Menu

উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি বিশ্লেষণ করো

উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি; আজকের এই আর্টিকেলে আমরা নিয়ে এসেছি তোমাদের মানে পশ্চিমবঙ্গ মধ্যশিক্ষা পরিষদের মাধ্যমিক স্টুডেন্টদের ইতিহাস সিলেবাস এর অন্তর্গত পঞ্চম অধ্যায়  তথা  বিকল্প চিন্তা ও উদ্যোগ  অধ্যায়ের একটি গুরুত্ব প্রশ্ন এবং তার উত্তর (  উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি বিশ্লেষণ করো)  তোমাদের মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।  চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক আজকের প্রশ্নের উত্তরটি –

প্রশ্নঃ উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি বিশ্লেষণ করো।

উত্তরঃ ইংরেজ কোম্পানি  ভারতের  অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ক্ষমতা  দখল করার প্রায় 70 বছর পরে ভারতে ঔপনিবেশিক শিক্ষা বা পাশ্চাত্য শিক্ষা প্রবর্তনের তাগিদ অনুভব করে।  উইলিয়াম বেন্টিঙ্ক ১৮৩৫ পাশ্চাত্য শিক্ষা কে সরকারি নীতি হিসেবে গ্রহণ করে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।  তাছাড়া খ্রিস্টান মিশনারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ঔপনিবেশিক শিক্ষার প্রসার ঘটে। অবশ্য ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শিক্ষা নীতি কখনোই সমালোচনার ঊর্ধ্বে ছিল না।

 উপনিবেশিক শিক্ষার  উদ্দেশ্যঃ

উপনিবেশিক শিক্ষার বিস্তারের কয়েকটি লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য  বিদ্যমান  ছিল,  সেগুলি হল-

  1. ইংরেজি ভাষায় কিছু কথা বলতে সমর্থ হলে তাকে কেরানির চাকরিতে নিয়োগ করা যাবে।  অর্থাৎ  উপনিবেশিক শিক্ষার অন্যতম একটি মুখ্য কারণ ছিল এদেশীয় অর্থাৎ ভারতীয় কেরানি সৃষ্টি করা।
  2. স্বল্প বেতনে নিম্নতম সহকারী পদে ভারতীয়দের নিয়োগ করা যাবে।  অর্থাৎ  এক্ষেত্রে বেশি বেতন দিয়ে ইংল্যান্ড থেকে কর্মচারী আনতে হবে না।
  3. খ্রিস্টান মিশনারীদের উদ্দেশ্য ছিল খ্রিস্টান ধর্মের প্রচার এর মাধ্যমে ভারতীয়দের খৃষ্টধর্মে ধর্মান্তরিত করা।
  4. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের মধ্যে দিয়ে একশ্রেণীর অনুগত নাগরিক সৃষ্টি করা যারা ভবিষ্যতে ব্রিটিশদের হয়ে কথা বলবে।
  5. পাশ্চাত্য শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন শোষণ অব্যাহত রাখা এবং ব্রিটিশ উপনিবেশিক  সাম্রাজ্যকে দীর্ঘায়িত করা যাবে।
উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি বিশ্লেষণ করো
উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি বিশ্লেষণ করো

 উপনিবেশিক শিক্ষার  ত্রুটি  সমূহ  এবং তার বিশ্লেষণঃ  

আমরা যদি প্রাচীন ভারতে প্রচলিত উপনিবেশিক শিক্ষানীতিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে বিশ্লেষণ করি,  তাহলে দেখতে পাবো এর একাধিক ত্রুটি বিদ্যমান ছিল,  যে গুলি হল-

 সীমাবদ্ধ শিক্ষাঃ

উপনিবেশিক শিক্ষা ছিল সম্পূর্ণ সীমাবদ্ধ শিক্ষা ব্যবস্থা;  কারণ সমাজের উচ্চ শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ইংরেজি শিক্ষা বিস্তার ঘটলেও সমাজের সাধারণ মানুষের মধ্যে উপনিবেশিক শিক্ষার আলো আদৌ প্রবেশ করতে পারেনি।  ভারতের অধিকাংশ মানুষকে অজ্ঞতা,  অন্ধকার ও অশিক্ষার অন্তরালে রাখা হয়েছিল।

 ইংরেজি ভাষা শিক্ষার মাধ্যমঃ  

ঔপনিবেশিক শিক্ষা বিস্তারের মাধ্যম ছিল স্বাভাবিক ভাবেই ইংরেজি ভাষা।  মাতৃভাষা মাতৃভাষায় শিক্ষা না থাকায় দেশের অংশের এই শিক্ষা লাভ থেকে বঞ্চিত  হয়েছিল।

 ব্যবসা ও পেশাগত শিক্ষাঃ  

ভারতের কিছু সংখ্যক মানুষ তাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে ঔপনিবেশিক শিক্ষা গ্রহণ করেছিল।  বাণিজ্যিক লেনদেন করতে তাদের সুবিধা হবে বলে মনে করেছিলেন তারা।  এছাড়া  ইংরেজি শিক্ষার অর্থ করলে একটা ছোটখাটো চাকরি হতে পারে এই আশায় পেশার স্বার্থে ইংরেজি শিক্ষা গ্রহণ করেছিল অধিকাংশ মানুষ,  কিন্তু বহু ভারতীয়দের দক্ষতা,  যোগ্যতা,  কর্ম ক্ষমতা থাকা সত্বেও ইংরেজি ভাষা না জানা থাকার জন্য বিভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছিল তারা।

 মানুষের মধ্যে ব্যবধান সৃষ্টিঃ  

ঔপনিবেশিক শিক্ষা ব্যবস্থার অন্যতম বড় ত্রুটি ছিল  স্বাক্ষর সম্পন্ন নিরক্ষর মানুষের মধ্যে অসামান্য ব্যবধান সৃষ্টি।  এইরূপ ব্যবধান এর জন্য সর্বশ্রেণীর মানুষ আন্তরিকভাবে ঐক্যবদ্ধ হতে পারেনি।  এবং দেশের কুশাসন ও অন্যান্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে জোরালো প্রতিবাদ সংগঠিত করতে পারেনি তারা।

 ইংরেজি পাঠক্রমঃ  

ইংরেজি সাহিত্য পাঠ করাকে আবশ্যিক করা হয়েছিল এই উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থায়।  এইভাবে ইংরেজি পাঠক্রম এর মাধ্যমে দেশীয় প্রজাদের  মধ্যে দক্ষতা,  বিশ্বাসযোগ্যতা,  কর্মশীলতা এবং নির্দেশ পালন করার মানসিকতা গড়ে তোলায় ছিল এই উপনিবেশিক শিক্ষাব্যবস্থার অন্যতম প্রধান লক্ষ্য।

 প্রাথমিক শিক্ষা অবহেলিতঃ  

মূলত উচ্চশ্রেণী  ও সচ্ছল মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মধ্যে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে  পাশ্চাত্য উচ্চশিক্ষার কিছুটা বিস্তার ও উন্নতি ঘটলেও  ভারতের প্রাথমিক শিক্ষা প্রবলভাবে অবহেলিত হয়,  এর ফলে দেশে নিরক্ষর,  অশিক্ষিত এবং  প্রায়-অশিক্ষিত মানুষের সংখ্যা ক্রমশ বৃদ্ধি পেয়েছিল।

 রবীন্দ্রনাথের  উপনিবেশিক শিক্ষাঃ  

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ঔপনিবেশিক শিক্ষানীতির ব্যাপক সমালোচনা করেছিলেন।  এই শিক্ষা ব্যবস্থার ভয়ঙ্কর বিপদ সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করেছিলেন তিনি।  রবীন্দ্রনাথ বলেছেন,  শহরবাসী একদল মানুষ এই সুযোগে  শিক্ষা পেল, মান পেল,  অর্থ পেল  তারাই হল আলোকিত।  আর অজস্র দেশবাসী রইল অন্ধকারে।  এহেন শিক্ষিত সমাজ দেশ বলতে শুধু নিজেদেরকে বোঝাতে চাইল।  রবীন্দ্রনাথ মনে করেন যে এই ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা শিশুর মৌলিক চিন্তাশক্তি বিকাশের অন্তরায় হয়ে ওঠে এবং শিশুকে নিষ্ক্রিয় যন্ত্রে পরিণত করে।  একটি শিশু যদি মাতৃভাষায় তার মতামত প্রকাশ করতে সুযোগ না পায় তাহলে শিশুর সহজাত জ্ঞান অর্জনের  বিষয় প্রবলভাবে ক্ষুন্ন হবে।  এ অবস্থায় শিক্ষার্থী যান্ত্রিক হয়ে পড়ে।  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর আরো বলতেন  উপনিবেশিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলি মূলত জ্ঞান ভিক্ষার কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।  কারণ এগুলি পাশ্চাত্যের আদর্শ অনুসরণ,  ধার করা বিদ্যার পুনরাবৃত্তি ঘটায়।  তার মতে সমন্বয় চায়,  অন্ধ অনুকরণ নয়।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের মতে উপনিবেশিক শিক্ষার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের কোন প্রাণীর যোগ ছিল না। এজন্য তিনি বলতেন,  আপামর দেশবাসীর শিক্ষার দায়িত্ব নিজেদের গ্রহণ করতে হবে।  তিনি লিখেছেন যে,  আমাদের সমাজ যদি বিদ্যাদানের ভার নিজে গ্রহণ না করেন,  তবে একদিন ঠকিতেই হইবে।  বিদেশী সরকার এদেশে অনুকূল শিক্ষা কখনো দিতে পারেন না।  দেশবাসীর বুদ্ধিবৃত্তির উপর নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করাই সরকারের লক্ষ্য।

 

আরো পড়ুন – বাংলায় ছাপাখানার বিকাশ কিভাবে ঘটেছিল? ছাপা বইয়ের সঙ্গে শিক্ষা বিস্তারের সম্পর্ক কি?

 

বিঃদ্রঃ  আমাদের আজকের  আর্ট স্কুল ডট ইন এর  এই উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি আলোচনা করো  প্রশ্নটির উত্তর তৈরি করার জন্য কিছু পাঠ্যবই এবং রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে।  তাই আমাদের আজকের এই উপনিবেশিক শিক্ষার ত্রুটি গুলি এর উত্তরটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে;  তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected]  এই ঠিকানায়।  আমরা যথাসম্ভব চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!