মৌর্য ও মৌর্যত্তর সাম্রাজ্য; পশ্চিমবঙ্গের কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত স্নাতক ডিগ্রীর (জেনেরাল) প্রথম সেমিস্টারের ইতিহাস সিলেবাস এর অন্তর্গত দ্বিতীয় অধ্যায় হলো মৌর্য ও মৌর্যত্তর সাম্রাজ্য। আজকে আমরা আমাদের এই আর্টিকেল এর মাধ্যমে তোমাদের জন্য নিয়ে হাজির হয়েছি মৌর্য ও মৌর্যত্তর সাম্রাজ্য অধ্যায়ের একটু পরিচয়; যা পড়ে নিলে এই অধ্যায় থেকে তোমাদের মোটামুটি কি পড়তে হবে সে সম্পর্কে একটা স্পষ্ট ধারণা লাভ হবে। তাহলে চলো দেখে নেওয়া যাক –
মৌর্য ও মৌর্যত্তর সাম্রাজ্য
তাহলে চলো প্রথমেই দেখে নেওয়া যাক, এই অধ্যায়ে মূলত আমরা কোন কোন বিষয় সম্বন্ধে জানতে চলেছি অর্থাৎ এই অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু সম্পর্কে আমাদের একটা স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার, যার জন্য কিছু গুরুত্বপূর্ণ অংশ পয়েন্টের মাধ্যমে তোমাদের সামনে উপস্থাপন করতে চেষ্টা করেছি আমাদের এই আর্টিকেলটির মাধ্যমে। চলো তাহলে দেখে নেওয়া যাক এই অধ্যায়ের মূল বিষয়বস্তু গুলি –

মগধের মৌর্য শাসন- অশোকের ধম্ম ও শাসন ব্যবস্থা- মৌর্য পরবর্তী ভারতের কুষান সাতবাহন এবং তামিল শক্তির উত্থান- জৈন ও বৌদ্ধ ধর্মের বিভাজন- বৈষ্ণব ধর্ম ও শৈবধর্ম।
ভূমিকাঃ
বিহারের পাটনা জেলা নিয়ে গঠিত ছিল খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে গড়ে ওঠা ষোড়শ মহাজনপদ এর মধ্যে একটি প্রধান শক্তি। এই সময় 16 টি মহাজনপদের মধ্যে কোশল, অবন্তী, বৎস্য ও মগধ বিশেষ শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত উত্তর ভারতের আধিপত্য বিস্তারের প্রশ্নে অন্যান্য প্রতিপক্ষ শক্তিকে দিয়ে এক সর্বভারতীয় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। অত্যন্ত শক্তিশালী হয়ে উঠেছিল তা আমাদের বিশ্লেষণ করে দেখতে হবে।
মৌর্য ও মৌর্যত্তর সাম্রাজ্য এর উত্থান এবং গুরুত্বঃ
মগদের রাজনৈতিক ইতিহাসে মৌর্য সাম্রাজ্যের উত্থান জত না গুরুত্বপূর্ণ, তার চেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ ছিল অশোকের সিংহাসন আরোহনের এর ঘটনা। অশোকের মৌর্য সিংহাসনে আরোহন এর মধ্যে দিয়ে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের গতি প্রকৃতি নতুনরূপে পরিচিতি লাভ করে। কিন্তু ঠিক কোন সময় সিংহাসন আরোহন করেছিলেন তা নিয়ে বিতর্ক আছে। সাধারণভাবে ২৭৩ খ্রিস্টপূর্বাব্দে বিন্দুসারের পর অশোক মগধের সিংহাসনে বসে ছিলেন বলে মনে করাহয়। অশোকের ইতিহাস জানার ক্ষেত্রে সিংহলি মহাবংশ দীপবংশ বৌদ্ধ কাহিনী দিব্যবদান থেকে তথ্য পাওয়া যায়। ওজনের একটি অংশের নাম কি ছিল অশোকবদান। যদিও এইসব গ্রন্থ গুলি সমকালের নয় এবং এতে কিংবদন্তি ও ঐতিহাসিক তথ্য মিশে গেছে।
মানব ধর্মের প্রচারক ও অহিংসা নীতির পূজারী রূপে মৌর্য সম্রাট অশোক ভারত তথা বিশ্বের ইতিহাসে বিশিষ্ট স্থানের অধিকারী। কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা, আতঙ্ক, বেদনা অশোকের মানসিকতার পরিবর্তন ঘটিয়ে তাকে বৌদ্ধধর্মে আগ্রহী করে তুলেছিল। একদা আগ্রাসী এবং বিশ্বব্যাপী সাম্রাজ্য স্থাপনের আগ্রহী অশোক কেন বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ এবং ধম্মের প্রবর্তন করেছিলেন তা যথেষ্ট কৌতূহলের বিষয়। তবে কলিঙ্গ যুদ্ধের ভয়াবহতা এজে অশোকের ধর্ম গ্রহণের মূল কারণ তা নিয়ে ঐতিহাসিকদের মধ্যে দ্বিমত নেই। ডক্টর ভান্ডারকর, রাধা কুমুদ মুখার্জি প্রমূখ ঐতিহাসিকগণ অশোকের মানসিক পরিবর্তন ও অহিংসা নীতির প্রতি আসক্তি তার ধর্মান্তর গ্রহণের মূল কারণ বলে মনে করেন।
ভারতীয় সমাজের ধর্মচিন্তাঃ
ভারতীয় ধর্মচিন্তার ইতিহাসে খ্রিস্টপূর্ব অষ্টম শতকে তৃতীয় শতক এর মধ্যবর্তী সময়কাল একটি নতুন অধ্যায়ে রূপে পরিচিত। বৈদিক জ্ঞান প্রধান ধর্ম উপনিষদে হয়েছিল কর্ম প্রধান, যা সম্মিলিত ভাবে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। এই পর্যায়ে মহাজ্ঞানী ঋষিরা উপলব্ধি করেন যে ধর্মশাস্ত্র ভক্তির মাধ্যমে প্রচার করতে না পারলে সমাজকে ধর্মের বন্ধনে আবদ্ধ রাখা যাবে না। এর ফলে উপনিষদের যুগেই নির্গুণ ব্রহ্মের ধারণা রূপ পেতে থাকে। শান্ডিল্য ঋষি এই ভক্তি বাদকে গ্রহণ করে ধর্মশাস্ত্রে ভক্তিবাদ কে উচ্চাসন দান করেন। এই ধারার অন্তর্গত পাঁচটি জনপ্রিয় গোষ্ঠী হল – বৈষ্ণব, শৈব, শাক্ত, সৌর গাণপত্য। বৈষ্ণব সাহিত্য ইত্যাদি ভক্তিবাদী সমস্ত ধারাই ভাগবত ধর্মের অন্তর্গত। অবশ্য সাম্প্রতিককালে বৈষ্ণব ধর্মের অনুসারী ভাগবত কথাটি প্রয়োগ করা হয়।
আরো পড়ুন – প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে খ্রিষ্টপূর্ব শতকে প্রতিবাদী ধর্ম।
বিঃ দ্রঃ আমাদের ব্লগ www.artsschool.in এর মৌর্য ও মৌর্যত্তর সাম্রাজ্য এর আলোচনার এই পর্বটি তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু পাঠ্যপুস্তকেও সাহায্য নিতে হয়েছে। যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি, তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনরকম সমস্যা হয়ে থাকে, তাহলে আমাদের ইমেইল করুন – [email protected] এই ঠিকানায়। আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনার সমস্যা দূরীকরণের। ধন্যবাদ।