Menu

বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর মান – ৩

বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর; আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হল মাধ্যমিক প্রাকৃতিক ভূগোলের বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর যা তোমাদের আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষ সহায়ক হবে, তাই বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর এর এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পরে নিতে হবে।

 

বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর

মাধ্যমিক ভূগোল

বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর (প্রতিটি প্রশ্নের মান -৩)

১) ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্ষুব্ধমন্ডল বলা হয় কেন?

উত্তরঃ ট্রপোস্ফিয়ার বায়ুমণ্ডলের সর্বনিম্ন স্তর। এই স্তরটি সমুদ্র সমতল থেকে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ১৮ কিমি এবং মেরু অঞ্চলে ৮ কিমি পর্যন্ত বিস্তৃত। পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের মোট গ্যাসীয় পদার্থের প্রায় ৭৫% এবং সমস্ত জলীয় বাষ্প ও ধূলিকণা এই স্তরেই অবস্থিত। বায়ুমণ্ডলের জলীয় বাষ্প ধূলিকণাকে আশ্রয় করেই মেঘ সৃষ্টি করে। জলীয় বাষ্পের উপস্থিতির কারণে ঝড়ঝঞ্জা, বজ্রবৃষ্টিপাত ইত্যাদি সবকিছুই ট্রপোস্ফিয়ারেই দেখা যায়। আবহাওয়া সংক্রান্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ এই স্তরের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে বলে ট্রপোস্ফিয়ারকে ক্ষুব্ধমন্ডল বলা হয়।

২) অ্যালবেডো কী?

উত্তরঃ আমাদের পৃথিবীর আলো ও উত্তাপের প্রধান উৎস সূর্য। সূর্য থেকে যে তাপ তরঙ্গ রূপে বিকিরিত হয় বা বায়ুমণ্ডল ভেদ করে ভূপৃষ্ঠের দিকে আসে। একে আগত সূর্যকিরণ বলে। যার কিছু অংশ কার্যকরী সৌর বিকিরণ ও বাকি অংশ মানে মোট সৌর কিরণের ৩৪% অ্যালবেডো নামে পরিচিত অর্থাৎ অ্যালবেডো বলতে বোঝায় পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলের দ্বারা প্রতিফলিত হয়ে ফিরে যাওয়া সৌর বিকিরণ। ঘন মেঘ ও তুষার ক্ষেত্রে নির্গত অ্যালবেডোর পরিমাণ অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি হয়।

৩) বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণগুলি কী কী?

উত্তরঃ বায়ুমণ্ডল তথা পৃথিবীর তাপমাত্রা বৃদ্ধির প্রক্রিয়াকে বিজ্ঞানীরা বিশ্ব উষ্ণায়ন আখ্যা দিয়েছেন। এই বিশ্ব উষ্ণায়নের কারণগুলি হল-

ক) বাতাসে গ্রিন হাউস গ্যাসের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়া। যেমন – কার্বন ডাই অক্সাইড, মিথেন, CFC, নাইট্রাস অক্সাইড ইত্যাদি গ্রিন হাউস গ্যাস বৃদ্ধি।

খ) অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃক্ষ ছেদন করা।

গ) এসি, রেফ্রিজারেটর ইত্যাদি CFC গ্যাস নির্গতকারী বৈদ্যুতিক সামগ্রী ব্যবহার।

ঘ) কলকারখানা ও যানবাহন থেকে নির্গত হওয়া ধোঁয়া।

ঙ) জীবাশ্ম জ্বালানির দহন।

চ) এছাড়াও জনবিস্ফোরণ, নগরায়ন, শিল্পায়ন ইত্যাদি কারণেও গ্লোবাল ওয়ার্মিং বা বিশ্ব উষ্ণায়ন হয়ে থাকে।

৪) গর্জনশীল চল্লিশা কাকে বলে?

উত্তরঃ উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমাবায়ু দক্ষিণ গোলার্ধে ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু গর্জনশীল চল্লিশা বা গর্জনকারী চল্লিশা নামে পরিচিত। উত্তর গোলার্ধের তুলনায় দক্ষিণ গোলার্ধে জলভাগের আধিক্য থাকায় বাতাস বাধাপ্রাপ্ত হয় না এবং প্রবলবেগে প্রবাহিত হয়। তাই, দক্ষিণ গোলার্ধে পশ্চিমাবায়ুকে ‘সাহসী পশ্চিমাবায়ু’ বলে। ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশে পশ্চিমাবায়ু দ্রুতগতিতে সশব্দে প্রবাহিত হওয়ায় ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ অক্ষাংশকে গর্জনকারী চল্লিশা বলে।

৫) বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল কাকে বলে?

উত্তরঃ জলীয় বাস্পপূর্ন বায়ু ভূপৃষ্ঠের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় কোনো পর্বতগাত্রে বাধা পেলে, তা পর্বতের ঢাল বেয়ে ওপরে ওঠে এবং প্রসারিত  ও শীতল হয়। এইভাবে ঘনীভূত হয়ে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস পর্বতের প্রতিবাত ঢালে প্রচুর পরিমানে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায়। এই বাতাস যখন পর্বতশীর্ষ অতিক্রম করে বিপরীত ঢাল বেয়ে নীচে নামে তখন বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কমে যায়। এছাড়াও নিম্নগামী বায়ুর উষ্ণতা বৃদ্ধির সাথে সাথে জলীয় বাষ্পের ধারণ ক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৃষ্টিপাত তেমনভাবে হয় না। এইজন্য বিপরীত বা অনুবাত ঢালে ‘বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল’ বা কম বৃষ্টিপাতের অঞ্চল সৃষ্টি হয়।

৬) তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলি কী কী?

উত্তরঃ তুন্দ্রা জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলি হল-

ক) অত্যধিক ঠাণ্ডা ও প্রবল তুষারপাত তুন্দ্রা জলবায়ুর প্রধান বৈশিষ্ট্য।

খ) তুন্দ্রা অঞ্চলে শীতকাল অত্যন্ত শীতল ও দীর্ঘস্থায়ী এবং তাপমাত্রা সবসময়েই হিমাঙ্কের নীচে থাকে (-২০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে -৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস)।

গ) এই অঞ্চলে গীষ্মকাল শীতল ও স্বল্পস্থায়ী এবং গ্রীষ্মের সর্বোচ্চ উষ্ণতা মাত্র ১০ ডিগ্রী সেলসিয়াস।

ঘ) তুন্দ্রা অঞ্চলে গীষ্মকালীন বৃষ্টিপাত ২৫ সেমি এর মতো হয়। শীতকালে প্রবল তুষারপাত ও তুষারঝড় হয়।

ঙ) এই অঞ্চলে শীতকাল অন্ধকারাচ্ছন্ন। একটানা অন্ধকার রাতে সুমেরু ও কুমেরুপ্রভা দেখা যায়।

৭) পৃথিবীর সমস্ত মরুভূমি মহাদেশের পশ্চিমভাগে অবস্থিত কেন?

উত্তরঃ আয়নবায়ু উচ্চ অক্ষাংশের শীতলতর স্থান থেকে নীচু অক্ষাংশের উষ্ণতর স্থানের দিকে প্রবাহিত হয়। নিরক্ষরেখার দিকে এই বায়ু যত এগিয়ে যায় উষ্ণতা বৃদ্ধি পাওয়ার সাথে সাথে বায়ুর জলীয় বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতাও বৃদ্ধি পায়। এর ফলে জলীয় বাষ্প ঘনীভূত না হওয়ায় এই বায়ুতে সাধারণত বৃষ্টিপাত হয় না। এই কারনে এই বায়ুর প্রবাহপথে মহাদেশগুলির পশ্চিমে পৃথিবীর অধিকাংশ মরুভূমিগুলি অবস্থিত।

যেমন- উত্তর আফ্রিকার সাহারা, দক্ষিণ আফ্রিকার কালাহারি ও দক্ষিণ আটাকামার মরুভূমিগুলি এই বাতাসের প্রবাহপথেই অবস্থিত।

৮) নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রতিদিন বিকালে বৃষ্টি হয় কেন? অথবা 4’O clock Rain বলতে কী বোঝ?

উত্তরঃ ভূপৃষ্ঠ অধিক উষ্ণ হলে, পরিচলন পদ্ধতিতে জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উপরে উথে যায়। এই বাতাস শীতল বায়ুর সংস্পর্শে এসে শীতল ও ঘনীভূত হয়ে পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটায়। নিরক্ষীয় অঞ্চলে সূর্যরশ্মি লম্বভাবে পড়ে বলে এবং জলভাগের পরিমাণ বেশি বলে বায়ুতে জলীয় বাষ্পও বেশি থাকে। তাই দিনের বেলা নিরক্ষীয় অঞ্চলের জলীয় বাষ্পপূর্ণ বাতাস উষ্ণ ও হালকা হয়ে ওপরে উঠে শীতল হয় এবং ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিরূপে নেমে আসে। এই কারণেই নিরক্ষীয় অঞ্চলে প্রায় প্রতিদিন বিকেলে বৃষ্টিপাত হতে দেখা যায় যাকে 4’O clock Rain ও বলা হয়ে থাকে।

 

Read More বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের সংক্ষিপ্ত প্রশ্নোত্তর – মাধ্যমিক ভূগোল।

 

অবশেষে আপনাকে/তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর গুলি পুরোপুরি পড়ার জন্য; এভাবেই www.artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তর গুলির মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যমিক ভূগোলের প্রশ্নোত্তর গুলি তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি এবং সেগুলো পরে তোমরা তোমাদের আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুতি নিতে পারো।

 

বিঃদ্রঃ আজকের এই বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তরগুলি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকের পরামর্শ মেনে যদিও তার সাথে সাথে সাথে কিছু পাঠ্য বইয়েরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। তাই বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের ব্যাখ্যামূলক প্রশ্নোত্তরগুলি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তবে আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!