হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল? হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি সম্পর্কে যা জানো লেখ?
হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি; হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি ছিল ভারতের সর্বাপেক্ষা বৃহৎ দেশীয় রাজ্য। এই রাজ্যের অধিকাংশ প্রজা ছিল হিন্দু এবং শাসক নিজাম ছিলেন মুসলিম। নিজামের অপশাসন ও শোষণের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা লাভের পর হায়দ্রাবাদকে ভারতের অন্তর্ভুক্ত করার জন্য নিজাম ওসমান আলি খানের কাছে ভারত সরকার আবেদন করে। কিন্তু নিজাম হায়দ্রাবাদের জনগণ ও ভারতের কথায় কর্ণপাত না করে স্বাধীন থাকার সিদ্ধান্ত নেন।
কিন্তু ভারতের নিরাপত্তা ও সংহতির কারনে হায়দ্রাবাদের স্বাধীন সত্ত্বা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া সম্ভব ছিল না বলে ভারত সরকারের পক্ষ থেকে বারংবার চেষ্টা করা হয় হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করাতে। এর ফলে বিভিন্ন কঠিন পরিস্থিতি পার করে হায়দ্রাবাদকে (হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি ) ভারতভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করানো সম্ভবপর হয়েছিল। যেগুলি হল –
নিজামের কার্যকলাপঃ
হায়দ্রাবাদের নিজাম কাশিম রেজভি নামে এক সাম্প্রদায়িক ব্যক্তির সাহায্যে রাজাকার নামে এক উগ্র সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাহিনি গঠন করে তার হিন্দু প্রজাদের উপর অত্যাচার চালাতে থাকেন এবং ভারত সীমান্ত আক্রমণের হুমকি দেন। পাকিস্তান থেকে অস্ত্রশস্ত্র আসতে থাকে এবং রিজভি মুসলিম জনগণকে জেহাদ ঘোষণার আহ্বান জানান যার ফলে হায়দ্রাবাদে এক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
হায়দ্রাবাদে বিদ্রোহঃ
১৯৪৬ খ্রিষ্টাব্দে হায়দ্রাবাদ রাজ্যের তেলেঙ্গানায় কৃষকরা নিজামের কুশাসন ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৭ই আগস্ট হায়দ্রাবাদ রাজ্য কংগ্রেস প্রশাসনের গনতন্ত্রীকরনের জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন শুরু করে। নিজাম ২০ হাজার সত্যাগ্রহীকে বন্দী করে যার ফলে পরিস্থিতি আরো অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।
ভারত সরকার কর্তৃক সেনাবাহিনী প্রেরণঃ
বিভিন্ন কারনে যখন হায়দ্রাবাদের এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় ঠিক তখন সেই পরিস্থিতিতে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের সেপ্টেম্বর মাসে ভারত সরকার হায়দ্রাবাদের নিজামকে এক চরমপত্র দেয়। ভারত সরকার অন্যান্য দাবীর সঙ্গে অত্যাচারী রাজাকার বাহিনী ভেঙ্গে দেওয়ার দাবী জানায়।
নিজাম তখন ভারতের দাবী উপেক্ষা করলে ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দের ১৩ই সেপ্টেম্বর জেনারেল জয়ন্তনাথ চৌধুরীর নেতৃত্বে ভারতীয় সেনাবাহিনী হায়দ্রাবাদে প্রবেশ করে। ভারত ১৮ই সেপ্টেম্বর হায়দ্রাবাদ রাজ্য দখল করে। অতঃপর সেখানে গণভোটের আয়োজন করা হলে অধিকাংশ প্রজা ভারতভুক্তির পক্ষে সন্মতি দেয়। নিজাম জাতিপুঞ্জে আবেদনের কথা বললেও শেষ পর্যন্ত তিনি ভারত ভুক্তির দলিলে স্বাক্ষর করতে বাধ্য হন।
হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি ভারতের পক্ষে অত্যন্ত জরুরি ছিল। ১৯৫৬ খ্রিষ্টাব্দে ভাষাভিত্তিক রাজ্য পুনঃগঠনের সময় হায়দ্রাবাদ রাজ্যকে তিনটি অংশে ভাগ করা হয় এবং এই অংশগুলোকে অন্ধ্র, বোম্বাই, মহীশূর রাজ্যের সঙ্গে যুক্ত করা হয়।
বিঃদ্রঃ হায়দ্রাবাদ রাজ্যটি কীভাবে ভারতভুক্ত হয়েছিল? হায়দ্রাবাদ রাজ্যের ভারতভুক্তি সম্পর্কে যা জানো লেখ? মাধ্যমিক ইতিহাসের বিশ শতকের প্রথম পর্ব অধ্যায়ের এই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ মতে এবং তার সাথে কিছু পাঠ্য বইয়ের ও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তাই আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থাকে আমাদের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়।