Menu

আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর; আজকের আমাদের আলোচনার বিষয় হল আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর যেগুলো তোমাদের উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার কথা মাথায় রেখেই তৈরি করা হয়েছে। আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর গুলি বিশেষ মনোযোগ দিয়ে পরবে যাতে পরীক্ষার ৩টি প্রশ্নের একটিও আসলে ভালো ভাবে লিখে আসতে পারো।

আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর

উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

 

১. আমি দেখি কবিতায় কবি কী দেখতে চেয়েছেন ও কেন দেখতে চেয়েছেন – আলোচনা করো (আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর)

 

উত্তরঃ জীবনানন্দ পরবর্তীকালের অন্যতম উল্লেখযোগ্য আধুনিক কবি শক্তি চট্রোপাধ্যায় । কবি শক্তি চট্রোপাধ্যায়ের কবিতায় বিপন্ন নাগরিক সভ্যতার ছবির পাশাপাশি ফুটে উঠেছে তার প্রকৃতির প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা। সহজ সরল জীবন ভাবনায় কবি গাছের অপরিহার্য বা আবশ্যকীয় গুনাবলির প্রকাশ করেছেন।

শহরবাসী কবি ইট কাঠ পাথরের যান্ত্রিক সভ্যতার মধ্যে খুঁজে পেতে চেয়েছেন গ্রাম্য প্রকৃতি, স্নিগ্ধ জ্যোৎস্না। নগরজীবনের ক্লান্তি থেকে মুক্তির জন্য কবি চেয়েছেন শহরের সবুজায়ন হোক। যেদিকে চোখ যায় শুধু নিষ্প্রাণ সৌধের মিছিল। গাছের সৌন্দর্য কবির চোখে পড়েনি। গাছ দেখার জন্য তাই ব্যাকুল আবেদন কবির –

“আমার দরকার শুধু গাছ দেখা

গাছ দেখে যাওয়া……”

গাছ মানুষের পরমপ্রিয় উপকারী বন্ধু ও আদিম মাতা পিতা। দুঃখের কথা, যন্ত্রসভ্যতার সুখ সম্পদ ও বিলাস বৈভবে অন্ধ মানুষ নির্মমভাবে বন উচ্ছেদ করে শহর নগরের কংক্রিটের রাজ্য গড়েছে। সেখান থেকে চির নির্বাসিত গাছ-গাছালি তাদের শীতল ছায়া,প্রানদ বায়ু। কবি তাই ক্রোধের সঙ্গে বলেছেন – ‘ শহরের অসুখ হ্যাঁ করে কেবল সবুজ খায়।‘

 

অথচ বেঁচে থাকার জন্য গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার।, আর আরোগ্যের জন্য ওই সবুজ ভীষণ দরকার। তাছাড়া দৃষ্টিশক্তিকে সজীব ও সতেজ রাখার জন্য ‘ চোখ তো সবুজ চায়’ আর দেহ চায় সবুজ বাগান। সবুজ হল গাছের স্বতঃস্ফূর্ত প্রান উজ্জ্বলতার প্রতীক। সুতরাং নিজে বাঁচতে ও পরিবেশকে বাঁচাতে গেলে গাছ লাগানোর পরামর্শ দিয়েছেন। শহর জীবনে বাগান সবুজের অভাব পূরণ করতে পারে।

 

আরো পড়ুন শব্দার্থ পরিবর্তনের স্বরূপ আলোচনা করো

২. আরোগ্যের জন্য ঐ সবুজের ভীষণ দরকার। – আরোগ্য শব্দের অর্থ কী? উপরিউক্ত লাইনটির মধ্যে কবির কোন মনোভাব ফুটে উঠেছে আলোচনা করো।

 

উত্তরঃ আলোচ্য বর্ণময় অংশটি নেওয়া হয়েছে কবি শক্তি চট্রোপাধ্যায় বিরচিত ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে।

‘গাছের ভিতরে যদি যেতে পারি একবার জীবনে’…রস আছে, স্নেহ আছে, ভালোবাসা, বিবেচনাও আছে ও গাছ আমাকে নাও, মুহূর্তের জন্য হলেও নাও।‘

শহর আসলে যন্ত্রসভ্যতার আবাসভুমি। সভ্যতার বিকাশের পথ ধরে দিনের পর দিন অবাধে জলাভূমি বন্ধ, সবুজ ধ্বংস করে তৈরি হয়ে চলেছে ইট, কাঠ, পাথরের কৃত্রিম সভ্যতা। আর অবলীলায় গড়ে উঠেছে সেই স্থলে কলকারখানা, বহুতল আবাসন,। এভাবেই সবুজ –সজীব প্রানের বদলে, প্রাণহীন জীবন। শহরের এই অসুখে কবি মন হৃদয় শরীর ক্লান্ত-অবসন্ন। বহুদিন তিনি আস্বাদ গ্রহন করেননি গ্রামীণ সৌন্দর্য ও প্রাকৃতিক ঐশ্বর্যের।

‘গাছের সবুজটুকু শরীরে দরকার

আরোগ্যের জন্যে ঐ সবুজের ভীষণ দরকার’

নাগরিক জীবনের ধূসরতার মধ্যে কবি বসবাস করছেন। নানা কারনে অনেক দিন তার সবুজ বনানীতে যাওয়া হয়ে ওঠেনি। অরণ্যের শ্যামলিমা দুচোখ ভরে দেখা হয়নি, অন্তরাত্মা দিয়ে অরণ্যের অমিয়রস পান করা হয়নি। নগরজীবনের খোঁয়াড়ের ইট-কাঠ – বালির ধূসরতার মধ্যে আবদ্ধ আছেন। কবির স্বীকারোক্তি –

‘ বহুদিন জঙ্গলে কাটেনি দিন

বহুদিন জঙ্গলে যাইনি

বহুদিন শহরেই আছি’

অথচ কবি মন জঙ্গলের প্রতি ভালোবেসে বিশ্বাস করেন –

‘জঙ্গলের মধ্যে ঘর ঈশ্বর গড়েন।‘

গাছের সাথে শহরে জীবনের সাময়িক বিচ্ছিন্নতা কবিকে ভাবিত করে, আর্ত করে। কারন তিনি জানেন গাছ মানুষের পরম বন্ধু। গাছের সাথে মানুষের অচ্ছেদ্য সম্পর্ক। গাছ ও গাছের সবুজ মানবশরীরের খুব প্রয়োজনীয়। শরীরের রোগ প্রতিরোধ ও রোগ মুক্তির জন্য গাছের ‘ঐ সবুজ’ অত্যন্ত প্রয়োজনীয় বলে কবি মনে করেছেন।

 

আরো পড়ুন আমি দেখি কবিতার সারাংশ; উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

৩. ‘গাছ আনো, বাগানে বসাও।‘– কে, কার উদ্দেশ্যে একথা বলেছেন? কবির একথা বলার কারন কী?

 

উত্তরঃ আলোচ্য দ্যুতিময় অংশটি রবীন্দ্র পরবর্তী যুগের অন্যতম কবি শক্তি চট্রোপাধ্যায়ের ‘আমি দেখি’ কবিতা থেকে সংকলিত হয়েছে।

কবি স্বয়ং প্রকৃতি প্রেমের মোহে আবদ্ধ হয়ে ‘আমি দেখি’ কবিতার শেষ চরনে উল্লিখিত বক্তব্যটি পরিবেশন করেছেন।

কবি কার উদ্দেশ্যে করেছেন  তা অনেকটা অস্পষ্ট ভাবাবেগে প্রকাশ ব্যঞ্জনায় ব্যঞ্জিত। তবে তার নিকটাত্মীয় কোনো স্বজন বা শুভাকাঙ্ক্ষীর উদ্দেশ্যে বলেছেন বলে মনে করা যেতে পারে। আবার অনির্দেশ্য সাধারণের প্রতিও এমন মন্তব্য করা হতে পারে।

কবি শক্তি চট্রোপাধ্যায় অরণ্যপ্রেমী, বৃক্ষপ্রেমী কবি। তার কবি ধর্মের বৃহদংশ জুড়ে আছে অরণ্য ও অরণ্যের শ্যামলিমা। গাছের নিবিড় সান্নিধ্য পাবার কামনা একাধিক কবিতায় তিনি ব্যক্ত করেছেন। ‘শীতে একদিন’ কবিতায় তিনি বলেছেন –

‘শীতে আমি ছুটি বনের ভিতরে একা

গাছ পড়ে থাকে, গাছই শুধু পড়ে থাকে পড়ে।‘

নাগরিক জীবনের ধূসরতায় গাছের বড়োই অভাব। এখানকার সর্বত্রয় সবুজের তীব্র সংকট কবি উপলব্ধি করেছেন। শহরের অসুখ হ্যাঁ করে সুবুজকে গ্রাস করছে। পরিণামে সবুজের অনটন ঘটে চলেছে নিত্য – নিয়মিত।

‘শিকড়ে, বিহুল প্রান্তে, কান পেতে আছি নিশিদিন’ –

অরণ্যের শিকড়ের  অনুসন্ধানী কবি মন খুঁজে পেতে চেয়েছে সবুজ সতেজ প্রানের আঘ্রান। কৃত্রিম নগর সভ্যতার সঙ্গে সবুজের ব্যবধান কবি মানিয়ে নিতে পারেনি। শুধু বন্য প্রকৃতির থেকে পেতে চেয়েছেন শরীরের আরোগ্যের জন্য গাছের সবুজটুকু। সবুজের সেই স্নিগ্ধ মায়া মমতায় কবি মুক্তির আশ্রয় খোঁজেন, নাগরিক প্রাণহীনতার অবসাদ কাটাতে গাছগুলোকে তুলে এনে বাগানে বসাতে বলেন।

আধুনিক সভ্যতার অনেক মারনব্যাধির নিরাময় ঔষধ রয়েছে গাছের সবুজে। তাই শরীরের সতেজতা ও মনের পরিতৃপ্তির জন্য সবুজ আবশ্যক। জঙ্গল থেকে বিছিন্ন কবি শহরের বাগানের এক মুঠো সবুজের মধ্যেই পেতে চান একান্ত নির্ভরতার আশ্বাস। তার চোখ চায় সবুজ আর শরীর চায় সবুজ বাগান। কবি শুনতে চান জঙ্গলের শহরের কোলে সবুজের প্রতিধ্বনিতে মুখরিত মাদল-খঞ্জনীর আনন্দ গান।

শহরের স্বাভাবিক জীবনের জন্য শান্তি ও পরিত্রাণের খোঁজে কবির প্রার্থনা –

‘গাছ আনো, বাগানে বসাও

আমি দেখি।‘

সরল সবুজের ব্যাপ্ত স্নিগ্ধতায় শহরে জীবন সবুজে সবুজে মহাসমারোহ নিত্য নতুন সাজে বর্ণময় হয়ে উঠবে বলে কবি আশাবাদী। পরিশুদ্ধ অক্সিজেন আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দূষনমুক্ত সুস্থ সুন্দর পৃথিবী গড়ে তোলার অঙ্গীকারে কবির কাতর আবেদন কবিতার প্রথম ও শেষ পংতিতে ফুটে উঠেছে।

“গাছ তুলে আনো, বাগানে বসাও

গাছ আনো বাগানে বসাও

আমি দেখি”

Read More ‘আমি দেখি’ কবিতার গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছোট প্রশ্নোত্তর উচ্চমাধ্যমিক বাংলা

অবশেষে আপনাকে/তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর গুলি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য। এভাবেই www.artsschool.in  এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর এর মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ নোটসগুলি তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি। 

বিঃদ্রঃ আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর গুলি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষক ও পাঠ্য বইয়ের সাহায্য নিয়ে, যদিও শিক্ষকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে তবে কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভবপর হয়ে ওঠেনি। তাই আমি দেখি কবিতার বড়ো প্রশ্ন ও উত্তর গুলি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থাকে তবে আমাদের ইমেল করুন, এই ঠিকানায় [email protected] Thank You. 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!