Menu

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড এর প্রেক্ষাপট ও গুরুত্ব

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডঃ 

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড; প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর ১৯১৯ খ্রিঃ বিচারপতি সিডনি রাওলাটের নেতৃত্বে ৫ জন সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিশন ব্রিটিশ সরকার ভারতে নিয়োগ করে। এই কমিশন রাওলাট কমিশন বা সিডনি কমিশন নামে পরিচিত। ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দে কুখ্যাত ও দমনমূলক রাওলাট আইন পাশ হলে এই আইনের বিরুদ্ধে সারা দেশে তীব্র প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে উঠতে থাকে। এর মধ্যে পাঞ্জাবে রাওলাট আইন সহ ব্রিটিশ সরকারের বিভিন্ন নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আন্দোলন ব্যপক আকার ধারণ করে ফলে সবচেয়ে করুন পরিণতি ঘটে জালিয়ানওয়ালাবাগের ভয়াবহ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে দিয়ে।

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড
জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড এর প্রেক্ষাপটঃ

পাঞ্জাবের অত্যাচারঃ পাঞ্জাবের মুখ্য প্রশাসক মাইকেল ডায়ারের অত্যাচারী শাসন পাঞ্জাবকে বারুদের স্তূপে পরিণত করে। পাঞ্জাবে অত্যাচার ও জুলুম চালিয়ে পাঞ্জাব থেকে অর্থ ও সেনা সংগ্রহ করার জন্য পাঞ্জাবিদের উপর চরম নির্যাতন করা হতে থাকে। এর প্রতিবাদে ব্রিটিশ সরকারের বিরুদ্ধে পাঞ্জাবের মানুষ ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে।

রাওলাট আইনের প্রয়োগঃ অশান্তির সময় ১৯১৯ খ্রিঃ মার্চ মাসে, শুধুমাত্র ভারতীয় জাতীয়তাবাদ ও ব্রিটিশ বিরোধী কার্যকলাপ রোধ করার জন্য কুখ্যাত রাওলাট আইন প্রবর্তন করা হলে, দেশবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বলা যায় ১৯১৯ খ্রিঃ মার্চ মাস থেকেই পাঞ্জাবের অবস্থা অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে।

নেতৃবৃন্দের গ্রেফতারঃ রাওলাট আইনের প্রতিবাদের জন্য people’s committee নামক একটি সংগঠন লাহোর ও অমৃতসরে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। এই অবস্থায় সরকার ১৯১৯ খ্রিষ্টাব্দের ১০ই এপ্রিল, অমৃতসরের স্থানীয় দুই নেতা সৈফুদ্দিন কিচলু ও ড. সত্যপালকে হিংসায় মদত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করলে জনতা উত্তেজিত হয়ে ওঠে। অন্যদিকে গান্ধীজীকে গ্রেফতার করা হয়েছে এই খবর ছড়িয়ে পড়লে জনতা মারমুখী হয়ে ওঠে এবং উত্তেজিত জনতা নারীপুরুষদের উপর আক্রমণ চালাতে থাকে।

অমৃতসরে সামরিক শাসন জারিঃ রাওলাট আইন বিরোধী আন্দোলন অমৃতসরে প্রবল হয়ে উঠলে সেখানকার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাইকেল ও ডায়ারের নেতৃত্বে সামরিক বাহিনির হাতে অমৃতসরের শাসন ভারের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয়। সেখানে সামরিক আইন জারি করে ওই শহর জনসভা ও সমাবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। এর প্রতিবাদে জালিয়ানওয়ালাবাগের এক বাগান ঘেরা অঞ্চলে নিরস্ত্র জনগন সমবেত হলে ডায়ারের নির্দেশে ১৬০০ রাউন্ড গুলি চালানো হয় নিরস্ত্র জনগণের ওপর। তাতে প্রায় ৩৭৯ জন নিহত ও প্রায় ১২০০ জন আহত হয়, যা জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড নামে পরিচিত।

আরো পড়ুন অধীনতামূলক মিত্রতা নীতি ও স্বত্ববিলোপ নীত

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডের প্রতিক্রিয়াঃ

সঙ্গত কারনেই জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড কে  কেন্দ্র করে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। এই ঘটনার মধ্যে দিয়ে ব্রিটিশ শাসনের প্রকৃত নগ্ন রূপটি প্রকাশিত হয়। দেশে বিদেশে সর্বত্র সরকারের এই নগ্ন স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সরকার অবশ্য জেনারেল ও ডায়ারের কাজকে সমর্থন করে বলেছেন যে, পাঞ্জাবের ঘটনা দেশের মানুষের কাছে সভ্যতা ও সাম্রাজ্যবাদের মুখোশধারি বিদেশি শাসনের কুৎসিত ও ভয়াবহ রূপটি প্রকাশ করে দেয়। প্রতিক্রিয়ার স্বরূপগুলি হল-

ক্ষোভ প্রকাশঃ জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড এর প্রতিবাদে দেশের সর্বত্র ঘৃণা ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। সুরেন্দ্রনাথ ব্যানার্জি বলেছেন যে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ভারতে যে মহাযুদ্ধের আগুন জ্বালিয়েছিল, তা উত্তর দক্ষিণ পূর্ব পশ্চিম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং সবার হৃদয়কে আন্দোলিত করে।

উপাধি ত্যাগঃ জালিয়ানওয়ালাবাগের ঘৃণ্য ও পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রিটিশদের দেওয়া ‘নাইট’ উপাধি পরিত্যাগ করেন।

জাতীয় কংগ্রেসের প্রতিবাদঃ জাতীয় কংগ্রেসও এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র প্রতিবাদ করে, কংগ্রেস নেতা C.F Andrus এই ঘটনাকে ‘কসাইখানার গণহত্যা’ বলে নিন্দা করেন। গান্ধিজি young India পত্রিকায় লেখেন ‘এই শয়তান সরকারের সংশোধন অসম্ভব। একে অবশ্যই ধ্বংস করতে হবে’।

ইংরেজদের প্রতিবাদঃ এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শুধু ভারতীয়রা নয় ইংরেজরাও তীব্র নিন্দা করেছিল। বহু ইংরেজ এই ঘটনাকে মর্মান্তিক ও নজিরবিহীন বলে নিন্দা করেছেন। ভাবি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী উইনস্টন চার্চিল বলেছেন – ‘এই ঘটনা অতি অস্বাভাবিক, পাশবিক, ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে এরকম ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি।‘

আরো পড়ুন শিক্ষা সংস্কারে বিদ্যাসাগরের ভূমিকা আলোচনা করো

 

জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ড এর এই notes টি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোনো অভিযোগ বা জিজ্ঞাসা থেকে থাকে তবে আমাদের জানান ইমেল এর মাধ্যমে। আমাদের ইমেল Address –

[email protected] . আর প্রতিদিন ভিসিট করুন আমাদে আর্টস স্কুল ডট ইন এর এই ব্লগে আরো নতুন নতুন notes এবং study materials পাবার জন্য। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!