Menu

বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য-মাধ্যমিক ইতিহাস

বিশ শতকের ভারতে উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণের চরিত্র ও বৈশিষ্ট পর্যালোচনা করো। ৩+৫=৮ (wbbse Madhyamik) 

 

উত্তরঃ বিংশ শতকের গোড়ার দিকে গান্ধিজির নেতৃত্বে জাতীয় কংগ্রেস ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনের অগ্রভাগে ছিল। ১৯২০-এর পর থেকে ভারতীয় রাজনীতিতে বামপন্থী ভাবধারার দ্রুত প্রসার ঘটতে থাকে। এই সময় বিভিন্ন বামপন্থী রাজনৈতিক দলের প্রতিষ্ঠা ঘটে। ভারতের বামপন্থী ভাবধারার অগ্রগতি রোধ করার উদ্দেশ্যে ব্রিটিশ সরকার মুজাফফর আহমেদ, এস এ ডাঙ্গে, শওকত ওসমানী, নলিনী গুপ্ত প্রমুখকে গ্রেপ্তার করে তাঁদের কানপুর ষড়যন্ত্র মামলায় অভিযুক্ত করে জেলে ভরা হয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও বামপন্থী অগ্রগতি রোধ করা সম্ভব হয়নি। বামপন্থী দলগুলিও ভারতের উপনিবেশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিয়েছিল –

বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্রঃ

১. প্রতিকূল পরিস্থিতিঃ

ভারতে বামপন্থী আন্দোলন প্রবল প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে থেকে পরিচালিত হয়েছিল।কারন কমিউনিস্ট ভাবধারার প্রসার প্রতিরোধে এদেশে ব্রিটিশ সরকার প্রথম থেকেই অত্যন্ত সক্রিয় ছিল।

২. সুবিন্যস্ত ও সংগঠিত ধারাঃ

অনেকটা সুবিন্যস্ত ও সংগঠিত ধারায় বামপন্থী রাজনীতি উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের দিকে চালিত হয়। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে AITUC গঠিত হওয়ার পর বাম রাজনীতির জনপ্রিয়তা বাড়ে। ভারতীয় জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ শ্রমিক ও কৃষক – বামপন্থী রাজনীতির সাম্যবাদী আদর্শকে সমর্থন করে ধর্মঘটের মাধ্যমে ব্রিটিশ উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে অংশ নেয়।

৩. বিপ্লবী চরিত্রঃ

উপনিবেশ বিরোধ বুর্জোয়া নেতৃত্বাধীন জাতীয় মুক্তি আন্দোলনগুলি যখনই বিপ্লবী চরিত্র ধারণ করেছিল তখনই বামপন্থী রাজনীতির প্রত্যক্ষ সমর্থন মিলেছে। তাই অসহযোগ আন্দোলন, সাইমন কমিশন বিরোধী আন্দোলন, কিংবা আইন অমান্য আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির সংযোগ ছিল।

৪. আর্থিক ও স্মাজিক সাম্যঃ

গান্ধিবাদী পন্থায় শ্রদ্ধা হারিয়ে অনেকে বাম রাজনীতিতে সামিল হয়েছিল। শুধু স্বাধীনতা নয়, আর্থিক ও সামাজিক সাম্য গুরুত্ব পেয়েছিল বাম রাজনীতিতে। কংগ্রেসকে সংস্কার ও নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তাকে সাম্রাজ্যবাদ বিরোধী লিগের সদস্য করে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনকে শক্তিশালী করার প্রয়াস ছিল বাম রাজনীতিতে।

৫. মনোমালিন্য ও বিভাজনঃ

বামপন্থী রাজনীতিতে কমিউনিস্টদের লাগামছাড়া প্রভাব ও প্রতাপকে কেন্দ্র করে মনোমালিন্য ও বিভাজনের রাস্তাও নিতে হয়েছে। যেমন দেওয়ান চমনলাল AITUC থেকে বেরিয়ে ভি.ভি গিরির নেতৃত্বে ইন্ডিয়ান ট্রেড ইউনিয়ন ফেডারেশন গঠন করেন।

 বামপন্থী আন্দোলনের বৈশিষ্ট্যঃ

বিশ শতকের উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনে বামপন্থী রাজনীতির অংশগ্রহণের ধারা পর্যালোচনা করে নানা বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যায় –

প্রথমতঃ বিশ শতকের প্রথম দশকের পর বামপন্থী রাজনীতির সাংগঠনিক অস্তিত্বই ছিল না। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর তা সাংগঠনিক রূপ পেয়েছিল।

দ্বিতীয়তঃ বামপন্থী রাজনীতির জন্ম রুশ বিপ্লবের প্রভাব থেকে। তাই ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে সশস্ত্র বৈপ্লবিক আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, যা কংগ্রেস পরিচালিত জাতীয় আন্দোলনকে অনেকটাই গতিশীল ও সফল হয়ে উঠতে সাহায্য করেছিল।

তৃতীয়তঃ উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনকে গনসংগ্রামে পরিণত করছিল বামপন্থীরা। তাদের রাজনীতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে মূলত আপোষহীন সংগ্রাম গড়ে তোলা।

চতুর্থতঃ বামপন্থী রাজনীতির উপনিবেশ বিরোধী সংরামে সামিল হওয়ার মধ্য দিয়ে গনঅভ্যুত্থান শুরু হয়েছিল। ভারতের মুক্তি আন্দোলনে কংগ্রেসের সঙ্গে মিলিত হয়ে স্বাধীনতা আন্দোলনকে সফল হতে অনেকটাই সাহায্য করেছিল।

পঞ্চমতঃ বামপন্থীরা বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনকে সমর্থন করে ধর্মঘটকে তাদের উপনিবেশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য করেছিল।

ষষ্ঠতঃ কগ্রেসের সঙ্গে কখনও অনুরাগ আবার কখনও বিরাগের মধ্যে দিয়ে বামপন্থীরা তাদের প্রতিবাদ আন্দোলনকে সচল রেখেছিল। তবে তারা রাজনৈতিক দাবী অপেক্ষা আর্থিক দাবি ও সাম্যনীতিকে হাতিয়ার করে শ্রমিকদের ব্রিটিশ আন্দোলনে চালিত করেছিল।

বামপন্থী আন্দোলনের পর্যালোচনাঃ

কৃষক শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে তাদের সামিল করার ক্ষেত্রে বামপন্থী রাজনৈতিক দল গুলি যথেষ্ট সাফল্য পেয়েছিল। তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ভারতের ব্রিটিশ সরকারকে সহযোগিতা বা কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ভারতছাড়ো আন্দোলনের বিরোধিতা করার নীতি গ্রহনের ফলে স্বাধীনতা আন্দোলনে বামপন্থীদের আন্তরিকতা সম্পর্কে প্রশ্ন ওঠে।

বিশ শতকে ভারতের বামপন্থী দলগুলি স্বাধীনতা আন্দোলনে বিশেষ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হলেও তাদের আন্দোলন কখনও জাতীয় কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় আন্দোলনের বিকল্প হয়ে উঠতে পারেনি। কেননা ভারতীয় কমিউনিস্টদের আন্দোলনের পেরনা, কর্মসূচি ও পদ্ধতি এসেছিল বিদেশ থেকে। ভারতের মাটিতে তাদের আন্দোলনের মূল শিকড় নিহিত ছিল না। তাছাড়া বামপন্থীদের আন্দোলন অধিকাংশ ক্ষেত্রে শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্তদের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। গ্রামগঞ্জের সাধারণ অশিক্ষিত দরিদ্র মানুষের মধ্যে এই আন্দোলনের খুব একটা প্রসার ঘটেনি।

 

আরো পড়ুন বিশ শতকের ভারতে বামপন্থী রাজনীতি ও আন্দোলন সম্পর্কে যা জানো লেখো।

 

Click Here to download the PDF version of this – বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য

অবশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য এর এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ার জন্য। এভাবেই চিরদিন আর্টস স্কুল ডট ইন এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে আমরা বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য এর মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ নোটস গুলি তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি এবং সেগুলো পড়ে তোমরা তোমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধে করে তুলতে পারো।

বিঃদ্রঃ বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য এর এই পুরো আর্টিকেলটি তৈরি করা হয়েছে কিছু অভিজ্ঞ শিক্ষকদের পরামর্শ নিয়ে এবং সাথে সাথে কিছু পাঠ্য বইয়েরও সাহায্য নেওয়া হয়েছে। যদিও শিক্ষকদের কাছ থেকে অনুমতি নেওয়া হয়েছে কিন্তু কোনো প্রকাশকের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি, তাই বামপন্থী আন্দোলনের চরিত্র বৈশিষ্ট্য এর এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনো সমস্যা থেকে থাকে তবে যোগাযোগ করুন আমাদের সাথে এই ঠিকানায় [email protected] ইমেল এর মাধ্যমে। THANK YOU.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!