতন নরেন্দ্র নিজেকে যথাসময়ে সামলে নেন এবং শ্রীরামকৃষ্ণের অনুরোধে একটি শ্যামা সংগীত গেয়ে ঠাকুরের চিত্তবিনোদন করেন। আবার শ্রীরামকৃষ্ণের কন্ঠে গান শুনে তার সমস্ত বিরূপ মনোভাব দূরীভূত হয়। অর্থাৎ শ্রী রামকৃষ্ণদেব এবং নরেন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ অত্যন্ত মনোরম এবং যুগান্তকারী ঘটনা যার কান্ডারী ছিলেন সুরেন্দ্রনাথ মিত্র।
আরো পড়ুন – নরেন্দ্রকে দেখে শ্রীরামকৃষ্ণের মনোভাব এর পরিচয় দাও
বিঃ দ্রঃ আমাদের এই শিক্ষামূলক ব্লগ অর্থাৎ www.artsschool.in এর আজকের এই আর্টিকেলে অর্থাৎরামকৃষ্ণদেব এবং নরেন্দ্রনাথের সাক্ষাৎ এর উত্তরটি তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে; যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি; তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনরকম সমস্যা হয়ে থাকে; তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়; আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে। ধন্যবাদ।