Menu

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীত

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীতি  ছিল ঔপনিবেশিক ভারতে ব্রিটিশ দ্বারা প্রবর্তিত দুটি কুখ্যাত ও নির্মম ব্যবস্থা, যার দ্বারা ব্রিটিশরা ভারতে তাদের সাম্রাজ্য বিস্তারকে ত্বরান্বিত করেছিল এবং এই নীতির কোপে পরে অজস্র ভারতীয় রাজ্যের রাজারা তাদের সাম্রাজ্য ব্রিটিশদের হাতে তুলে দিতে বাধ্য হয়েছিল বা বাধ্য করা হয়েছিল ছলে বলে ও কৌশলের দ্বারা।

আজকের এই আর্টিকেলে আমরা মূলত ব্রিটিশ আগ্রাসনের এই দুই নীতি (অধীনতামূলক মিত্রতা ও স্বত্ববিলোপ) নিয়েই আলোচনা করবো, জানবো কে বা কারা কবে কীভাবে ভারতের ওপর এই দুই নীতি প্রয়োগ করেছিল এবং তা কীরূপ প্রভাব ফেলেছিল ভারতীয় জনজীবনের ওপর।

 

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি বলতে কী বোঝ?                                       

লর্ড ওয়েলেসলি ব্রিটিশ সম্রাজ্যের সম্প্রসারণের লক্ষে উদ্যোগী হন তিনি দেশীয় রাজ্যগুলিকে বিদেশী আক্রমণের থেকে নিরাপত্তা দেওয়ার অজুহাতে যে নীতির প্রয়োগ ঘটায় তাকে বলা হয় অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি। ওয়েলেসলি ১৭৯৮ খ্রিষ্টাব্দে এই নীতির প্রয়োগ করেন। এই নীতি গ্রহনকারী রাজ্যকে কতগুলি শর্ত মেনে চলতে হত, এগুলি হল –

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি
অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি

অধীনতামূলক মিত্রতা নীতির শর্তাবলি

  • ক) অধীনতামূলক মিত্রতা চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী ভারতীয় মিত্র রাজ্যকে কোম্পানি বৈদেশিক আক্রমণ থেকে এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলা থেকে রক্ষা করবে।
  • খ) মিত্র রাজ্যকে ব্রিটিশ সেনাপতির অধীনে একদল ব্রিটিশ সৈন্য রাখতে হবে।
  • গ) ব্রিটিশ সেনাদের খরচ চালানোর জন্য চুক্তি স্বাক্ষরকারী বৃহৎ দেশীয় রাজ্যগুলিকে নিজনিজ রাজ্যের একাংশ কোম্পানিকে ছেড়ে দিতে হবে।
  • ঘ) ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে সৈন্যদলের ব্যয়ভার হিসাবে ভুমির পরিবর্তে নগদ অর্থ কোম্পানিকে দিতে হবে।
  • ঙ) স্বাক্ষরকারী মিত্ররাজ্য কোম্পানির বিনা অনুমতিতে বৈদেশিক নীতি পরিচালনা করতে পারবে না।
  • চ) কোম্পানির বিনা অনুমতিতে স্বাক্ষরকারী রাজ্য কোন যুদ্ধবিগ্রহে যেতে পারবে না।
  • ছ) কোম্পানির মিত্রতায় আবদ্ধ রাজ্যগুলি নিজস্ব সেনাদলে কোম্পানির অনুমতি ছাড়া কোনো ইউরোপীয়কে নিয়োগ করতে পারবে না।

হায়দ্রাবাদের নিজাম প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে ওয়েলেসলির অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি গ্রহন করে।

 

স্বত্ববিলোপ নীতি সম্পর্কে যা জানো লেখ                                                                  

অধীনতা মূলক নীতির মতো ডালহৌসির উল্লেখযোগ্য সাম্রাজ্য বিস্তার নীতি ছিল স্বত্ববিলোপ নীতি। তিনি এক ঘোষণায় বলেন কোম্পানির আশ্রিত কোনো দেশীয় রাজা অপুত্রক অবস্তায় মারা গেলে সেই রাজ্যটি সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে। এই নীতি স্বত্ববিলোপ নীতি নামে পরিচিত। ডালহৌসি ১৮৪৮ খ্রিষ্টাব্দে এই নীতি প্রয়োগ করেন। এই নীতিরও কতগুলি শর্ত ছিল যেগুলি হল-

  • ক) কোম্পানির দ্বারা সৃষ্ট দেশীয় রাজ্যের রাজার পুত্র সন্তান না থাকলে রাজারা দত্তক নিতে পারবেন না এবং সেই রাজ্যটি রাজার মৃত্যুর পর সরাসরি ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হবে।
  • খ) ইংরেজ আশ্রিত রাজ্যগুলি দত্তক নেওয়ার আগে কোম্পানির অনুমতি নেবে নতুবা ওই রাজ্যটি সরাসরি কোম্পানির শাসনাধীনে চলে যাবে।
  • গ) দেশীয় স্বাধীন রাজ্যগুলির সম্পর্কে কোম্পানি নিরপেক্ষ থাকবে।

আরো পড়ুন পৃথিবীর অন্দরমহল এর ছোট প্রশ্ন ও উত্তর। অষ্টম শ্রেণি

 

স্বত্ববিলোপ নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে কোম্পানির পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রাধান্য প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ চূড়ান্ত রুপ পেয়েছিল। ঐ নীতির প্রয়োগ কর্তা লর্ড ডালহৌসির আমলে কোম্পানির আগ্রাসী রুপ প্রকট হয়েছিল। ডালহৌসি এই নীতি প্রয়োগের মাধ্যমে সাতারা, সম্বল্পুর, ঝাঁসি, প্রভৃতি অঞ্চল দখল করে নেন। শুধু তায় নয় এমনকি কোম্পানির সেনাবাহিনীর খরছ মেটানোর জন্য হায়দ্রাবাদের বেরার প্রদেশ ছিনিয়ে নেয় ডালহৌসি।

১৮৬৫ খ্রিস্টাব্দে অপশাসনের অজুহাতে অযোধ্যার বাকি অংশ কোম্পানির দখলে নিয়ে আসেন ডালহৌসি। দ্বিতীয় ইঙ্গ – মহীশুর যুদ্ধে জেতার ফলে পাঞ্জাবও ক্রমে কোম্পানির অধিকারে চলে আসে। আর এইভাবেই ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লর্ড ডালহৌসির নেতৃত্বে ভারতীয় উপমহাদেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে ব্রিটিশ কোম্পানির অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়ে গিয়েছিল।

আরো পড়ুন শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা করো

 

অবশেষে আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ সময় করে এই পোস্টটি পড়ার জন্য। এভাবেই চিরদিন https://artsschool.in এর এই ব্লগের পাশে থাকুন যাতে ভবিষ্যতে আরো উন্নত মানের Study material & Notes আপনাদের সামনে তুলে ধরতে পারি। একটাই অনুরোধ করবো নিয়মিত আমাদের এই ব্লগে Visit করুন এবং নিজের জ্ঞানের ভাণ্ডারকে আরো সমৃদ্ধ করে তুলুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!