রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা; আমাদের আজকের এই আর্টিকেলের আলোচনার বিষয় কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত বি এ সিলেবাসের প্রথম বর্ষের মানে প্রথম সেমিস্টারের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিষয়ের প্রথম অধ্যায় রাজনীতি কি এবং রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা এর পুঙ্খানুপুঙ্খ আলোচনা তবে সংক্ষেপে। তাহলে আজকের আমাদের রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা এর এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি পড়ে নিও যাতে একটি বিষয়ও এড়িয়ে না যাও।
রাজনীতি কি এবং রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা
রাজনীতি কি? রাজনৈতিক তত্ত্ব কি এবং এর প্রাসঙ্গিকতা কি রাজনীতি চর্চার বিশ্লেষণের দৃষ্টিভঙ্গি আদর্শ স্থাপনকারী আচরণগত এবং একজন মার্কসবাদী এবং নারীবাদী এই সমস্ত বিষয়গুলি আমাদের কল্যাণী ইউনিভার্সিটির প্রথম সেমিস্টারের রাষ্ট্রবিজ্ঞান সিলেবাস এর প্রথম অধ্যায়ের অন্তর্গত। আজকে আমরা প্রথম অধ্যায়ের কিছু বিশেষ বিশেষ বৈশিষ্ট তোমাদের সামনে তুলে ধরব।

সমাজবিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ শাখা হলো রাষ্ট্রবিজ্ঞান। মানব সমাজ ও মানব সভ্যতার ক্রমবিবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত ধ্যান-ধারণার ও পরিবর্তন সাধিত হয়েছে এবং বর্তমানেও হচ্ছে। তাই আজ পর্যন্ত রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সর্বজন গ্রাহ্য সংজ্ঞা নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি কোনো রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পক্ষে এ বিষয়ে মতবিরোধ থেকেই গিয়েছে। তবে রাষ্ট্রবিজ্ঞানের সংজ্ঞা কি হবে এই প্রশ্নটা সকলের মনেই আসে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞান কি বা রাষ্ট্রবিজ্ঞান কাকে বলে অথবা রাষ্ট্রবিজ্ঞান বলতে কী বোঝো?
সার্বিক দৃষ্টিতে বলা যায় রাষ্ট্রবিজ্ঞান হল সমাজবিজ্ঞানের সেই শাখা, বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনার মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় সংগঠন ও তার আন্তর্জাতিক সম্পর্কে বিশ্লেষণ, আন্তর্জাতিক আইন, সংগঠন প্রভৃতি সম্পর্কে এবং বিভিন্ন প্রকার রাজনৈতিক ব্যবস্থার তুলনামূলক আলোচনা ও মূল্যায়ন করে।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার বিভিন্ন দিক গুলি সম্পর্কে যা জানো লেখঃ
এখন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে, যেমন – নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গি, আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গি, মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গি প্রভৃতি।
নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গিঃ
ঘটনা বা বিষয় সম্পর্কে প্রদত্ত বিবৃতির মধ্যে যখন প্রকৃত বাস্তব ঘটনার বর্ণনার পরিবর্তে নীতি, আদর্শ, মূল্যবোধ প্রভৃতি বিশেষ গুরুত্ব লাভ করে, তখন তাকে নীতিমানবাচক দৃষ্টিভঙ্গি বলে চিহ্নিত করা হয়।
আচরণবাদী দৃষ্টিভঙ্গিঃ
আচরণ বাদের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞা নির্ধারণ করা খুবই কঠিন। আর্নল্ড ব্রেখট এর মতে, রাজনৈতিক জীবন সম্পর্কে একটি অভিজ্ঞতাবাদী ও স্থায়িত্ব গড়ে তোলার প্রয়াস হল আচরণ বাদ। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আচরণবাদী রাষ্ট্রবিজ্ঞানীর রাজনৈতিক সমাজতত্ত্ব মনস্তাত্ত্বিক সমাজতান্ত্রিক এবং সামাজিক নৃতত্ত্ব রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনায় ব্যাপকভাবে প্রয়োগ করতে আরম্ভ করেন।
মার্কসীয় দৃষ্টিভঙ্গিঃ
মার্কসীয় তত্ত্বের প্রবক্তা করেন কোন সমাজ বিজ্ঞানকেই বিচ্ছিন্নভাবে বিচার করেন না। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ এর সাহায্যে তারা সমাজ ও প্রাকৃতিক বিজ্ঞানের পর্যালোচনা পদ্ধতির ঐক্য বিধান করেছেন। দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদ এর সাহায্যে বিজ্ঞানীরা সকল বিজ্ঞানের আলোচনা করতে পারেন। সুতরাং দ্বন্দ্বমূলক বস্তুবাদের দৃষ্টিকোণ সকল বিজ্ঞানের প্রাকৃতিক ও সামাজিক আলোচনার বিজ্ঞানসম্মত দৃষ্টিকোণ।
রাজনীতিতে নারীবাদী দৃষ্টিভঙ্গিঃ
আবার পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থায় নারীর অগ্রগতি এবং প্রগতিশীলতার ধারা অব্যাহত রাখার জন্য বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশেই নারী অর্থনৈতিক নির্ভরশীলতা, সামাজিক সমান অধিকার, এবং সক্রিয় রাজনৈতিক অংশগ্রহণ ও রাজনীতিতে প্রতিনিধিত্বের বিষয়কে কেন্দ্র করে নারী মুক্তি আন্দোলন সংঘটিত হয়েছে।
প্রথম থেকেই নারীবাদ ও নারী আন্দোলন প্রধান ধারায় বিভক্ত হয়ে পড়েছিল। এর একটি ধারা হলো বুর্জোয়া নারীবাদ। পুরুষশাসিত সমাজের শৃঙ্খলা মোচনের জন্য এই নারী সমাজের মধ্যে এই রাজনৈতিক স্বাধীনতার চেতনার এই বিমুর্ত প্রকাশ ঘটেছে। নারী সমাজের বক্তব্য রাজনীতিতে তারা পুরুষের মতই সমান, সমান প্রতিভা ও দক্ষতার সঙ্গে নিজেদের ভূমিকা পালন করছেন নারী সমাজ।
নারী সমাজের রাজনৈতিক স্বাধীনতার চাহিদাকে যতক্ষণ পর্যন্ত বাস্তবায়িত করা যাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাদের রাজনৈতিক সৃজনশীলতা বৃদ্ধি ঘটবেনা। এই কারণেই বর্তমানে নারীবাদী আন্দোলন তীব্র আকার ধারণ করেছে।
নয়া–আচরণবাদঃ
রাষ্ট্রবিজ্ঞানের আলোচনার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি হল নয়া আচরণবাদ। বিংশ শতকের 6 এর দশকের পর থেকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নয়া আচরণ বাদের উদ্ভব ঘটে। আচরণবাদ কঠোর পদ্ধতি নির্ভর ও বিজ্ঞানসম্মত রাজনৈতিক বিশ্লেষণ কে অতিক্রম করে রাজনৈতিক ব্যবস্থার আলোচনাকে মানবিক ও নৈতিক চেতনায় সমৃদ্ধ করে তোলে। রাষ্ট্রবিজ্ঞানকে সম্পূর্ণরূপে মূল্যবোধহীন করে গড়ে তোলার বিরুদ্ধে রায় দেওয়া হয়। নয়া কৌশল এর পরিবর্তে মৌলিক বিষয়বস্তুকে বেশি গুরুত্ব দেয়।
তাহলে এই ছিল তোমাদের কল্যাণী ইউনিভার্সিটির/ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিএ রাষ্ট্রবিজ্ঞান প্রথম সেমিস্টারের প্রথম অধ্যায় তথা রাজনীতি এবং রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা এর বিষয়বস্তু যা তোমাদের আগামী সেমিস্টারের জন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ।
আরো পরুনঃ শিক্ষার হেরফের – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পুর্নাঙ্গ আলোচনা।
Read More: Selvi by RK Narayan Complete analysis
বিঃ দ্রঃ রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা এর এই আর্টিকেলটি তৈরি করার জন্য আমাদের কিছু বইয়েরও সাহায্য নিতে হয়েছে, তাই আমাদের এই রাজনৈতিক তত্ত্বের প্রাসঙ্গিকতা লেখাটি নিয়ে যদি আপনাদের কারো কোনোরকম সমস্যা হয়ে থাকে তাহলে আমাদের ইমেল করুন [email protected] এই ঠিকানায়, আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করবো আপনাদের সমস্যা দূরীকরণের। ধন্যবাদ।