আধুনিক শিক্ষার প্রসার; মাধ্যমিক ইতিহাসের সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আধুনিক শিক্ষার প্রসার। যেখানে দেখানো হয়েছে কিভাবে প্রাচীন ভারতে আধুনিক ইউরোপিয়ান শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন হয়েছিল, এবং এই আধুনিক শিক্ষার প্রসারে কোন কোন ব্যক্তি এবং প্রতিষ্ঠান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল। আমাদের আজকের আর্টিকেল এর আলোচ্য বিষয় হল আধুনিক শিক্ষার প্রসার, যেটা তোমরা তোমাদের নোটবুকে নোট করে নিতে পারো ভবিষ্যতে পড়ার জন্য।
মাধ্যমিক ইতিহাস সংস্কার বৈশিষ্ট্য ও পর্যালোচনা
আধুনিক শিক্ষার প্রসার
1900 সাল থেকে ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রসারের মাধ্যমে, ইংরেজি ও নারী শিক্ষার প্রসার ঘটে. বেসরকারি ও সরকারি উভয় দিক থেকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নেয়া হয়।
১) প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্বঃ
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রথমদিকে ভারতে আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে উদ্যোগ গ্রহণ করেনি। পরবর্তীকালে সরকারের জনশিক্ষা কমিটির সদস্যরা প্রাচ্যবাদী ও পাশ্চাত্য বাদী নামে দুটি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্য শিক্ষাদানের পক্ষপাতী ছিলেন। অন্যদিকে পাশ্চাত্য বাদীরা ভারতে পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের দাবি জানান। এর ফলে প্রাচ্য পাশ্চাত্য শিক্ষা বিষয়ক দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
২) চুইয়ে পড়া শিক্ষা নীতিঃ
জনশিক্ষা কমিটির সভাপতি মেকলে ভারতে ইংরেজি ও আধুনিক পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষে মত প্রকাশ করেন। তিনি বলেন যে, এদেশের উচ্চ ও মধ্যবিত্ত দের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষার প্রসার ঘটে তা উচ্চ ও মধ্যবিত্ত স্তর থেকে ক্রমশ সাধারন দেশবাসীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে। আধুনিক শিক্ষা ওপর থেকে নিচে ছড়িয়ে পড়ার এই নীতি চুইয়ে পড়া নীতি বা নিচে ছড়িয়ে পড়া পরিস্রুত নীতি নামে পরিচিত।
৩) ইংরেজি শিক্ষার প্রসারঃ
ভারতে ব্রিটিশ শাসন অফিস-আদালত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রভৃতির প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে এদেশে ইংরেজি জানা যুবক দেহের চাহিদা ক্রমে বাড়তে থাকে। এর ফলে প্রথমে বেসরকারি এবং পরে সরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। লন্ডন মিশনারি সোসাইটি, চার্চ মিশনারি সোসাইটি, ব্যাপ্টিস্ট মিশনারি প্রভৃতি মিশনারি গোষ্ঠী, রাজা রামমোহন রায়, রাধাকান্ত দেব, দ্বারকানাথ ঠাকুর প্রমুখের উদ্যোগে বিভিন্ন ইংরেজি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। এরূপ কয়েকটি উল্লেখযোগ্য ইংরেজি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হল, জেনারেল অ্যাসেম্বলিজ ইন্সটিটিউশন, বিশব কলেজ, সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ, অ্যাংলো হিন্দু কলেজ, হিন্দু কলেজ, পটলডাঙ্গা একাডেমি প্রভৃতি।
৪) নারী শিক্ষায় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরঃ
হাজার 900 তোকে বাংলায় নারী শিক্ষার প্রসারে সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেন বাংলার ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। বিদ্যাসাগর মহাশয় ড্রিঙ্কওয়াটার বিটন অথবা বেথুন সাহেব উদ্যোগে কলকাতায় হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় (১৮৪৯খ্রিঃ) প্রতিষ্ঠা করেন। ভারতে এটি ছিল প্রথম বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যাসাগর আঠারোশো সাতান্ন খ্রিস্টাব্দে বর্ধমান জেলায় মেয়েদের জন্য একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগ নিয়ে 1858 খ্রিস্টাব্দের মে মাসের মধ্যে নদিয়া বর্ধমান হুগলি ও মেদিনীপুর জেলায় মোট 35 টি বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন।
৫) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায়ঃ
বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন, যাকে ভারতের প্রথম আধুনিক মানুষ হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়ে থাকে। তিনি প্রথম বুঝতে পারেন ভারতীয় যুবকদের পাশ্চাত্য অর্থাৎ ইংরেজি শিক্ষায় শিক্ষিত না হয়ে ওটা ছাড়া আর উপায় নেই। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতের শিক্ষার জন্য বার্ষিক এক লক্ষ টাকা ব্যয়ের সিদ্ধান্ত নিলে রামমোহন এই অর্থ আধুনিক বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষার প্রসারের জন্য ব্যযয়ের দাবি জানান। পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে তিনি মিডিয়ার আলেকজান্ডার ডাফ প্রমুখ ব্যক্তিকে নানাভাবে সহায়তা করেন।
৬) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাধাকান্ত দেবের ভূমিকাঃ
বাংলায় পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে রাজা রামমোহন রায়ের পাশাপাশি রাধাকান্ত দেব এর অবদানও বিশেষ উল্লেখযোগ্য। হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠার বিশেষ ভূমিকা ছিল। তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে প্রতিষ্ঠিত স্কুল বুক সোসাইটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এবং ক্যালকাটা স্কুল সোসাইটি সদস্য ছিলেন। নারী শিক্ষার ক্ষেত্রে তিনি পাশ্চাত্য শিক্ষা কে প্রাধান্য দেন।
৭) পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ডেভিড হেয়ার ওয়াটার বিটন বা বেথুন সাহেবের ভূমিকাঃ
পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারে ডেভিড হেয়ার ওয়াটার বিটন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন। তারাই একমাত্র ইংরেজ যারা ভারতীয়দের শিক্ষার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন এবং যারা চাইতেন ভারতীয়রা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠুক। ডেভিড হেয়ারের উদ্যোগে 1817 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় হিন্দু কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় পাঠ্যপুস্তক রচনা আর উদ্দেশ্যে তিনি স্কুল বুক সোসাইটি প্রতিষ্ঠা করেন। 1818 খ্রিস্টাব্দে কলকাতায় পটলডাঙা একাডেমী প্রতিষ্ঠা করেন যা বর্তমানে হেয়ার স্কুল নামে পরিচিত। নারী শিক্ষার প্রসারে বিভিন্ন উদ্যোগ নেন। অন্যদিকে বিটন বা বেথুন সাহেব প্রথমে বাংলা মাধ্যমে এবং পরে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষার প্রসারে গুরুত্ব দেন। তিনি মূলত নারীদের মধ্যে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসারের উদ্দেশ্যে 1847 খ্রিস্টাব্দে হিন্দু বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন যার বর্তমান নাম হয়েছে বেথুন স্কুল।
৮) কলকাতা মেডিকেল কলেজঃ
ভারতে আধুনিক ইউরোপীয় চিকিৎসাশাস্ত্র শিক্ষাদানের উদ্দেশ্য লর্ড বেন্টিক এর আমলে কলকাতায় ১৮৩৫ খ্রিস্টাব্দে কলকাতা মেডিকেল কলেজ প্রতিষ্ঠিত হয়। জাতি বর্ণ নির্বিশেষে ভারতীয় যুবকদের আধুনিক পাশ্চাত্য চিকিৎসাবিদ্যায় দক্ষ করে তোলা এবং দেশের বিভিন্ন চিকিৎসা কেন্দ্রে নিয়মিত ডাক্তার-নার্সের জোগান দেওয়া ছিল এই কলেজ প্রতিষ্ঠার প্রধান উদ্দেশ্য। মেডিকেল কলেজের বাঙালি ছাত্র মধুসূদন গুপ্ত (১৮০০-৫৬খ্রিঃ) প্রথম শব ব্যবচ্ছেদ করে এক যুগান্তকারী ঘটনা ঘটান।
৯) কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ঃ
উডের ডেসপ্যাচ এর (১৮৫৪খ্রিঃ) সুপারিশ অনুসারে ভারতের উচ্চ শিক্ষার উদ্দেশ্যে ক্যানিং এর শাসনকাল ১৮৫৭খ্রিঃ কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম আচার্য ছিলেন লর্ড ক্যানিং এবং প্রথম উপাচার্য ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি স্যার জেমস উইলিয়াম কোল্ভিল।
আরো পড়ুন আধুনিক ইতিহাস চর্চার বৈচিত্র সংক্ষেপে আলোচনা করো।
বিঃদ্রঃ আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের আধুনিক শিক্ষার প্রসার প্রবন্ধটি তৈরি করার জন্য কিছু পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে, যদিও এ ব্যাপারে আমরা কোন প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করে উঠতে পারিনি। তাই আমাদের এই আধুনিক শিক্ষার প্রসার এর আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের যদি কোনো রকম কোনো সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়. আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে। আর এভাবেই https://artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিও যাতে ভবিষ্যতেও আমরা এরকম আরো গুরুত্বপূর্ণ আর্টিকেলগুলো তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি। ধন্যবাদ।