Menu

আইনের উৎস গুলি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করো

আইনের উৎস; আইনের সংজ্ঞা দাও; আজকের আমাদের আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় WBCHSE Board Of West Bengal একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞানের চতুর্থ অধ্যায়ের তথা আধুনিক রাজনীতির মৌলিক ধারণাসমূহ অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন তোমাদের আগামী পরীক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ, প্রশ্ন টি হল- আইনের সংজ্ঞা দাও, আইনের উৎস গুলি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করো। পুরো প্রশ্নের  উত্তরটি ভালো করে পড়ে নিও এবং যদি সম্ভব হয় তোমাদের নোটবুকে উত্তর টিকেট করে নিতে পারো।

প্রশ্নঃ আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের উৎস গুলি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করো।

 

উত্তরঃ সাধারণ অর্থে আইন হলো কিছু নিয়মকানুন বা বিধি-নিষেধ  যা সকলকেই মেনে চলতে হয়।  তবে আইনের সংজ্ঞা নিয়ে রাষ্ট্র বিজ্ঞানীদের মধ্যে যথেষ্ট মতপার্থক্য রয়েছে।  গ্রিনের মতে আইন হলো অধিকার ও কর্তব্যের ব্যবস্থা রাষ্ট্র কার্যকর করে।  অস্টিন এর মতে আইন হলো সার্বভৌমের নির্দেশ।  হল্যান্ডের মত অনুযায়ী সার্বভৌম রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ করতে উপযুক্ত মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী সাধারণ নিয়মই হল আইন।  উড্রো উইলসনের কাছে আইন হলো এমন কিছু চিন্তাও অভ্যাসের সমষ্টি সরকার কর্তৃক নির্দিষ্ট লিখিত,  বিধিবদ্ধ এবং সরকার কর্তৃক যা কার্যকর করা হয়।  লেক্সি আইনকে সমাজের অধিকার ভোগের শ্রেণীর স্বার্থবাহী নিয়মকানুন বলে চিহ্নিত করেছেন।

আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের উৎসগুলি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করো।
আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের উৎসগুলি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করো।

উপরিউক্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানীদের বক্তব্য ও মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে আইনের যে সহজবোধ্য ও গ্রহণযোগ্য সংজ্ঞা প্রদান করা যায় তা হল –  আইন হলো রাষ্ট্র কর্তৃক সৃষ্ট ও আরোপিত সুনির্দিষ্ট নিয়ম কানুন রাষ্ট্রের মধ্যে অবস্থিত সমস্ত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মেনে চলতে বাধ্য এবং যা অমান্য করলে রাষ্ট্র তাকে শাস্তি দিতে পারবে।

এই প্রসঙ্গে আইনের উৎস গুলি আলোচনা করা প্রয়োজন।  সাধারণ অর্থে রাষ্ট্রকেই আইনের একমাত্র উৎস বলে অনেকে মনে করেন।  আইন শাস্ত্রের ইতিহাস এবং বিভিন্ন যুগে আইনের প্রকৃতি বিশ্লেষণ করলে বোঝা যায় আইন ব্যবস্থা রাতারাতি যেমন গড়ে ওঠেনি তেমনি সমাজ পরিবর্তনের সঙ্গে সামঞ্জস্য বিধান করে আইন প্রণীত হয়েছে।  বর্তমানে আইনসভা আইনের প্রধান উৎস স্থল হলেও এ কথা মনে রাখতে হবে যে আইনের উৎস আছে।  যে গুলি হল –

আইনের উৎস হিসাবে প্রথাঃ

প্রথা হল আইনের প্রাচীনতম উৎস।  প্রাচীনকাল থেকে চলে আসা রীতিনীতি আচার-আচরণকে প্রথা বলা হয়।  কোন এক সময় কোন এক ব্যক্তি বিশেষ একটি  রীতি সমাজে প্রবর্তন করেছিল।  পরবর্তী সময়ে যখন সমাজের অনেকেই সেই রীতি অনুসরণ করতে থাকে তখন তাকে বলা হয় প্রথা।  রাষ্ট্রীয় আইন তৈরি হওয়ার আগেই এই প্রথা ছিল আইনের একমাত্র উৎস।  প্রাচীনকালে পরিবারকেন্দ্রিক বা গোষ্ঠী কেন্দ্রিক জীবনে বিরোধ দেখা দিলে পরিবারের প্রধান বা গোষ্ঠীর প্রধান প্রচলিত প্রথা অনুসারে সেইসব বিরোধের নিষ্পত্তি করতে পারতেন।  সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই আচার-আচরণ ইত্যাদি জনসমর্থন অর্জন করতে সক্ষম হয় এবং পরবর্তীকালে সেগুলি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতির মাধ্যমে আইনের মর্যাদা পায়।  এই কারণে প্রথাকে আইনের প্রাচীনতম উৎস বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে।

আইনের উৎস হিসাবে ধর্মঃ

আইনের অন্যতম আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস হলো ধর্ম।  প্রাচীন সমাজ ব্যবস্থা মূলত ধর্মীয় অনুশাসনের মাধ্যমে পরিচালিত হতো।  আদিম সমাজে যখন সভ্যতার আলো পৌঁছে নি তখন মানুষের আচার-আচরণ নিয়ন্ত্রণ করে সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার প্রয়োজনে যে ধর্মীয় অনুশাসন সৃষ্টি হয়েছিল সেগুলি পরবর্তীকালে প্রাচীন সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা ও নিয়মানুবর্তিতা প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়েছিল।  ধর্ম মানুষকে আইন মানতে প্রাথমিক শিক্ষা দিয়ে থাকে।  তাই আজও কিছু কিছু ধর্মীয় অনুশাসন আইনের অন্যতম উৎস।  ভারতবর্ষে অনেক হিন্দু মুসলিম আইন যেমন-  উত্তরাধিকার সংক্রান্ত  আইন,  বিবাহ সংক্রান্ত আইন প্রচলিত রয়েছে যার উৎস ধর্ম।  প্রাচীন সভ্যতা গুলির এবং রোমের আইনের প্রধান উৎস হলো ধর্ম।  সুতরাং আইনের অন্যতম প্রধান উৎস হিসেবে ধর্মের ভূমিকা কে কখনোই অস্বীকার করা যায় না।

বিচারালয়ের রায়ঃ

আদিম সমাজে মানুষের জীবন জটিল আকার ধারণ করলে বিভিন্ন সমস্যা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে।  এই অবস্থায় বিভিন্ন সমস্যার সমাধান না করলে সমাজ জীবনে শৃঙ্খলা দেখা দিতে পারে- এই আশঙ্কায় দলপতি,  গোষ্ঠীপতি,  রাজা বা সমাজের যারা জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিরা ছিলেন তারা এই সমস্যার সমাধানে বিরোধের নিষ্পত্তি রানে এগিয়ে আসেন।  এর ফলে উদ্ভব হয় বিচার ব্যবস্থা।  এই সময় বিচারপতিরা কেবলমাত্র প্রথমে অনুশাসন প্রয়োগ করে দ্বন্দ্বের মীমাংসা করতেন তা নয়,  অনেক সময় তারা নিজেদের বিচারবুদ্ধির প্রয়োগ করে ধন্ডবা বিরোধের মীমাংসা এগিয়ে আসতেন।

এইভাবে বিচারালয়ের রায় পরবর্তীকালে বিচারে আইন হিসেবে গণ্য হতে থাকে।  বিচারকগণ আইনের ফাঁকফোকর অস্পষ্টতা দূর করতে বিভিন্ন প্রচেষ্টা গ্রহণ করেন যেমন পরিস্থিতির গুরুত্ব অনুযায়ী তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন।  সেই সিদ্ধান্ত পরবর্তীকালে সবক্ষেত্রে অনুসরণ করা হতো।  প্রকৃত অর্থে বিচারালয়ের আইন অপূর্ণতাকে পূর্ণ করে,  পুরনো আইনকে নতুন ভাবে ব্যাখ্যা করে এবং পরবর্তীকালে বিচারের রায় দানকালে তার নজির হিসেবে ব্যবহার করে।  এইভাবে বিচারালয়ের রায় পরবর্তী সময়ে আইনে পরিণত হয়।  এইজন্য বলা হয় যে বিচারের রায় আইন সৃষ্টির অন্যতম প্রধান একটি উৎস।

ন্যায় বিচার বা ন্যায়নীতিঃ

অনেকে ন্যায়-নীতি বা ন্যায়বিচারকে আইন সৃষ্টির অন্যতম উৎস বলে মনে করেন।  নেয় নীতি হলো সততা ও বিচারবুদ্ধি অনুসারে বিচার করা।  ন্যায় প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে তোলা হলো বিচারপতিদের প্রধান কাজ।  অনেক সময় বিচার কাজ সম্পাদন করতে গিয়ে বিচারপতিরা দেখেন যে কোনো বিশেষ ধরনের মামলা সম্পর্কে আইনের সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশ নেই বা প্রচলিত আইন সমাজের নেয় নীতিবোধের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন।  এই অবস্থায় বিচারপতিরা তাদের নিজেদের বিবেক-বুদ্ধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট মামলার রায়ে দান করেন যা নতুন আইনের দৃষ্টিতে গতিশীল করে তোলে।

বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনাঃ

অনেকে  প্রাচীন ও আধুনিক বিভিন্ন আইন এর গ্রন্থ এবং আইন এর বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা আইনের অন্যতম উৎস বলে মনে করেন।  অনেক সময় আইনের অর্থ নিয়ে মতপার্থক্য দেখা দিতে পারে।  অনেক সময় সমাজের পরিবর্তন সাধিত হওয়ার ফলে প্রচলিত আইন সেই সমাজের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ হয়ে পড়তে পারে।  এরূপ অবস্থায় আইনের প্রকৃতি ব্যাখ্যা প্রদানের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয় যা আইনজ্ঞ পণ্ডিতরা আইন বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ পুস্তক রচনা করেন এবং বিভিন্ন টীকাভাষ্য আলোচনা প্রভৃতির মাধ্যমে আইনের প্রকৃত অর্থ প্রকাশ করেন।  আইনজ্ঞদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা বিচারের ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হয়। উদাহরন হিসেবে আমরা ভারতীয় আইনে মনুসংহিতা,  যুক্তরাজ্যে কুক ও ব্ল্যাক স্টোন,  মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কেন্ট  প্রমূখ আইনবিদদের অভিমতকে আইনের অন্যতম উৎস বলে স্বীকৃতি প্রদান করে থাকে।

আইনের উৎস হিসাবে আইনসভাঃ

আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় আইনসভা কর্তৃক আইন প্রণয়ন কে আইনের সর্ব প্রধান উৎস বলে অনেকে মনে করেন। গিলক্রিস্ট এই মতের সমর্থক। আইনসভার সদস্যদের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নির্দিষ্ট পদ্ধতি মাফিক আইন সভার মাধ্যমে আইন তৈরি করেন যা দেশের আইন হিসেবে কাজ করে। এই কারণে আইনসভাকে আইন সৃষ্টির প্রধান উৎস বলে মনে করা হয়।

সবশেষে মন্তব্য করা যায় যে আইনের উৎস হিসেবে, প্রথা, ধর্ম, বিচারালয়ের সিদ্ধান্ত,  নেয় নীতি ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ বলে বিবেচিত হলেও আইনের ক্রমবিকাশে তারা কখন কিভাবে সাহায্য করেছে সে বিষয়ে কোনো সুনির্দিষ্ট অভিমত ব্যক্ত করা সম্ভব হয় না।  তবে প্রাচীনকালে প্রথা এবং ধর্ম একই সময়ে আইনের উৎস বলে বিবেচিত হলেও বর্তমানে আইনের ওপর ধর্ম অপেক্ষা প্রথার প্রভাব অনেক বেশি বলে বিবেচনা করা হয়।

আরো পরবর্তীকালে বিচারব্যবস্থার সিদ্ধান্ত নেয় নীতি আইনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উৎস হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।  আধুনিককালে উপযুক্ত প্রথা,  ধর্ম বিচারালয় সিদ্ধান্ত নেয় নীতি ইত্যাদি ছাড়াও আইনজ্ঞ ব্যক্তিদের বিজ্ঞানসম্মত আলোচনা এবং আইনসভা আইনের প্রধান উৎস বলে বিবেচনা করা যায়।  আধুনিক কালে  প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সময়ে তাই আইনসভা যেহেতু জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে গঠিত হয় সেহেতু আইনসভা জনকল্যাণকর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে আইন তৈরি করে যার ফলে উৎস হিসেবে প্রথা, ধর্মগ্রন্থ প্রভৃতির যেমন গুরুত্ব পেয়েছে তেমনি আইনসভা আইনের প্রধান উৎস হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

 

আরো পড়ুন কার্যকারণ সম্পর্কে প্রসক্তি তত্ত্ব বা অনিবার্য মতবাদ ব্যাখ্যা ও বিচার করো।

 

আমাদের www.artsschool.in এই ব্লগের আজকের আর্টিকেলটি তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে, যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি;  তাই আজকের এই আইনের উৎসগুলি সম্বন্ধে যা জানো লেখ অথবা আইনের সংজ্ঞা দাও প্রশ্নটির উত্তর নিয়ে তোমাদের যদি কারো কোন সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ইমেইল করো [email protected]  এই ঠিকানায়;  আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনাদের সমস্যা দূরীকরণে.  ধন্যবাদ.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!