গুরু নাটকের কৌতুক রস সম্পর্কে আলোচনা করো; আজকে আমরা তোমাদের জন্য নিয়ে হাজির হয়েছি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পর্ষদ এর অন্তর্গত একাদশ শ্রেণির বাংলা সিলেবাস এর গুরু নাটকের একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন, যা তোমাদের আগামী বার্ষিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক আজকের প্রশ্ন উত্তরটিঃ
গুরু নাটকের কৌতুক রস সম্পর্কে আলোচনা করো।
সাহিত্যের অন্যান্য রূপ রীতি প্রকৃতিতে যেমন এমনি নাটকেও রবীন্দ্র প্রতিভা একক এবং অনন্য। এই অনন্যতা বৃষ্টিতে রূপক সাংকেতিক নাটক গুলির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। রূপক এবং সাংকেতিক নাটক গুলির ভূমিকা সবচেয়ে বেশি। রূপক এবং সাংকেতিক, এই দুইয়ের মধ্যে স্বভাব বৈপরীত্য আছে। ফলস্বরূপ জুটিকে একসঙ্গে গাঁথা বেঁধে রাখা প্রায় অসম্ভব। কিন্তু রবীন্দ্র প্রতিভায় সবকিছু সম্ভব, আরো আশ্চর্য, এই ধরনের নাটক গুলিতে মূলত একটা সিরিয়াস ভাব থাকে, সেখানে কৌতুকের স্থান থাকেই না। কিন্তু গুরু নাটক রূপক সাংকেতিক হয়েও, কৌতুকের মোড়কে অনবদ্য হয়ে উঠেছে।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে কৌতুক কি? বা এর উৎস কোথা থেকে? নাটকে এর প্রয়োগই বা কেন করা হয়ে থাকে?
আসলে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর আচরণগত অসঙ্গতি, পরিবেশ বা পরিস্থিতির অসামঞ্জস্য, কোন মত বা পথকে বিদ্রুপ করার প্রবণতা, থেকেই কৌতুক উঠে আসে – গুরু নাটকেও এই একই পথ ধরে কৌতুক এসেছে বা প্রয়োগ করা হয়েছে।
নাটকের পটভূমি অচলায়তন নামক এক দেশ। যুগ যুগ ধরে যেখানে শুধু নিয়ম আর নিয়ম জীবন যেন নিয়মের বেড়াজালে আবদ্ধ। জিবন জিজ্ঞাশা না থাকায় সেখানকার মানুষ জরতাগ্রস্থ। এই জড়তার রূপটি নাটকে কৌতুকের মেজাজে প্রকাশ পেয়েছে।
নাটকের শুরুতেই সুভদ্র বলে, আমি পাপ করেছি – তার এই উচ্চারণে নিয়মের উদ্ভব রূপ গুলি স্পষ্ট হয়। উত্তরের জানালা খোলা, একজটা দেবীর জটপাকানো রাগ, অশুচি হওয়া ইত্যাদি হাস্যরস বয়ে আনে। আরো সব অদ্ভুত সংস্কারের কথা আছে। যেমন-
ক) শনিবারে মহাময়ূরী দেবী পূজা। কাঁসার থালায় ইঁদুরের গর্তের মাটি রেখে, পাঁচটি শেয়ালকাঁটার পাতা ও তিনটি মাসকলাই সহযোগে ফু দিলে তিন দিনে সাপের কামড়ে মৃত্যু হবে।
খ) পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্র তিথি, ফলে কাহিনী সরোবরের নৈঋত কোনে ঢোড়া সাপের খোলস খুঁজতে হবে। তারপর কালো ঘোড়ার লেজের সাতগাছি চুল দিয়ে বেঁধে পুড়িয়ে ধোঁয়া বের করতে হবে। পিতৃ পুরুষের আগ্রান জনিত কারণে এতে মহাপুণ্য হবে।
গ) শুক্রবারে কারো গায়ে হাত তুললে ভয়ঙ্কর অমঙ্গল হবে। কেননা এই বিজৃস্তনের বাতাস যার গায়ে পড়বে তার আয়ু কমে যাবে
অর্থাৎ এমন বহু বিচিত্র সংস্কার সত্যিই কৌতুক জাগায়। এরপর প্রায়শ্চিত্ত করার রীতি আরও উপভোগ্য, এর মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হলো-
ক) উত্তরের দেয়ালে কনুই ঠেকলে বা দাগ কাটলে সেদিনকার যোগ্য পাত্র সব ফেলা হবে এবং সাত মাসের বাচ্চার দিয়ে চাটানো হবে।
খ) অন্যদিকে উত্তরের জানলা খুলে মহা পাপ হয় ও নাকি মাতৃহত্যা পাপের সমান মানে প্রত্যেকটি বিষয়ই অদ্ভুত এবং কৌতুককর।
নাটকের সংলাপ ও বেশ কৌতুক ময়। যেমন- পঞ্চকের সংলাপ যেন হিউমার থেকে উইটে পরিণত হয়েছে। (নির্লজ্জ হয়ে আমি একাই মুখ দেখাবো)
চরিত্রের নাম গুলি ও অদ্ভুত রকমের হাস্যকর। অধ্যেত্যা, উপতিষ্য, স্তবরিপত্তন, মন্থরগুপ্ত ইত্যাদি। সুতরাং বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, গুরু নাটকের কৌতুকের আড়ালে তীব্র শ্লেষই অভিব্যক্ত হয়েছে।
![গুরু নাটকের কৌতুক রস সম্পর্কে আলোচনা করো।](https://artsschool.in/wp-content/uploads/2022/09/গুরু-নাটকের-কৌতুক-রস-সম্পর্কে-আলোচনা-করো।-1024x576.webp)
আমাদের এই ব্লগ থেকে আরো প্রশ্নোত্তর পড়ার জন্য নীচের লিঙ্ক গুলি দেখুন
আরো পড়ুনঃ বাঙালির সমাজ এবং সাহিত্যে চৈতন্য দেবের আবির্ভাব এর গুরুত্ব আলোচনা করো.
আরো পড়ুনঃ দ্বীপান্তরের বন্দিনী কবিতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ ছোট প্রশ্ন ও উত্তর
আরো পড়ুনঃ তেলেনাপোতা আবিষ্কার গল্পের মর্মার্থ আলোচনা করো।
বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমাদের আজকের এই গুরু নাটকের কৌতুক রস সম্পর্কে আলোচনা করো আর্টিকেলটি তৈরি করতে কিছু পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে, যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি। তাই আমাদের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের যদি কোনরকম সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে। ধন্যবাদ।