উগ্রজাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ সম্পর্কে জানতে হলে সবার প্রথমে আমাদের তিনটি বিষয়ে পরিষ্কার জ্ঞান থাকা প্রয়োজন। যেগুলি না জানলে আমরা এদের মধ্যে সম্পর্কটাও বুঝতে পারবো না। তাই আমাদের আগে আলাদা আলাদা ভাবে জানতে হবে জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? উগ্র জাতীয়তাবাদ কাকে বলে? এবং আন্তর্জাতিকতাবাদ বলতে কি বুঝি?
তাই সবার আগে আমাদের জানা দরকার জাতীয়তাবাদ, উগ্র জাতীয়তাবাদ, ও আন্তর্জাতিকতাবাদ সম্পর্কে। আজকের উগ্রজাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ এর এই আর্টিকেলে আমরা এই তিনটি বিষয়েই পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা করবো।

তাহলে দেখে নেওয়া যাক উগ্রজাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ সম্পর্কে
১. জাতীয়তাবাদ বলতে কি বুঝি?
জাতীয়তাবাদ হল একটি ভাবগত ধারণা। ধর্ম ভাষা সাহিত্য প্রভ্রতি কারনে যখন একটি জনসমাজের মধ্যে গভীর একাত্মবোধ প্রতিষ্ঠিত হয়। আর এই একাত্মবোধের ফলে যখন এই জনসমাজের প্রত্যেকে একে ওপরের সুখদুঃখ, ন্যায় অন্যায়, মান , অপমান সব কিছুর অংশীদার বলে নিজেকে মনে করে তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়।
এই জাতীয়তাবোধের সঙ্গে দেশপ্রেম মিলিত হয়ে যখন একটি রাষ্ট্রনৈতিক আদর্শ হিসাবে গড়ে ওঠে তখন তাকে জাতীয়তাবোধ বলে। জাতির মধ্যে স্বজাত্যবোধ বৃদ্ধি পেলে প্রতিটি জাতি নিজেদের স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার দাবি তোলে। আদর্শ জাতীয়তাবাদ মানুষকে নিজের জাতির মতন অন্য জাতিকেও ভালবাসতে শিক্ষা দেয়।
২. উগ্র জাতীয়তাবোধ বলতে কি বোঝায়?
যখন কোনো জাতি নিজেদের সর্বোচ্চ শ্রেষ্ঠ জাতি হিসেবে তুলে গৌরব অহমিকা প্রকাশ করে অন্যান্য জাতিকে নিকৃষ্ট মনে করে এইরুপ ভাবধারাকে উগ্র জাতীয়তাবাদ বলে। উন্নত ও শিল্পোন্নত দেশগুলি আগ্রাসী রূপ ধারণ করে এই ধারনার বশবর্তী হয়ে। তারা সংকীর্ণ দাম্ভিকতা ও গৌরব এর লোভে সৃষ্টি করে উগ্র জাতীয়তাবোধের। তারা বাণিজ্যিক ও ভৌগলিক সুবিধাজনক স্থান দখলের প্রতিদ্বন্দ্বিতায় মেতে ওঠে এই ধারনার বশবর্তী হয়ে।
নাৎসিবাদের প্রধান ভিত্তি হল উগ্র জাতীয়তাবাদ। উগ্র জাতীয়তাবাদ দোষে দুষ্ট ইউরোপের অন্যান্য জাতিগুলিও পৃথিবীর পৃথিবীকে নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নেওয়ার নেশায় মেতে ওঠে। এর প্রমান এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উপনিবেশ স্থাপন তথা চিন আফ্রিকার ব্যবচ্ছেদ।
৩. আন্তর্জাতিকতাবাদ বলতে কি বোঝায়?
বর্তমান বিশ্বে কোনো জাতিই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়। তায় আত্মকেন্দ্রিক ভাবে কোনো জাতির পক্ষে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। কোনো না কোনো ক্ষেত্রে এক দেশ অন্য দেশের সাহাজ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকে। বিজ্ঞান প্রযুক্তিবিদ্যার প্রভূত উন্নতির ফলে এখন বিশ্বের এক প্রান্তের সঙ্গে অন্য প্রান্তের খুব সহজেই যোগাযোগ গড়ে উঠেছে। তাছাড়া অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ক্ষেত্রে রাষ্ট্রগুলি একে ওপরের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর এই সমগ্র বিশ্বের দেশগুলির পারস্পরিক সহযোগিতা ও সহাবস্থানের ভাবধারাকেই আমরা আন্তর্জাতিকটা বলে থাকি।
বিশ্বযুদ্ধের ভয়াবহ ধ্বংসলীলা ও শোচনীয় পরিস্থিতি এবং ভবিষ্যৎ পারমাণবিক যুদ্ধের সম্ভবনা, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে বাস করার প্রয়োজনীয়তা শিখিয়েছে। সংকীর্ণ জাতিগত স্বার্থ অপেক্ষা প্রতিটি জাতি যখন বিশ্বমানবের কল্যাণ সাধনের কথা চিন্তা করতে শেখে এবং নিজেকে বিশ্বমানবের অংশ বলে মনে করে তখনই আন্তর্জাতিকতাবাদের জন্ম হয়।
আন্তর্জাতিকতাবাদের প্রধান উদ্দেশ্য হল, প্রতিটি জাতির নিজস্ব গুন অবিকৃত রেখে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এমন একটি সুস্থ সবল পরিবেশ সৃষ্টি করা, যেখানে প্রতিটি জাতি পরস্পরের সঙ্গে অর্থনৈতিক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার দৃঢ় বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। আর এক কথায় যদি বলা যায় তবে, আন্তর্জাতিকতাবাদ হল একটি মানসিক অনুভূতি যা মানুষকে বিশ্ব সৌভ্রাতৃত্ববোধে উদ্দীপ্ত করে।
আরো পড়ুন ভাইমার প্রজাতন্ত্রের পতনের কারন গুলি কী ছিল?
আরো পড়ুন ফরাসি বিপ্লবে দার্শনিকদের ভুমিকা বা অবদান লেখ
অবশেষে আপনাকে বা তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে উগ্রজাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ এর এই পোস্টটি পড়ার জন্য, আশা করি এই আর্টিকেলের উগ্রজাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ অংশটি তোমাদের পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে।
এভাবেই চীরকাল তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে আমরা ভবিষ্যতে এধরনের আরও উন্নত মানের notes বা study materials তুলে ধরতে পারি তোমাদের সামনে যেগুলো পড়ে তোমরা তয়ামদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে করে তুলতে পারো আরো সমৃদ্ধ।
বিঃ দ্রঃ আজকের আর্টিকেলের উগ্রজাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ এর এই note টি কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষক ও কিছু পাঠ্য বইয়ের সাহায্য নিয়ে তৈরি করা হয়েছে। যদিও শিক্ষক দের অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিন্তু প্রকাশকদের কাছ থেকে কোনো অনুমতি নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠেনি। তায় উগ্রজাতীয়তাবাদ বনাম আন্তর্জাতিকতাবাদ এর এই পোস্টের বিরুদ্ধে আপনাদের যদি কোনো অভিযোগ থাকে ইমেল করুন এই ঠিকানায় [email protected] জানান আপনাদের কথা।