Menu

শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা করো

আজকে আমাদের আলোচ্য বিষয় হল শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা, যেটা কিনা Class 12 Wbchse Board এর ইতিহাসের চতুর্থ অধ্যায়ের অন্তর্গত। বিদ্যাসাগর মানেই আমদের মনে আগে কিন্তু ভেসে আসে বর্ণপরিচয়ের কথা। যেই বই থেকে প্রায় আমাদের সকলেরই বিশেষ করে বাঙালি ছাত্রছাত্রীদের হাতে খড়ি হয়েছে। আর আজকে এখানে আমরা সেটাই দেখবো কীভাবে বাংলা তথা ভারতের শিক্ষা ব্যবস্থাকে একটা আলদা মাত্রা নিয়ে এসেছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর।

শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা  আলোচনা করো:

উনবিংশ শতকের বাংলা তথা ভারতবর্ষে যিনি ব্যক্তিগত প্রচেষ্টায় সংস্কার আন্দোলনের ঝড় তুলতে পেরেছিলেন তিনি হলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ( ১৮২০-৯১), তাকে উনিশ শতকে বাংলা নবজাগরণের অন্যতম পথিকৃৎ বলা হয়। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন সামাজিক কুসংস্কার গুলি দূর না করে সভ্যতার অগ্রগতি করা সম্ভব নয়, তাই কুসংস্কার দূর করার জন্য নিজেকে সমাজ সংস্কারের কাজে নিয়োজিত করেছিলেন।

বাংলা সামাজিক আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিদ্যাসাগরের অবদানকে আমরা শিক্ষা সংস্কার ও সামাজিক সংস্কার এই দুই বিষয়ের প্রেক্ষাপটে আলোচনা করতে পারি। কিন্তু আজকে আমরা কেবলমাত্র বিদ্যাসাগরের শিক্ষা ক্ষেত্রে সংস্কার গুলি নিয়ে আলোচনা করবো।

শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা
শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের-ভূমিকা

শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকাঃ গভীর মানবতাবাদে উদ্বুদ্ধ বিদ্যাসাগর প্রথম থেকেই শিক্ষার প্রসারে ব্রতী হয়েছিলেন। তিনি শিক্ষা আয়তনকে মানব ধর্মের নার্সারি করে তুলতে চেয়েছিলেন, শিক্ষা প্রসারের ক্ষেত্রে যে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলি তিনি নিয়েছিলেন সেগুলি হল নিম্নরূপ –

ক) বিদ্যালয় স্থাপনঃ বিদ্যাসাগর শিক্ষা সংস্কারের ক্ষেত্রে সবার আগে জোর দিয়েছিলেন – বিদ্যালয় স্থাপনের ওপর। লর্ড হার্ডিঞ্জ ১৮৪৪ সালে ১০০ টি বাংলা বিদ্যালয় স্থাপনের ওপর জোর দিলে বিদ্যাসাগর তার দিকে সাহায্যের হাত বারিয়ে দিয়েছিলেন। শুধু তায় নয় তিনি নিজেও বিভিন্ন জেলায় ২০ টি মডেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যার বেশিরভাগটাই তার নিজের খরচায় চলতো। এছাড়া ১৮৭২ খ্রিঃ তিনি নিজের খরচায় মেট্রোপলিটন ইন্সটিটিউশন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা বর্তমানে বিদ্যাসাগর কলেজ নামে পরিচিত।

খ) নারী শিক্ষায় ভুমিকাঃ বিদ্যাসাগর বুঝেছিলেন সমাজে নারীদের যদি শিক্ষিত করা না যায় তাহলে নারীদের সার্বিক অগ্রগতি হতে পারে না। সেইকারণে নারী শিক্ষা প্রসারে তিনি উদ্যোগী হয়েছিলেন। যেমন Drink Water Bethune এর পৃষ্ঠপোষকতায় তিনি হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, এছাড়াও ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেছিলেন। প্রায় এক হাজার তিনশো ছাত্রী এই বিদ্যালয়গুলিতে পড়াশুনা করত।

গ) মাতৃভাষায় শিক্ষাদানঃ মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের উপর বিদ্যাসাগর প্রথম থেকেই জোর দিয়েছিলেন। তবে একই সঙ্গে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার গুরুত্বকে অস্বীকার করেননি। এরই পাশাপাশি তিনি প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমন্বয়ের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছিলেন।

ঘ) পাঠ্যপুস্তক রচনাঃ শুধুমাত্র বিদ্যালয় স্থাপন নয়, পাঠ্যপুস্তক রচনার দায়িত্বও তিনি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন। বর্ণপরিচয়, শিশুশিক্ষা, কথামালা, নীতিবোধ চরিতাবলি সহ সংস্কৃত শিক্ষার সুবিধার জন্য সংস্কৃত ব্যাকরণের উপক্রমণিকা ও ব্যাকরণ কৌমুদী প্রভৃতি রচনা করেন। এছাড়াও আখ্যান মঞ্জরি, শব্দ মঞ্জরি, শ্লোক মঞ্জরি, ব্রজবিলাস, রত্নপরীক্ষা প্রভৃতি বই রচনা করেন যা বাংলা ও সংস্কৃত শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উথেছিল। এছাড়াও সীতার বনবাসের মতো গ্রন্থ রচনার মাধ্যমে তিনি বাংলা গদ্য লেখার নতুন পথ রচনা করেছিলেন। রবীন্দ্রনাথের কাছে তিনি ছিলেন ‘বাংলা ভাষার প্রথম যথার্থ শিল্পী।‘

ঙ) নিয়মকানুন তৈরিঃ শিক্ষার কাজে তিনি বেশকিছু নিয়ম কানুন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। কেবলমাত্র ব্রাহ্মণ ও বৈদ্য সন্তানরা সংস্কৃত পরতে পারবে এই নীতি তুলে দিয়ে সকল বর্ণের হিন্দু ছাত্রদের জন্য সংস্কৃত পড়ার দ্বার খুলে দেন তিনি। এছাড়াও শিক্ষকদের ইচ্ছামতো আসা ও যাওয়া বন্ধ করে নতুন নিয়ম কানুন বলবত করেছিলেন তিনি। পাশাপাশি শুভদিন অনুসারে ছুটির দিন তুলে দিয়ে রবিবার ছুটির নীয়ম চালু করেন।

Class 11 English syllabus wbchse 2021 এর সন্মন্ধে জানতে এখানে ক্লিক করুন।   

 

শিক্ষা গ্রহনের মাধ্যমে যে শুধু নিজেই বিদ্যার সাগর হয়েছেন তা নয় তিনি চেয়েছেন সমাজের প্রতিটি মানুষ উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উথুক, বিশেষত মেয়েদের শিক্ষার প্রতি তিনি একটু বিশেষ নজরই দিয়েছিলেন। তিনি চেয়েছিলেন মেয়েরাও উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে নিজেদের পুরুষের সমতুল্য করে তুলুক, যে ক্ষেত্রে তিনি বিশেষ সফলতাও পেয়েছেন। এই কারনে কখনই বাংলা তথা ভারতের শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভুমিকা কে অস্বীকার করা যায় না।

আরো পড়ুন “The place of art in education” By Nandalal Bose Class XI Short question and answers part1

 

আজকের এই পোস্টে আমরা শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা সন্মন্ধে বিশদভাবে জানলাম, এর পরবর্তী একটি আর্টিকেলে আমরা বিদ্যাসাগরের সমাজ সংস্কার নিয়ে আলোচনা করবো। যার জন্য তোমাদের নিয়মিত ভিসিট করতে হবে https://artsschool.in এর এই ব্লগে।

অবশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে এই পোস্টটি পড়ার জন্য। এভাবেই চিরদিন https://artsschool.in এর এই ব্লগের পাশে থাকুন যাতে ভবিষ্যতে আরো উন্নত মানের Study material & Notes আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারি। একটাই অনুরোধ করবো নিয়মিত আমাদের এই ব্লগে Visit করুন এবং নিজের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!