Menu

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতিকরনের উদ্দেশ্য কি ছিল?

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতিকরনের উদ্দেশ্য;  আজকে আমাদের এই আর্টিকেলে আমরা তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পরিষদের (WBCHSE BOARD) অন্তর্গত দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সিলেবাস এর অন্তর্গত ঠান্ডা লড়াইঃ জোট নিরপেক্ষ নীতি,  উপসাগরীয় সংকট অধ্যায় থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর যা তোমাদের আগামী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

প্রশ্নঃ পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতিকরনের উদ্দেশ্য কি ছিল? বিভিন্ন দেশে এর কি প্রভাব পড়েছিল তা আলোচনা করে লেখ।

উত্তরঃ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অবসান সোভিয়েত রাশিয়া লাল ফৌজ পূর্ব ইউরোপীয় অঞ্চল জার্মানির হাত থেকে মুক্ত করে,  সেখানে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হয়।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া এসব অঞ্চলে কমিউনিস্ট ভাবাদর্শের ও রাশিয়ার অনুগত কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে নানা রকম নতুন নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করে।  রাশিয়ার ভূখণ্ড সংলগ্ন লাটভিয়া,  এস্তোনিয়া,  লিথুয়ানিয়া প্রভৃতি ছোট ছোট গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলিকে সরাসরি রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করে।  এছাড়া পূর্ব ইউরোপের যুগোস্লাভিয়া চেকোস্লাভিয়া বুলগেরিয়া আলবেনিয়া হাঙ্গেরি রোমানিয়া পোল্যান্ড ও পূর্ব জার্মানি আটটি দেশ অনুগত কমিউনিস্ট সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতিকরনের উদ্দেশ্যঃ

পূর্ব ইউরোপের নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার পেছনে রাশিয়ার যেসব উদ্দেশ্য গুলি ছিল,  সেগুলি হল –

১)  সাম্যবাদী আদর্শের প্রসারঃ 

স্ট্যালিনের মতে  সকল  বিজেতাি  বিজিত অঞ্চলের ওপর নিজেদের মতাদর্শ ও সমাজ ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে চায়।  তাই পূর্ব ইউরোপের বিজিত অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা যুক্তিসংগত।  এজন্য সাম্যবাদী ভাবধারার ধারাবাহিক প্রসারের জন্য এই অঞ্চলে রাশিয়ার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন ছিল।

২)  শক্তি শূন্যতাঃ

যুদ্ধবিধ্বস্ত ইংল্যান্ড,  ফ্রান্স প্রভৃতি দেশের আর্থিক ও সামরিক শক্তি নিঃশেষ হওয়ার ফলে ইউরোপে যে শূন্যতার সৃষ্টি হয় রাশিয়া তা কাজে লাগাতে পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল।

৩)  নিরাপত্তা বলয়ঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় পূর্ব ইউরোপের ওপর দিয়ে জার্মানির হিটলার কর্তৃক রাশিয়া আক্রমণের ঘটনা রুশ নিরাপত্তা কে বিঘ্নিত করেছিল।  পূর্ব ইউরোপে প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা করে রাশিয়া নিজের জন্য একটি নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলার উদ্যোগ দেখিয়েছিল।

৪)  অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবনঃ

যুদ্ধবিধ্বস্ত রাশিয়ার অর্থনৈতিক পুনরুজ্জীবন এর জন্য পূর্ব ইউরোপের সম্পদের ব্যবহার এবং এখানকার বাজার দখল রাশিয়ার কাছে খুবই প্রয়োজন ছিল।

৫)  কূটনৈতিক বিচ্ছিন্নতার অবসানঃ

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে রাশিয়া কূটনৈতিক থেকে বিচ্ছিন্ন ছিল।  পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে নিজস্ব প্রভাব বলয় তৈরি করে রাশিয়া সেই বিচ্ছিন্নতার অবসান ঘটাতে চেয়েছিল।

বিভিন্ন দেশে পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতিকরনের প্রভাবঃ

পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েত প্রাধান্য প্রতিষ্ঠা ইউরোপের বিভিন্ন দেশে তার প্রভাব পরিলক্ষিত হয়েছিল,  এগুলি হল –

ক)  সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিাঃ  

লাল ফৌজ পূর্ব ইউরোপের দেশ গুলিতে পপুলার ফ্রন্ট নামে এক ধরনের সরকার চাপিয়ে দেয়।  কমিউনিস্টদের নেতৃত্বে এসব একনায়তান্ত্রিক সাম্যবাদী সরকার প্রতিষ্ঠিত হয়।  এইসব সরকারের প্রধানমন্ত্রী,  স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী,  অর্থমন্ত্রী,  যুদ্ধমন্ত্রী প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ পদগুলোতে বিশ্বস্ত কমিউনিস্ট নেতাদেরই বসানো হতো।

খ)  নির্বাসিত সরকারকে উচ্ছেদঃ 

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ার আগে  পূর্ব ইউরোপের বিভিন্ন দেশে যেসব সরকারের অস্তিত্ব ছিল,  তাদের অনেকেই যুদ্ধকালে জার্মানির আক্রমণের ফলে বিদেশে নির্বাসিত হয়ে সরকার চালাতে থাকে।  যুদ্ধের পর লালফৌজ সেইসব  নির্বাসিত সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে তাদের শাসন ক্ষমতা থেকে বঞ্চিত করে।

গ)  রুশ মডেলের সংবিধানঃ 

পূর্ব ইউরোপের সব দেশের তাবেদার কমিউনিটি সরকারগুলি রাশিয়ার নির্দেশে নিজ নিজ দেশে আইন বা সংস্কার চালু কর তো।  সেসব দেশের সংবিধানের অনুকরণে নতুন সংবিধান চালু হয়,  রাশিয়ার রক্ত চক্ষুর এসব তাবেদার সরকার গুলি একপ্রকার পরাধীন হয়ে পড়েছিল।

ঘ) প্রচারঃ

জনমতকে নিজেদের অনুকূলে আনতে ক্লাব,  লজ,  ক্রীড়া সংগঠন প্রভৃতিকে কমিউনিস্ট প্রচার এর আওতায় আনা হয়।  কমিউনিস্ট পন্থী সংবাদ প্রচারে অনাগ্রহী সাংবাদিকদের পদচ্যুত করা হয়।

ঙ)  কমিউনিস্টকরনঃ  

স্বাধীনতাকামী ও নিরপেক্ষ বিচারকদের পদচ্যুত করে বিচার ব্যবস্থায় কমিউনিস্ট করণ করা হয়।  আদালত থেকে অকমিউনিস্ট আইনজীবী এবং বিদ্যালয় থেকে কমিউনিস্ট শিক্ষকদের বিতাড়িত করা হয়।  আর্নেস্ট হেনরি পূর্ব ইউরোপে প্রবর্তিত ব্যবস্থাকে সমাজতান্ত্রিক একনায়কতন্ত্র বলেছেন।

সোভিয়েত রাশিয়ার অনুকরণে নতুন শাসনতন্ত্র রচনার করে নিয়ন্ত্রিত  গণভোটের মাধ্যমে তা প্রবর্তন করা হয়।

 

আরো পড়ুনমিথ ও লিজেন্ড বলতে কী বোঝো?  অতীত বিষয়ে মানুষের ধারণাকে এরা কিভাবে রূপ দান করে?

 

বিঃ দ্রঃ  আর্টস স্কুল  ডট ইন  এর আজকের পূর্ব ইউরোপের সোভিয়েতিকরনের উদ্দেশ্য  এই আর্টিকেলটি তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু পাঠ্যবই এবং রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে;  যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি;  তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোন রকম সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected]  এই ঠিকানায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূর করার।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!