Menu

পেশাদারী অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য আলোচনা করো

পেশাদারি অপেশাদার ইতিহাসের পার্থক্য; আজকে এই আর্টিকেলের আমরা তোমাদের জন্য নিয়ে এসেছি; বিশেষত পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পরিষদের (WBCHSE)  দ্বাদশ শ্রেণীর ইতিহাস সিলেবাস এর অন্তর্গত প্রথম অধ্যায়  অতীত ধারণা  থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এবং তার উত্তর;  জানি যে তোমাদের জন্য দেওয়া হলো।

প্রশ্নঃ পেশাদারী ইতিহাস বলতে কী বোঝোপেশাদারী অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য আলোচনা করো?

 উত্তর:  ইতিহাস হল মানব জাতির অতীত কর্মকান্ডের সময়ানুক্রমিক ও ধারাবাহিক লিখিত বিবরণ।  ইতিহাস হল অতীত ও বর্তমানের বিচার-বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতের পথ দেখায়।  তাই ইতিহাস পুনর্নির্মাণে পেশাদারিত্বের মনোভাব প্রয়োজন।  এক্ষেত্রে ইতিহাস চর্চায় ঐতিহাসিকদের যেমন পেশাদারী জ্ঞান প্রয়োজন,  তেমনি ইতিহাস রচনায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসরণের ক্ষেত্রে তার পেশাদারি মনোভাব অনস্বীকার্য।  যদি ঘটনার সত্যতা ও বাস্তবতা বজায় রেখে কোন রকম ভাবে বা পক্ষপাতিত্ব ছাড়া প্রভাবিত না হয়ে সুসংবদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে রচনা করা যায় তাহলে তা পেশাদারী ইতিহাস নামে পরিচিত হয়।  উল্লেখ্য প্রাথমিক উপাদান এর উপর ভিত্তি করে লিখিত হওয়ায় পেশাদারী ইতিহাস অনেক বেশি নির্ভরযোগ্য।  ঐতিহাসিক এক্ষেত্রে ধারাবাহিক ঐতিহাসিক কাকে অনুসরণ এবং কার্যকারণ বিষয়টিকে পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করেন।  ঐতিহাসিক তথ্যের সত্যাসত্য নিরূপণ এবং বিচার বিশ্লেষণের মাধ্যমে ইতিহাস পুনর্গঠন করে তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে।

পেশাদারী অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য
পেশাদারী অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য

সুদূর অতীত থেকে শুরু করে বর্তমানে দীর্ঘ যাত্রাপথে মানব ইতিহাসে নানা পরিবর্তন ঘটে গেছে।  পেশাদারী ইতিহাস থেকে আমরা পৃথিবীতে মানুষের আবির্ভাব,  তাদের বন্য দশা,  অসভ্য জীবন থেকে ক্রমে সভ্যতার পদার্পণ,  সভ্যতার ধারাবাহিক অগ্রগতি প্রভৃতি সবকিছু জানতে পারি।  গানের জগতের প্রায় সব কিছু নিয়েই পেশাদারী ইতিহাস আলোচনা করে থাকে।  মানব সমাজের বিবর্তন,  সভ্যতার উত্থান ও পতন,  সাম্রাজ্য ও রাজ বংশের উত্থান ও পতন,  ধর্মনীতি,  রাজনীতি,  অর্থনীতি,  সমাজনীতি,  সংস্কৃতি বিজ্ঞানের অগ্রগতির সংস্কার কার্য,  বিপ্লব আন্দোলন মহাপুরুষের কর্মকাণ্ড প্রভৃতি সবকিছুই পেশাদার ইতিহাসের আলোচনায়  স্থান লাভ করে।

অপেশাদারী ইতিহাসের সঙ্গে পেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য / পেশাদারী অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য;  

প্রথমত, বুদ্ধিজীবীদের ইতিহাসগত ভাবনা চেতনা পূরণে এই ইতিহাসের উপাদান গুলি অক্ষম কারণ উপাদানগুলি বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ভাবাবেগ ও পক্ষপাতিত্ব দ্বারা প্রভাবিত। অন্যদিকে মানুষের বুদ্ধি ও ভাবনায় জগতকে এই ইতিহাসের উপাদান গুলি অনেক আলোকিত করে। কারণ যুক্তিনিষ্ঠ ভাবাবেগ বর্জিত নিরপেক্ষ সুসংবদ্ধ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ইতিহাস রচিত হয়।

দ্বিতীয়ত, অপেশাদারি বিভিন্ন ইতিহাসমূলক উপাদান যেমন-  লোককথা, পুরান,  কিংবদন্তি,  বীরগাথা ইত্যাদির ওপর নির্ভরশীল।  কিন্তু পেশাদারী ইতিহাস প্রাথমিক উপাদানের উপর নির্ভরশীল,  যেমন-  প্রত্নতাত্ত্বিক উপাদান,  সাহিত্যিক উপাদান ইত্যাদি।

তৃতীয়ত, অপেশাদার ইতিহাসের উপাদান গুলির ব্যবহার সম-কালের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এগুলি ভবিষ্যতের উপাদান হিসাবে গ্রহণীয় হতে পারে না। কিন্তু পেশাদারী ইতিহাস অতীতের কাহিনীর ওপর নির্ভরশীল হলেও এই ইতিহাস আমাদের ভবিষ্যতে কি ঘটতে পারে তার একটি ধারণা বা ইঙ্গিত আগে থেকেই দিয়ে দেয়। ফলে আমাদের ভবিষ্যতের সমস্যার সমাধান করা অধিক সহজ হয়।

চতুর্থত, সমকালীন তথ্য সংগ্রহ জানার ক্ষেত্রে অপেশাদার ইতিহাসের উপাদান গুলি প্রয়োজনীয় হলেও ইতিহাসের সৃষ্টি, ইতিহাস গত চিন্তাভাবনা, চেতনা বা রীতিনীতি জানার ক্ষেত্রে এদের বিশেষ কোনো গুরুত্ব নেই। পেশাদারী ইতিহাসের ক্ষেত্রে ইতিহাস সৃষ্টির ইতিহাস চিন্তাভাবনা চেতনা বা রীতিনীতি জানার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব আছে।  কারণ পেশাদারী ইতিহাসের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান টি হল ঐতিহাসিক।  ঐতিহাসিক উৎস ও তথ্য যথার্থভাবে যাচাই করে এবং সুসংবদ্ধ পদ্ধতি ব্যবহার করে ইতিহাস রচনা করেন।

পঞ্চমত, অপেশাদার ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা কম। অন্যদিকে পেশাদারী ইতিহাসের নির্ভরযোগ্যতা বিশ্বাসযোগ্যতা তুলনামূলক অনেক বেশি।

ষষ্ঠত, অপেশাদার ইতিহাসের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণের না করেই তা ইতিহাসে স্থান দেওয়া হয়। অন্যদিকে ঐতিহাসিক তথ্য যাচাই ও বিশ্লেষণ করে তবেই পেশাদারী ইতিহাসের গ্রহণ করা হয়।

সপ্তমত, অপেশাদারি ইতিহাসের ধারাবাহিকতাকালানুক্রম বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নয়। অন্যদিকে ধারাবাহিকতা ও কালানুক্রম হলো পেশাদারী ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। যে কোন ঘটনার বর্ণনা ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক  সেই ঘটনার সময়কাল উল্লেখ করে থাকেন।

অষ্টমত, অপেশাদারি ইতিহাসের ভৌগলিক অবস্থান কে ততটা গুরুত্ব দেওয়া হয় না। কিন্তু পেশাদারী ইতিহাসের ভৌগলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

নবমত, অপেশাদার ইতিহাসের অর্থনীতি নিতান্তই গৌণ ব্যাপার কিন্তু মানব সমাজের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হল অর্থনীতি। বর্তমান কালে কোনো অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় দেশে গ্রহণ করা উচিত তা নিয়েও ইতিহাসে বিস্তারিত আলোচনা হয় যা পেশাদারিত্বের নমুনা।

দশমত, অপেশাদারি ইতিহাসের  ভাবাবেগ পক্ষপাতীর দ্বারা প্রভাবিত থাকে বলে  ইতিহাস রচনায় ভাষার দিকে নজর দেওয়া হয় না।  কিন্তু পেশাদারী ইতিহাস ভাবাবেগ ও পক্ষপাতিত্ব মুক্ত হওয়ার কারণে ঐতিহাসিকরা ভাষা যাতে সহজ ও সরল হয় এবং মধুর হয় সেদিকে বিশেষ নজর রাখেন।

 

তাহলে এই ছিল  পেশাদারি অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য।  আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি তোমাদের কেমন লাগলো বা কতটা কাজে এল তা কমেন্ট করে জানাতে ভুলো না যেন।

 

আরো পড়ুন ১৯৩৫খ্রিস্টাব্দের ভারত শাসন আইন এর প্রেক্ষাপট ও শর্তাবলী আলোচনা করো।  এই আইনের গুরুত্ব কী?

 

বিঃ দ্রঃ আমাদের আজকের আর্টস স্কুল  ডট ইন  এর এই  পেশাদারি অপেশাদারী ইতিহাসের পার্থক্য আর্টিকেলটি  তৈরি করতে আমাদের কিছু সহায়ক বইয়ের সহায়তাও নিতে হয়েছে।  যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো রকম কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি।  তাই আমাদের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনরকম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected]  এই ঠিকানায় আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণে।  ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!