স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরূপণ করো; আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় পশ্চিমবঙ্গ উচ্চ শিক্ষা পর্ষদের একাদশ শ্রেণির রাষ্ট্রবিজ্ঞান সিলেবাস এর অন্তর্গত চতুর্থ অধ্যায়ের আধুনিক রাজনীতির মৌলিক ধারণাসমূহ অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন; যা হলো- স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরূপণ করো এবং স্বাধীনতার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিষদে আলোচনা করো। পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে প্রশ্নের উত্তর লেখার চেষ্টা করা হয়েছে যা তোমাদের আগামী পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে সহায়ক হয়ে উঠবে।
প্রশ্নঃ স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরূপণ করো এবং স্বাধীনতার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিষদে আলোচনা করো।
উত্তরঃ লাতিন শব্দ liber থেকে liberty শব্দটি এসেছে। যার অর্থ হলো স্বাধীনতা। স্বাধীনতা বলতে বোঝায় স্বাধীন পছন্দ এবং প্রতিটি ব্যক্তির নিজের কাজকর্ম সম্পর্কে নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। উৎপত্তিগত অর্থের কথা যদি বলা হয় তাহলে যা দাঁড়ায় তা হল স+ অধীনতা অর্থাৎ স্বাধীনতা। তবে সভ্য সমাজে অবাধ স্বাধীনতা বলে কোন কিছু থাকতে পারে না। একজনের স্বাধীনতার অর্থ হল অপরের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপ মেনে নেওয়া। তাই এইরূপ স্বাধীনতাকে স্বাধীনতা না বলে স্বেচ্ছাচারিতা বলায় সঠিক।
বিভিন্ন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী স্বাধীনতার বিভিন্ন সংজ্ঞা প্রদান করেছেন। রাষ্ট্রবিজ্ঞানী ল্যাক্সি গ্রামার অফ পলিটিক্স গ্রন্থে বলেছেন স্বাধীনতা হল এমন একটি পরিবেশ যা সযত্নে রক্ষা করা হয় এবং যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি আত্মপ্রকাশের সুযোগ পায়। বারকার এর মতে স্বাধীনতা বলতে কখনোই প্রত্যেকের অবাধ স্বাধীনতা বোঝায় না; স্বাধীনতা হল সব সময় সকলের শর্তসাপেক্ষ স্বাধীনতা। স্বাধীনতা হল মানুষের সামর্থ্য ও যোগ্যতার সর্বাঙ্গীণ বিকাশ। তাদের মতে পুঁজিবাদী সমাজে যে স্বাধীনতার কথা বলা হয় তা সংখ্যাগরিষ্ঠ শ্রমজীবী মানুষের স্বাধীনতা নয় বরং তা হলো উৎপাদনের উপকরণ সমূহের মুষ্টিমেয় মালিকের স্বাধীনতা। হেগেল বলেছেন, ব্যক্তি তখনই তার স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে যখন সে রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করে।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে স্বাধীনতা সম্পর্কে একটি সহজবোধ্য সাধারণ সংজ্ঞা দেওয়া যেতেই পারে। স্বাধীনতা হল শ্রেষ্ঠ এবং সংরক্ষিত এমন এক পরিবেশ যেখানে শর্তসাপেক্ষে আইন অনুসারে সব মানুষ আত্মবিকাশের পরিপূর্ণ সুযোগ লাভ করে, এক্ষেত্রে অধিকার হলো স্বাধীনতার ভিত্তি।

দৃষ্টিভঙ্গিগত পার্থক্যের জন্য স্বাধীনতা যুদ্ধে বিভিন্ন নামে চিহ্নিত করা হয়। তথাপি বর্তমানে আইনগত স্বাধীনতার রূপটিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়। সেই হিসেবে আইনগত স্বাধীনতা হচ্ছে তিন প্রকার, যথা- পৌর স্বাধীনতা বা ব্যক্তি স্বাধীনতা, রাজনৈতিক স্বাধীনতা ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। এছাড়াও প্রাচীন দার্শনিকদের মত অনুযায়ী, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা এই বিভাগে স্বাধীনতা কে ভাগ করা যায়। অনেকে আবার রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে বিরাজমান প্রাকৃতিক বা স্বাভাবিক স্বাধীনতার কথাও বলে থাকেন।
পৌর স্বাধীনতা বা ব্যাক্তিস্বাধীনতাঃ
পৌর স্বাধীনতা বা ব্যক্তি স্বাধীনতা হল মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের পরিপূর্ণ বিকাশের জন্য অধিকার গুলির অন্যতম একটি অধিকার। এই অধিকারের মধ্যে জীবনের স্বাধীনতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সম্পত্তির অধিকার, ধর্মাচরণের স্বাধীনতা, পরিবার গঠন এবং সংঘ গঠন বা সমিতি গঠনের স্বাধীনতাকে বোঝানো হয়। তবে উল্লিখিত স্বাধীনতার গুলিতে রাষ্ট্র দ্বারা সংরক্ষিত অস্বীকৃত না হয় তাহলে কখনোই ব্যক্তির পরিপূর্ণ বিকাশ সম্ভব হয় না। এই কারণে অনেক রাষ্ট্রবিজ্ঞানী পৌর স্বাধীনতাকে ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে থাকে। কেননা এইসব স্বাধীনতা মূলত ব্যক্তির ব্যক্তিগত সত্তা ও গুণাবলীর বিকাশ এর সঙ্গে অঙ্গাঙ্গীভাবে জড়িয়ে থাকে। সুতরাং ব্যক্তির ব্যক্তিগত সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যকে সঠিক পর্যায়ে রাখার জন্য রাষ্ট্র বা কোনো রাষ্ট্রীয় সংস্থা কর্তৃক ব্যক্তির বাহ্যিক আচার আচরণ নিয়ন্ত্রণ করা উচিত নয়।
রাজনৈতিক স্বাধীনতাঃ
রাজনৈতিক স্বাধীনতা বলতে বোঝানো হয় প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে শাসনকার্য জনগণের অংশগ্রহণ এবং সরকারকে নিয়ন্ত্রণ করা। এই শ্রেনীর স্বাধীনতার মধ্যে যেগুলি পরে সেগুলি হল- নির্বাচন করা, নির্বাচনে অংশ নেওয়্ নির্বাচিত হওয়ার স্বাধীনতা, সরকারের কাজের সমালোচনা করার স্বাধীনতা সরকারি চাকরি পাওয়ার স্বাধীনতা ইত্যাদি। কোন কোন রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অবশ্য মনে করেন যে রাজনৈতিক স্বাধীনতা হলেও সেই স্বাধীনতা রাষ্ট্রপরিচালনার ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের ক্ষমতা প্রদান করে।
অর্থনৈতিক স্বাধীনতাঃ
তাত্ত্বিকভাবে স্বাধীনতার কথা যাই বলা হোক না কেন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ছাড়া সবরকম স্বাধীনতা অর্থহীন। মানুষের কাছে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। আর্থিক অভাব থেকে বাঁচার অধিকার কে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা বলা হয়। এই অধিকারের মধ্যে যেগুলো আছে সেগুলো হলো কাজের অধিকার, যোগ্যতার ভিত্তিতে কাজ পাওয়ার অধিকার, অক্ষম অসুস্থ অবস্থায় সাহায্য পাওয়ার অধিকা্ ন্যায্য মজুরি পাওয়ার অধিকার ইত্যাদি। আরো কিছু অধিকার অর্থনৈতিক অধিকার এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত যেমন সবেতন ছুটি পাওয়ার অধিকার, অবসর জীবন যাপনের অধিকার বিশ্রামের অধিকার ইত্যাদি। বার্কার তাই বলেছেন, অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে পরাধীন শ্রমিক কখনোই রাজনৈতিক ক্ষেত্রে স্বাধীন হতে পারেনা। আবার কাল মার্কস তার অর্থনৈতিক আলোচনায় অর্থনৈতিক স্বাধীনতাকে অত্যধিক গুরুত্ব দিয়েছেন।
সম্প্রদায়গত স্বাধীনতাঃ
প্রাচীন গ্রিসের এথেন্স আরো একটি স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে, যেটি হল সম্প্রদায়গত স্বাধীনতা। দেশের বিভিন্ন সম্প্রদায়গুলি একে অপরকে নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্ত হওয়া এবং স্বাধীন কর্তৃত্বের অধিকারী হতে চাওয়া এই স্বাধীনতা পর্যায়ে পড়ে থাকে।
প্রাকৃতিক স্বাধীনতাঃ
দার্শনিক রুশো ছিলেন প্রাকৃতিক স্বাধীনতার মূল প্রবক্তা। তার মতে রাষ্ট্র সৃষ্টির পূর্বে মানুষ প্রাকৃতিক অবস্থায় যে অবাধ স্বাধীনতা ভোগ করতো তাকেই প্রাকৃতিক স্বাধীনতা বলা হত। অবশ্য অনেকে মনে করেন রাষ্ট্র সৃষ্টি করবে এই স্বাধীনতা ব্যক্তিত্ব গ্রহণযোগ্য হলেও এটি ছিল একেবারেই নিয়ন্ত্রণ অবাধ এবং স্বেচ্ছাচারী।
স্বাধীনতার রক্ষাকবচঃ
এই প্রসঙ্গে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ সম্পর্কে আলোচনা করা যেতে পারে। স্বাধীনতা থাকলেই মানুষ স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে এমন কিন্তু নয়, যতক্ষণ না রাষ্ট্র সেই স্বাধীনতাকে সংরক্ষণ করছে। বিভিন্ন রকম ব্যবস্থা দ্বারা রাষ্ট্রকর্তৃক স্বাধীনতার সংরক্ষণ করাকে বলা হয় স্বাধীনতার রক্ষাকবচ।
আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সংবিধান দ্বারা অধিকার সংরক্ষণ স্বাধীনতার সর্ব প্রধান রক্ষাকবচ বলে মনে করা হয়। সংবিধান লিখিত ভাবে মৌলিক অধিকার গুলি সংরক্ষণ করে এবং নাগরিকদের অধিকার খর্ব হলে আদালত তা বিচারন ও বলবৎ যোগ্য করে, যাতে স্বাধীনতার মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
সকল মানুষের স্বাধীনতাকে সুনিশ্চিত করতে হলে, ক্ষমতা স্বতন্ত্র নীতির গ্রহণ একান্তই প্রয়োজন। এই নীতির মাধ্যমে সরকারের আইন, শাসন ও বিচার বিভাগ নিজ নিজ ক্ষেত্রে স্বাধীন থাকে। ফলে একই ব্যক্তির হাতে একই বিভাগের অধীনে অন্যান্য বিভাগকে নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতা থাকলে তার দ্বারা নাগরিক স্বাধীনতা ব্যাহত হতে পারে সেই কারণে বলা হয় ক্ষমতা স্বতন্ত্রীকরণ নীতি স্বাধীনতার অন্যতম একটি রক্ষাকবচ।
এছাড়া বিচার বিভাগের স্বাধীনতা আইনের অনুশাসন সর্বজনীন প্রাপ্ত বয়স্কের ভোটাধিকার দায়িত্বশীল শাসনব্যবস্থা গণতন্ত্র ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে।
Read More আইনের সংজ্ঞা দাও। আইনের উৎস গুলি সম্বন্ধে বিশদ আলোচনা করো।
বিঃ দ্রঃ আমাদের আজকের www.artsschool.in ব্লগের এই আর্টিকেলটি অর্থাৎ স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরূপণ করো? এবং স্বাধীনতার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিষদে আলোচনা করো; উত্তরটি তৈরি করতে আমাদের কিছু রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে; যদিও এর জন্য আমাদের তরফ থেকে কোনো প্রকাশকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়ে ওঠেনি. তাই স্বাধীনতার সংজ্ঞা নিরূপণ করো এবং স্বাধীনতার প্রকারভেদ সম্পর্কে বিষদে আলোচনা করো প্রশ্নের উত্তরটি নিয়ে আপনাদের কারো কোন রকম সমস্যা থাকলে আমাদের ইমেইল করুন [email protected] এই ঠিকানায়; আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করব আপনাদের সমস্যা দূরীকরণে. ধন্যবাদ.
I think it’s a good answers
Thanks Keep Supporting us and we will try to provide notes like this on various subjects