Menu

চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট কি ছিল

চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট; আমাদের আজকের এই আর্টিকেলে আমরা তোমাদের জন্য নিয়ে হাজির হয়েছি দ্বাদশ শ্রেণির ইতিহাসের ঠান্ডা লড়াই; জোট নিরপেক্ষ নীতি, উপসাগরীয় সংকট অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ও উত্তর জেটি হল 1949 খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট কি ছিল? যা তোমাদের আগামী বার্ষিক পরিক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ।

 

1949 খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট কি ছিল?

 

উত্তরঃ  সুদূর অতীতে ছিল প্রাচীন সভ্যতার লীলাভূমি। তবে অষ্টাদশ শতকের পশ্চাদগামীতা দেশ ও সমাজকে  যথেষ্ট পিছিয়ে দিয়েছিল।  এই সুযোগে চীনে পশ্চিমী দেশগুলির আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়।  চীনে পশ্চিমী সাম্রাজ্যবাদী রাষ্ট্রগুলির আধিপত্যের ফলে সেখানে পাশ্চাত্য শিক্ষা ও আধুনিক পাশ্চাত্য ভাবধারা প্রবেশ ঘটে।  শিক্ষিত শ্রেণীর ভাবধারার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পায়। 1917 খ্রিস্টাব্দে সোভিয়েত রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যে উৎসাহিত হয়েছেন অনেক বুদ্ধিজীবীদের প্রতি আকৃষ্ট হন।  চীনের সর্বোচ্চ কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রসার ঘটে এবং 1949 খ্রিস্টাব্দে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান ঘটে।

 

চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপটঃ 

 

৪ঠা মের  আন্দোলনঃ 

 

1911 খ্রিস্টাব্দে চীনের মাঞ্চু শাসনের অবসান ঘটিয়ে চীনে প্রজাতান্ত্রিক বিপ্লব সংঘটিত করে।  কিন্তু চিনে কেন্দ্রীয় শাসন দুর্বল হয়ে পড়লে নায়কদের প্রভাব-প্রতিপত্তি বৃদ্ধি পায়।  আবার প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯  সালে প্যারিসের শান্তি সম্মেলনে চীনের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করা হলে সমগ্র চীনে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে।  পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চেন-তু-শিউ  এর ডাকে চীনের কয়েক হাজার ছাত্র ১৯১৯  এর চৌঠা মে  তিয়েন আনমেন স্কোয়ার বিক্ষোভ কর্মসূচিতে যোগ দেয়।  এই ঘটনা চৌঠা মে-র আন্দোলন নামে পরিচিত।

1949 খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট কি ছিল
1949 খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট কি ছিল

আন্দোলনে যোগদানকারী ছাত্ররা মার্কসীয় দর্শনের দ্বারা প্রভাবিত ছিল,  এই আন্দোলনে ছাত্রদের সঙ্গে শ্রমিকরাও যোগ দেয়।  মাওসেতুং মনে করেন যে চৌঠা মে-র আন্দোলন ছিল সাম্রাজ্যবাদবিরোধী ও সামন্ততন্ত্র বিরোধী বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক বিপ্লব।  আর এই আন্দোলনের হাত ধরে চীনে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের সূচনা ঘটে।

চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাঃ 

 

১৯১৭  খ্রিস্টাব্দে রাশিয়ার বলশেভিক বিপ্লবের সাফল্যের শিক্ষিত সম্প্রদায় মার্কসীয় ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়।  চীনের বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক  লি-তা-চাও,  অধ্যাপক চেন-তু-শিউ  এবং তাদের অনুগামীরা চীনের বিভিন্ন শহরে মার্কসীয় দর্শন আলোচনা চক্র গড়ে তোলেন। ১৯২১  খ্রিস্টাব্দের  পয়লা মে  সাংহাই এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয় এর দুই মার্কসবাদী অধ্যাপক  লি তা চাও   এবং  চেন তু শিউ  এর উদ্যোগে চীনা কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয়।

 

এই দলের কর্মসূচি ছিল প্রধানত তিনটি,  যে গুলি হল –

১)  চীনের রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠা করা।

২)  চিনা সমরনায়কদের উচ্ছেদ করা।

৩) সাম্রাজ্যবাদীদের প্রতিরোধ করা।

 

কুয়োমিন তাং  ও কমিউনিস্ট বিরোধীঃ

 

চীনে কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পূর্বে কুয়োমিন তাং দলের যথেষ্ট প্রতিপত্তি ছিল।  সান ইয়াৎ সেন  ছিলেন কুয়োমিন তাং দলের প্রধান ও চীনা প্রজাতন্ত্রের রাষ্ট্রপতি।  তার আমলে চীনের কমিউনিস্টরা কুয়োমিন তাং দলের সদস্য হতে পারতো এবং দুই দল একযোগে জাতীয় সমস্যার মোকাবিলা করতে।  এই সময়কে কাজে লাগিয়ে কমিউনিস্টরা নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করে।  সানিয়া সেনের মৃত্যু হলে চিয়াং কাইশেক কুয়োমিন তাং দল ও সরকারের প্রধান হন।

 

কমিউনিস্ট পার্টির সহায়তা ও পরামর্শে কুয়োমিন তাং  দলকে সুসংগঠিত করেন।  তিনি রাশিয়া ও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির সহায়তায় উত্তর চীনের সমরনায়ক দের পরাজিত করে হ্যাকাও নানকিং প্রভৃতি অঞ্চল দখল করেন।  এরপর তিনি 1928 খ্রিস্টাব্দে  উত্তর চীনের রাজধানী  পিকিং দখল করলে  সমগ্র  চীন  ঐক্যবদ্ধ হয়.  ঐক্যবদ্ধ চীনের রাজধানী হয় নানকিং। যাইহোক কুয়োমিন তাং ও কমিউনিস্ট দলের সহযোগিতা দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। 1926 খ্রিস্টাব্দ থেকে দুই দলের মধ্যে নানা কারণে বিরোধ শুরু হয়। এই পরিস্থিতিতে ১৯২৭  সালে চিয়াং কাইশেক সাম্যবাদী রাশিয়ার সঙ্গে সব সম্পর্ক ছিন্ন করেন।  চীনের সর্বোচ্চ পদ থেকে কমিউনিস্টদের বিতাড়িত করে এবং চিয়াং এর নির্দেশে ক্যান্টন নানকিং প্রভৃতি অঞ্চলে নির্বিচারে গণহত্যা চালায়।  এতে বহু কমিউনিস্ট নিহত হন। ১২৭-২৯ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে প্রায় সাড়ে চার হাজার লক্ষ কমিউনিস্ট প্রাণ হারান।

 

কমিউনিস্টদের শক্তি বৃদ্ধিঃ

 

চিয়াং কাইশেক এর নেতৃত্বে কুয়োমিন তাং দল কমিউনিস্টদের ওপর তীব্র হত্যালীলা ও নির্যাতন চালায় তারা শহর ত্যাগ করতে থাকে।  তারা গ্রামাঞ্চলে আশ্রয় নেয় ও গঠনমূলক কাজে আত্মনিয়োগ করে।  তরুণ কমিউনিস্ট নেতা মাও সে তুং  এবং চু-তে  গ্রামের কৃষকদের কাছে প্রধান ঘাঁটি স্থাপিত হয়।  এছাড়াও ইয়াংসি,  হুনান,  উত্তর  ফুকিয়েন  প্রভৃতি কৃষকদের মধ্যে জমি বন্টন করে খাল খনন করে ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করেন।  গ্রাম অঞ্চলে কৃষকদের নিয়ে কমিউনিস্ট আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা শুরু হয়।  মাও সে তুং ও চু-তে  কৃষকদের নিয়ে ১৯২৮  খ্রিস্টাব্দে লাল ফৌজ গঠন করেন।  এই অবস্থায় কমিউনিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে চিয়াং সেনাবাহিনী পাঠায়।  ফলে চীনে গৃহযুদ্ধ শুরু হয়।

 

লংমার্চঃ 

 

চীনে গৃহযুদ্ধের সুযোগে জাপান  চীনের মাঞ্চুরিয়া  প্রদেশটি দখল করে  চীনের জেহোল পর্যন্ত অগ্রসর হয়।  জাপানের আগ্রাসন প্রতিরোধ এর কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করে  চিয়াং কাইশেক কমিউনিস্টদের নিধনে বেশি সক্রিয় হয়ে ওঠেন।  তিনি  কমিউনিস্টদের প্রধান ঘাঁটি  কিয়াং সী অবরোধ করে তাদের নির্মূল করার চেষ্টা চালান।  এই পরিস্থিতিতে মাও সেতুং এর নেতৃত্বে পরিবার পরিজনসহ প্রায় এক লক্ষ কমিউনিস্ট সরকারি বাহিনীর অবরোধ ভেঙে দীর্ঘ ছয় হাজার মাইল পথ অতিক্রম করে দক্ষিণ চীন থেকে উত্তর-পশ্চিম চীনের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে পৌঁছায় এবং সেখানে অপেক্ষাকৃত নিরাপদ স্থানে শেনসি প্রদেশে  উপস্থিত হয়।

 

তারা ১৯৩৪  এর 16 ই অক্টোবর থেকে ১৯৩৫ এর কুড়ি অক্টোবর পর্যন্ত 370 দিন পায়ে হেঁটে বহু পাহাড়-পর্বত নদনদী সরকারি বাহিনীর আক্রমণ এবং প্রবল দুঃখ-দুর্দশা অতিক্রম করে মাত্র 8000 যাত্রী তাদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছান।  এই ঘটনায় ইতিহাসের লংমার্চ নামে পরিচিত।  লংমার্চ  নিছক সামরিক অভিযান ছিল না,  এটি ছিল একই মঞ্চে দেশকে এবং দেশের মানুষকে দেশের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ও আরো অনেক কিছু কে নতুন করে আবিষ্কার করার অভিযান।  এই অভিযানের মাধ্যমে কমিউনিস্টরা সমগ্র চীনের সাধারণ মানুষকে সচেতন করে তোলে।

 

সিয়াং-ফুর ঘটনাঃ 

 

লংমার্চের পর মাও সে তুং  শেনসি প্রদেশে এক প্রায় স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করেন।  তার রাজধানী হয় সিয়াং ফু।  কমিউনিস্টদের দমনের উদ্দেশ্যে চিয়াং সেখানে সেনাবাহিনী পাঠায়।  এই সময় কমিউনিস্টরা কুয়োমিন তাং দলের সঙ্গে যৌথভাবে জাপানি আক্রমণ প্রতিহত করতে চাইছিল।  কিন্তু তাদের আবেদনে চিয়াং সারা দেননি। ১৯৩৬ সালে  সিয়াং – ফু তে  এলে ঢ্যাং  শিউ  লিয়াং  নামে জনৈক সেনাপতি তাকে অপহরণ করে আটকে রাখেন।  পরে রাশিয়ার হস্তক্ষেপে তিনি মুক্তি পান এবং কমিউনিস্টদের সঙ্গে যৌথভাবে জাপানের আক্রমণ মোকাবেলায় রাজি হন।  এই ঘটনা সিয়াং ফু  ঘটনা নামে পরিচিত।  চীনে কমিউনিস্টদের অগ্রগতির  আরও একটি পদক্ষেপ।

 

চীনে গণতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠাঃ 

 

জাপান ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দে  চীনের ওপর আবার আক্রমণ চালিয়ে বহু স্থান দখল করে নেয়।  এই সময় কুয়ো মিন তাং  ও কমিউনিষ্টদের মধ্যে সমঝোতা গড়ে ওঠে এবং তারা যৌথভাবে জাপানি আক্রমণ প্রতিরোধ করে।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় উভয় দলের ঐক্য বজায় ছিল। ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে জাপান আত্মসমর্পণ করার পর উভয় দলের বোঝাপড়া নষ্ট হয় এবং তারা আবার সংঘাতে লিপ্ত হয়।  মাও সেতুং এর নেতৃত্বে কমিউনিস্টরা একের পর এক চীনের বিভিন্ন ভূখণ্ড দখল করতে থাকে।

 

এই দুই দলের সংঘর্ষে তীব্রতর হতে থাকে। চিয়াং ও তার অনুগামীরা যুদ্ধে পরাজিত হয়ে ফরমোজা বা তাইওয়ানে  আশ্রয় গ্রহণ করে এবং সেখানে একটি জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা করে। কুয়োমিন তাং দের পরাজয়ের পর মাও সেতুং এর নেতৃত্বে ১৯৮৯  খ্রিস্টাব্দের পহেলা অক্টোবর পিকিং এর জনগণের প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়।  এই প্রজাতন্ত্রের প্রথম সভাপতি বা চেয়ারম্যান হন মাওসেতুং এবং প্রধানমন্ত্রী নিযুক্ত হন চৌ-এন-লাই।

 

Read More জোট নিরপেক্ষ নীতি কি? জোট নিরপেক্ষ নীতির উদ্দেশ্য গুলি বিষদে আলোচনা করে লেখ।

 

বিঃ দ্রঃ 1949 খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট কি ছিল? এই প্রশ্নটির উত্তর তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু পাঠ্য বইয়েরও সাহায্য নিতে হয়েছে, যদিও আমাদের পক্ষে কোনো প্রকাশকের সাথেই যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি এর অনুমতির জন্য।

তাই আমাদের আজকের এই 1949 খ্রিস্টাব্দে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের উত্থান এর প্রেক্ষাপট কি ছিল? প্রশ্নটির উত্তরটি নিয়ে যদি আপনাদের কারো কোনোরকম সমস্যা হয়ে থাকে, আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপনার সমস্যা দূর করার। আর এভাবেই https://artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!