Menu

কালাপাহাড় – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় 

কালাপাহাড়; আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা তোমাদের জন্য বিশেষত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বি এ ডিগ্রি কোর্সের অন্তর্গত প্রথম সেমিস্টারের আবশ্যিক বাংলা সিলেবাসের অন্তর্গত একটি গল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচয়; যা তোমাদের জন্য বিশেষ দরকারী। তাহলে চলো দেখে নেওয়া যাক আজকের এই কালাপাহাড় গল্পের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু।

কালাপাহাড় – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় 

গল্পের লেখক তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় সম্পর্কে ড. অসিত কুমার বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, “তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় অধুনাতন বাঙ্গালি-জীবন ও সাধনার শ্রেষ্ঠ ভাষ্যকর।

কালাপাহাড় গল্পের লেখক পরিচিতিঃ

বিংশ শতাব্দীর বাংলা কথাসাহিত্যের অন্যতম উজ্জ্বলতম এবং কিংবদন্তি কথাসাহিত্যিক হলেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। ১৮৯৮ সালের ২৩শে জুলাই বীরভূমের লাভপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর পিতা হরিদাস বন্দ্যোপাধ্যায় এবং মা ছিলেন প্রভাবতী দেবী। লাভপুর যাদবালয় উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক পাশ করার পর সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজে ভর্তি হন এবং তারপর বর্তমানের আশুতোষ কলেজে ভর্তি হন। অসহযোগ আন্দোলনে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহন করেছিলেন।

শারীরিক অসুস্থতা এবং রাজনৈতিক চপানাউতোর এর কারনে তিনি বিশ্যবিদ্যালয়ে পড়াশুনা শেষ করতে পারেননি। স্বাধীনতা আন্দোলনে যোগদানের জন্য তিনি ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে জেলবন্দীও হন এবং পরবর্তীতে মুক্তও হন। ১৯৩২ সালে শান্তিনিকেতনে তিনি রবীন্দ্রনাথের সাথে সাক্ষাৎ করেন এবং ঐ বছরেই তাঁর প্রথম উপন্যাস চৈতালি ঘূর্ণি প্রকাশিত হয়।

তাঁর অন্যান্য কিছু বিখ্যাত উপন্যাস হল – পাষানপুরী, ধাত্রীদেবতা, গণদেবতা, কালিন্দী, না, হাঁসুলি বাঁকের উপকথা, ইত্যাদি। এছাড়াও বহু ছোট গল্প তিনি রচনা করেন। যেমন – ছলনাময়ী, জলসাঘর, হারানো সুর, বিষ পাথর, কালাপাহাড়, বেদেনী ইত্যাদি। পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে রবীন্দ্র পুরস্কারে এবং তারপর সাহিত্য একাডেমী পুরস্কারে সন্মানিত করেন। ১৯৭১ সালের ১৪ই সেপ্টেম্বর এই বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক আমাদের সকলকে ছেড়ে হই জগৎ ত্যাগ করেন।

কালাপাহাড় গল্পের উৎসঃ

কালাপাহাড় গল্পটি তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এর গল্পসংগ্রহ থেকে আমাদের পাঠ্য হিসাবে গ্রহন করা হয়েছে, বিশেষত কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের 3 year degree কোর্সের অন্তর্গত প্রথম সেমিস্টারের সাধারন বাংলা বা আবশ্যিক বাংলা সিলেবাসের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।

কালাপাহাড় গল্পের বিষয়বস্তুঃ

বাবা রংলাল এবং ছেলে যশোদানন্দের মধ্যে মনোমালিন্য। আর তাদের এই মনোমালিন্যের অন্যতম বিষয় হল আগের বছরে কেনা গোরুগুলকে বিক্রি করে; তার পরিবর্তে আরও সুন্দর, বলিষ্ঠ অনেক বেশি কর্মক্ষম গোরু কেনা।

কালাপাহাড় - তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়
কালাপাহাড় – তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়

কিন্তু রংলাল কোনোভাবেই ছেলেকে তা বোঝাতে পারে না। কারনা যশোদানন্দন বলে যে পুরানো গোরুদুটিই যথেষ্ট, তাদের যে শক্তি সামর্থ্য আছে, তাতেই আরও কয়েক বছর চলবে। কিন্তু রংলাল নাছোড়বান্দা; এই বছর ফলন ভালো হওয়ায় সে আরও ভালো ফলন আনতে চাই আগামী বছরে। তাই সে এই ব্যাপারে কোনো অবহেলা করতে চায় না। শেষ পর্যন্ত আগের গোরুদুটোকে একশো টাকায় বিক্রি করে এবং স্ত্রীর গয়না বন্ধক দিয়ে একশো টাকা আরো জোগাড় করে সে চলল গোরুর হাটে।

পাচুন্দি গ্রামে হাঁট। হাঁটে ঢুকেই রংলালের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। চারিদিকে কত সুদৃশ গোরু দেখে। সুঠাম দেহযুক্ত মোষ গুলি আরো সুন্দর। একটি আরেকটির থেকে বেশি ভালো। এমন দেখতে দেখতে রংলাল এক জায়গায় দুটি মোষ দেখে অবাক হয়ে থমকে দাঁড়ায়। হাতির মতো তাদের চেহারা দেখে রংলালের মন ভরে যায়। মনে মনে এই দুটি মোষই সে কিনবে বলে ঠিক করে। শেষ পর্যন্ত একশো আটানব্বই টাকা দিয়ে সে মোষ দুটিকে কিনে নেয়।

যতটা উৎসাহিত হয়ে রংলাল মোষ দুটি হাঁট থেকে কিনেছিল, বাড়ি ফিরতে ফিরতে সেই উৎসাহ তাঁর প্রায় শূন্য হতে থাকে। বাড়িতে স্ত্রী, ছেলে – এই মোষ দুটো দেখে কি বলবে, এদের খাবারের বন্দোবস্ত কীভাবে হবে – এই সব বিষয় ভাবতে ভাবতে ধীরে ধীরে তাঁর উৎসাহ কমে যেতে থাকলো। তবুও মনে আশার দ্বীপ জ্বালিয়ে বাড়ি গিয়ে রংলাল তাঁর স্ত্রী আর যশোদাকে মোষ কেনার কথা বলে। যশোদার মা মোষ কেনার কথা শুনেই তেলে-বেগুনে জ্বলে ওঠেন। কিন্তু মোষ দুটি দেখার পর সবিস্ময়ে চেয়ে থাকেন তিনি।

তবে ভয়ে তাদের কাছে যেতে তাঁর সাহস হয় না। শেষ পর্যন্ত রংলালই মোষ দুটির সাথে যশোদার মায়ের আলাপ করিয়ে দেন। এবং শেষে দুটির নামকরণ করেন। তুলনামূলক স্বাস্থ্যবান মোষটির নাম হয় কালাপাহাড় আর আরেকটির নাম রাখা হয় কূম্ভকর্ন। যশোদার মা শেষপর্যন্ত খুশি হলেও যশোদা খুশি হল না।

রংলাল মোষ দুটিকে নিয়ে নদীর পাড়ে বেড়াতে যায়। তাঁর মূল উদ্দেশ্য থাকে অবশ্য খড়ের খরচটা বাচানো। বাড়ির সকলেরই তাতে আপত্তি থাকে। কিন্তু সে শোনেনা কারো কথা। নদীর ধারে বিষধর সাপ থাকে, এমনকি বাঘের আনাগোনাও কম না। কাজেই স্থানটি সুবিধাজনক নয়। একদিন হঠাত এক দুর্ঘটনা ঘটে যায়। একটি বাঘ রংলালকে আক্রমন করে। কুম্ভকর্ণ আর কালাপাহাড় আবার রংলালকে বাঁচানোর জন্য অগ্রসর হয়। তখন বাঘ কুম্ভকর্ণকে আক্রমণ করে। তারপর কালাপাহাড় আবার বাঘকে প্রতি আক্রমণ করে। শেষপর্যন্ত বাঘ আর কুম্ভকর্ণ দুজনেরই মৃত্যু ঘটে।

এরপর কালাপাহাড় একা হয়ে পড়ে। সে চিৎকার করে শুধু তাঁর হারানো বন্ধুকে খোঁজে, রংলাল তাঁকে সান্তনা দেয়। কালাপাহাড়ের সাথী হিসাবে রংলাল আরেকটি মোষ কিনে আনে। কিন্তু ক্রুদ্ধ কালাপাহাড় তাঁকে প্রায় অর্ধমৃত করে তবে ছাড়ে। যশোদা কালাপাহাড়কে হাঁটে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। বাড়ি থেকেই একজন কালাপাহাড়কে কিনে নিয়ে যায়। কিন্তু কালাপাহাড় তাঁকে তাড়িয়ে দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে।

পড়ে সে আবার টাকা ফেরত নিয়ে যায়। হাঁটে নিয়ে গেলে ক্ষ্যাপা মোষ কেউ কিনতে চায় না, তারপর অন্য আরেকটি হাঁটে নিয়ে গিয়ে অত্যন্ত কৌশলে রংলাল কালাপাহাড়কে বিক্রি করে এবং বাড়ি ফিরে আসে। কালাপাহাড় যখন বুঝতে পারে যে তাঁর মালিক বদল হয়েছে; তখন সে তার বাড়ি ফেরার জন্য উদ্যত হয়। অচেনা রাস্তায় এদিক ওদিক সে দৌড়াতে থাকে। দোকান ভাঙে, মানুষকে আহত করে আর রংলালকে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। শেষ পর্যন্ত সাহেবের বন্দুকের গুলিতে সে স্তব্দ হয়ে মাটিতে মিশে যায়।

 

আরো পড়ুনবাংলা আর ইংরেজি প্রবন্ধের সম্পূর্ণ আলোচনা

 

বিঃ দ্রঃ আমাদের আর্টস স্কুল ডট ইন ব্লগেরে আজকের আর্টিকেলটি তৈরি করার জন্য কিছু বিশেষ বইয়ের সাহায্যও নিতে হয়েছে। যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি; তাই আমাদের এই কালাপাহাড় গল্পের সারসংক্ষেপের আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো কোনো অভিযোগ থাকলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়; আমরা দ্রুত আপনার সমস্যা দূর করার চেষ্টা করবো। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!