Menu

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে শ্রমিক আন্দোলন

বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন; আজকের আমাদের এই আর্টিকেলে মূলত বিংশ শতকের ভারতে শ্রমিক ও বামপন্থী আন্দোলন অধ্যায় থেকে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর তুলে ধরেছি যা তোমাদের আগামী মাধ্যমিক পরিক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হবে। তাহলে দেখে নেওয়া যাক বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এর এই প্রশ্নোত্তরগুলি –

 

১. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বে বাংলার শ্রমিক আন্দোলনের অগ্রগতি সম্পর্কে লেখো।

 

উত্তরঃ ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ ও স্বদেশী বয়কট আন্দোলন শুরু হলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে শ্রমিকরা এই আন্দোলনে সামিল হয়, তবে এই সময় সবচেয়ে বেশি বাংলার শ্রমিকদের প্রসার ঘটে। এই সময় বাংলার কলকারখানার মজুর ও শ্রমিকরা বিভিন্ন মিছিল ও জমায়েতে যোগদান করতেন। তারা –

ক. বিলাতি পন্য বর্জনের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে শক্তিশালী করে তোলেন। ময়মন সিংহের মুচিরা বিদেশি জুতা সারানো বন্ধ করে, বরিশালের রাধুনীরা রান্নায় বিদেশি দ্রব্য বরজন করে ও কালীঘাটের ধোপারা বিলাতি কাপড় কাচতে বারন করার মাধ্যমে এই আন্দোলনে প্রতিবাদ জানায়।

খ. বাংলার বিভিন্ন রেল ইউনিয়নের শ্রমিকরা যেমন জামালপুর, খড়গপুর, আসানসোল ইস্ট ইন্ডিয়া রেলওয়ে কর্মচারীদের সাথে ধর্মঘটে যোগদান করেন।

গ. কলকাতায় পার্শ্ববর্তী বাউড়িয়া, জুটমিল ও ক্লাইভ জুটমিলের শ্রমিকরা ধর্মঘটে অংশগ্রহন করেন।

এছাড়াও কলকাতার ট্রাম কোম্পানি, ছাপাখানা প্রভৃতি স্থানে শ্রমিকরা ধর্মঘট করেন। কলকাতা পুরসভার ২ হাজার কুলি ও মেথর এই ধর্মঘটে সামিল হন ও মিছিল বের করেন। আন্দোলনকারীদের উপর ব্যাপক পুলিশি অত্যাচার শুরু হলে বাংলার শ্রমিক আন্দোলন দুর্বল হয়ে পড়ে এবং ১৯০৯ সালে গন আন্দোলন তার গতি হারিয়ে ফেলে।

 

২. ১৯০৫ খ্রিষ্টাব্দে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এর প্রধান ধারাগুলি কী ছিল?

 

উত্তরঃ বাংলা ছিল ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের পীঠস্থান। ঐক্যবদ্ধ বাঙালি জাতির শক্তি ধ্বংস করার উদ্দেশ্য ১৯০৫ সালে লর্ড কার্জন বাংলাকে দ্বিখণ্ডিত করলে এর বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন শুরু হয়। এই আন্দোলনের কতগুলি ধারা ছিল। যেমন –

ক. বয়কট অর্থাৎ বিলাতি সামগ্রী বরজন ও বিদেশি সরকারের সঙ্গে অসহযোগিতা শুরু করে বয়কট  আন্দোলন করা হয়।

খ. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলনে বিদেশি জিনিস বর্জনের সাথে সাথে স্বদেশী জিনিসের ব্যবহার ও প্রসার ঘটানো, অন্যদিকে স্বদেশী প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে স্বদেশী জিনিস উৎপাদন করা।

গ. জাতীয় শিক্ষা ছিল এই আন্দোলনের অন্যতম ধারা। কারন – এই সময় ব্রিটিশ সরকারের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিকে ত্যাগ করা শুরু করে।

ঘ. বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন পর্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধারা হল বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনের শেষ পর্যায় গুপ্ত বিপ্লবী কার্যকলাপ বৃদ্ধি করা।

 

৩. প্রথম বিশ্বযুদ্ধোত্তরকালে ভারতে শ্রমিক আন্দোলনের বৈশিষ্টগুলি লেখো।

 

উত্তরঃ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরবর্তী ভারতের শ্রমিক আন্দোলনের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে এর কয়েকটি বৈশিষ্ট আমাদের চোখে পড়ে –

প্রথমত, ভারতীয় শ্রমিকদের অধিকাংশই অশিক্ষিত, এমনকি নিরক্ষর হলেও, তাদের মধ্যে একধরণের স্বাভাবিক চেতনা ছিল, যা থেকে তারা তাদের সমস্যা উপলব্ধি করে তা প্রতিকারের পথ খুঁজে বার করতেন। তাদের আন্দোলন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত এবং দৃঢ়তা ও ঐক্যবোধ ছিল প্রশংসার যোগ্য।

দ্বিতীয়ত, শহরের শিক্ষিত মধ্যবিত্ত শ্রেণির বুদ্ধিজীবী সম্প্রদায়ের মানুষ ছিলেন শ্রমিক বিদ্রোহের নেতা। শ্রমিক আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি এদের ওপর নির্ভরশীল ছিল।

তৃতীয়ত, ভারতীয় শ্রমিকরা তাদের দাবিগুলি আদায়ের জন্য শান্তিপূর্ণ পথে আন্দোলন করতেন। শ্রমিক আন্দোলনে হিংসাত্মক ঘটনা ঘটত না বললেই চলে।

চতুর্থত, ধর্মের ও বর্ণের বিভেদ এবং আঞ্চলিক বৈষম্য ভারতের শ্রমিক আন্দোলনকে দুর্বল করেছিল। শ্রমিকরা শ্রেণিগত দাবি ও সমস্যা নিয়ে না ভেবে অনেক সময় নিজেদের ধর্মীয় ও গোষ্ঠীবদ্ধ স্বার্থের কথা চিন্তা করতেন।

পঞ্চমত, শ্রমিকরা কেবল নিজেদের অর্থনৈতিক দাবিগুলি নিয়েই সংগ্রাম করেনি, তারা জাতীয় আন্দোলনের মূল স্রোতেও অবগাহন করেছিলেন।

 

Read More অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীত

 

অবশেষে আপনাকে / তোমাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এর এই আর্টিকেল অথবা প্রশ্নোত্তর পর্বটি ভালো করে পড়ার জন্য। এভাবেই চিরদিন আর্টস স্কুল ডট ইন এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এর মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নোত্তর গুলি তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি আর যেগুলো পরে তোমরা তোমাদের wbbse board এর আগামী মাধ্যমিক পরিক্ষার জন্য ভালো ভাবে প্রস্তুতি নিতে পারো।

 

বিঃ দ্রঃ – বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এর এই আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষক দের পরামর্শ নিয়ে এবং তার সাথে কিছু পুস্তকেরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের কাছে থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি, তাই আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে বঙ্গভঙ্গ বিরোধী আন্দোলন এর এই নোটসটি নিয়ে অবশ্যই আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!