Menu

রাওলাট আইন এর শর্তাবলি উচ্চমাধ্যমিক ইতিহাস

রাওলাট আইন এর শর্তাবলি উল্লেখ করো। এই আইনের বিরুদ্ধে ভারতীয়দের প্রতিক্রিয়া কি ছিল? ৪+৪

প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটিশ পর ব্রিটিশ সরকার বিভিন্ন সংস্কার আইন প্রবর্তন করে একদিকে ভারতীয় জনগণকে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করেছিল এবং অন্যদিকে ভারতীয়দের ব্রিটিশ বিরোধী গন আন্দোলন ও বৈপ্লবিক কার্যকলাপ বন্ধ করার উদ্দেশ্য ইংল্যান্ডের বিচারপতি স্যার সিডনি রাওলাটের সভাপতিত্বে ৫ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন গঠিত হয়, এই কমিশন রাওলাট কমিশন বা সিডিশন কমিশন নামে পরিচিত। এই কমিশনের সুপারিশে একটি বিল উত্থাপিত হয় এবং মার্চ মাসে বিলটি আইনে পরিণত হয়, এটি রাওলাট আইন নামে পরিচিত।

রাওলাট আইন এর শর্তাবলিঃ

ভারতে ব্রিটিশ বিরোধী জাতীয়তাবাদ, গন আন্দোলন সরকার বিরোধী কার্যকলাপ, বিপ্লবী কার্যকলাপ প্রভৃতি ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে এই আইনটি তৈরি করা হয়। এই আইনে বলা হয় –

১. সরকার বিরোধী যেকোনো প্রচারকার্য দণ্ডনীয় বলে গণ্য করা হবে।

২. সন্দেহভাজন যেকোনো ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করা যাবে।

৩. গ্রেফতারের পর বিনা বিচারে অনির্দিষ্টকাল তাদের আটকে রাখা যাবে।

৪. সরকার বিনা পরোয়ানায় যেকোনো ব্যক্তির বাড়িঘর তল্লাশি করতে পারবে।

৫. জুরির সাহায্য ছাড়াই কোনো প্রকার সাক্ষ্য প্রমানের তোয়াক্কা না করেই বিচারকরা বিচার কার্য পরিচালনা করতে পারবেন।

৬. বিচারকদের রায়ের বিরুদ্ধে কোনো আপিল করা যাবে না।

৭. রাওলাট আইনে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির মুক্তির জন্য অর্থ জমা দিতে হবে।

৮. কোনো সংবাদ পত্রে স্বাধীনতার সংবাদ পরিবেশন করতে পারবে না।

রাওলাট আইন এর শর্তাবলি
রাওলাট আইন এর শর্তাবলি

রাওলাত আইন এর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াঃ

সঙ্গত কারনেই এই দমন মূলক ও প্রতিক্রিয়াশীল আইনের বিরুদ্ধে সমাজের সর্বস্তরে ব্যপক প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধ দেখা দেয়, যেমন –

১. দেসব্যাপী প্রতিবাদঃ

প্রতিক্রিয়াশীল রাওলাট আইনকে কেন্দ্র করে দেশের সর্বত্র প্রতিরোধের ঝড় বয়ে যায়। কেন্দ্রীয় আইনসভার সকল বেসরকারি সদস্য এই আইন এর বিরোধিতা করেন, নরমপন্থী সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জীও এই আইনের প্রতিবাদ করেছিলেন।

২. গান্ধিজির ভূমিকাঃ

গান্ধিজি অত্যাচারী রাওলাট আইনের সমালোচনা করে বলেন যে, যে সরকার শান্তির সময় এই ধরনের নির্মম আইনের আশ্রয় নেয়, সেই সরকার কখনো সভ্য সরকার বলে দাবী করতে পারে না, গান্ধিজি এই আইনকে – ‘উকিল নেহি, দলিল নেহি, আপিল নেহি’ বলে মন্তব্য করেন।

৩. জিন্নার প্রতিবাদঃ

রাওলাট আইনের প্রতিবাদে মহম্মদ আলি জিন্না, মদন মোহন মালব্য, মজহর উল হক আইন পরিষদের সদস্য পদ ত্যাগ করেন। জিন্না বলেন – ‘এই আইনের মাধ্যমে ন্যায় বিচারের আদর্শকে ধংস করা হয়েছে। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জী ও বোম্বাই হাইকোর্টের বিচারপতি নারায়ণ চন্দ্র এই আইনকে অনাবশ্যক ও অসঙ্গত বলে অবিহিত করেছেন।

৪. সংবাদপত্রের প্রতিক্রিয়াঃ

রাওলাট আইনের বিরুদ্ধে সংবাদপত্রগুলিও প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছিল। অমৃতবাজার পত্রিকা, হিন্দু, The New India, Bombay cronical, Panjabi, কেশরী প্রভৃতি সংবাদপত্র এই আইনের বিরুদ্ধে তীব্র প্রতিবাদ জানায়, অমৃতবাজার পত্রিকা রাওলাট আইনকে A Gygantic Blunder, কেশরী পত্রিকা এই আইনকে উৎপীড়নের ‘দানবীয় যন্ত্র’ বলে অভিহিত করেন।

৫. নৃশংস হত্যাকাণ্ডঃ

রাওলাট আইন ও অন্যান্য কয়েকটি ঘটনার প্রতিবাদে পাঞ্জাবের জালিয়ানওয়ালাবাগে মানুষ নিরস্ত্রভাবে প্রতিবাদ সভায় যোগদান করলে সরকার নির্বিচারে সেখানে গুলি চালায় ফলে অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হয়। এটিকে আমরা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড নামে জেনে থাকি। বিপানচন্দ্র লিখেছেন – এই আন্দোলনের মাধ্যমে সারা দেশে যেন বিদ্যুত তরঙ্গ ছড়িয়ে পড়ে। ভারতীয়রা জানিয়ে দেয়, তারা আর বিদেশি শাসনের কাছে নতি স্বীকার করতে প্রস্তুত নন।

 

আরো পড়ুন জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব

অবশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে রাওলাট আইন এর এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ার জন্য, এভাবেই আর্টস স্কুল ডট ইন এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিয়ো যাতে ভবিষ্যতে রাওলাট আইনের মতো আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি এবং আপনারা / তোমরা তোমাদের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করে তুলতে পারো সেগুলো পড়ে। 

Comments 1

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!