বায়ুপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগ: মাধ্যমিক প্রাকৃতিক ভূগোলের অন্তর্গত বায়ু প্রবাহ বা বায়ুমণ্ডল অধ্যায়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো উদাহরণসহ বায়ুপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো, যা তোমাদের আগামী মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ, তাই আজকের এই আর্টিকেলটি পুরোপুরি দেখে নিও এবং পারলে নিজেদের নোটবুকে তুলে নিও.
উদাহরণসহ বায়ুপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো.
উচ্চচাপ বলয় থেকে নিম্নচাপ বলয় দিকে ভূপৃষ্ঠের সমান্তরালে বায়ুর চলাচলকে বায়ুপ্রবাহ বলা হয়। উৎপত্তি ও বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বায়ুপ্রবাহকে কয়েকটি ভাগে ভাগ করা যায়। যে গুলি হল –
নিয়ত বায়ুপ্রবাহ, সাময়িক বায়ু প্রবাহ, আকস্মিক বায়ু প্রবাহ, স্থানীয় বায়ু প্রবাহ।
ক) নিয়ত বায়ুপ্রবাহঃ
সারাবছর নির্দিষ্ট দিকে নিয়মিতভাবে যে বায়ু প্রবাহিত হয় তাকে নিয়ত বায়ুপ্রবাহ বলে। নিয়ত বায়ু প্রধানত তিন প্রকার, সেগুলি হল – আয়ন বায়ু, পশ্চিমা বায়ু ও মেরু বায়ু।
১) আয়ন বায়ুঃ
কর্কটীয় ও মকরীয় উচ্চচাপ বলয় থেকে নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয় এর দিকে প্রবাহিত বায়ু কে আয়ন বায়ু বলে। পূর্বে পালতোলা বাণিজ্য জাহাজগুলি এই বায়ুপ্রবাহের প্রভাবে যাতায়াত করতো বলে একে বাণিজ্য বায়ু বলেও অভিহিত করা হয়ে থাকে। আয়ন বায়ু আবার দুই প্রকারের হয়, সেগুলি হল – উত্তর পূর্ব আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু।
২) পশ্চিমা বায়ুঃ
উচ্চচাপ বলয় থেকে দুই মেরু বিত্ত নিম্নচাপ বলয় দিকে প্রবাহিত বায়ু কে পশ্চিমা বায়ু বলে। পশ্চিমা বায়ুর প্রভাবে মহাদেশ গুলির পশ্চিম দিকের উপকূলে শীতকালে বৃষ্টি হয়। পশ্চিমা বায়ুর দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যে গুলি হল – উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু এবং দক্ষিণ-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু।
৩) মেরু বায়ুঃ
সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে দুই মেরু বৃত্ত প্রদেশ নিম্নচাপ বলয় দিকে প্রবাহিত বায়ু কে মেরু বায়ু বলে। মেরু বায়ু অত্যন্ত শীতল ও শুষ্ক হয়, এই মেরু বায়ু কে দুটি ভাগে ভাগ করা যায়। যা হলো – উত্তর-পূর্ব মেরু বায়ু এবং দক্ষিণ-পূর্ব মেরু বায়ু।
খ) সাময়িক বায়ু প্রবাহঃ
বায়ুমন্ডলের তাপ ও চাপের পার্থক্যের কারণে সারাদিনের বিভিন্ন সময়ে ও ঋতুভেদে প্রবাহিত বায়ু কে সাময়িক বায়ু বলে। সাময়িক বায়ুর আবার বিভিন্ন প্রকার রয়েছে, যে গুলি হল – সমুদ্র বায়ু, স্থলবায়ু ও মৌসুমী বায়ু।
১) সমুদ্র বায়ুঃ
দিনের বেলায় সমুদ্র থেকে স্থলভাগের দিকে প্রবাহিত বায়ু কে সমুদ্র বায়ু বলে। অপরাহ্ণে সমুদ্র বায়ুর বেগ সর্বাধিক হয়, সমুদ্রের উপর দিয়ে আসার কারণে এই বায়ু শীতল হয় এবং সমুদ্র উপকূলবর্তী অঞ্চলে আরামদায়ক আবহাওয়া বিরাজ করে।
২) স্থলবায়ুঃ
রাতের বেলা স্থলভাগ থেকে সমুদ্রের দিকে প্রবাহিত বায়ু কে স্থলবায়ু বলা হয়ে থাকে। ভোরবেলা স্থল বায়ুর বেগ সর্বাধিক হয়।
৩) মৌসুমী বায়ুঃ
সমুদ্র ও স্থলবায়ুর বৃহৎ সংস্করণ হল মৌসুমী বায়ু। আরবি শব্দ মৌসম কথার অর্থ ঋতু, যা থেকে মৌসুমী কথাটি এসেছে। ঋতুভেদে স্থলভাগ ও জলভাগের তাপের তারতম্যের জন্য প্রবাহিত বায়ু কে মৌসুমী বায়ু বলে। মৌসুমী বায়ু কে আবার প্রধানত দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যে গুলি হল- গ্রীষ্মকালীন মৌসুমী বায়ু এবং শীতকালীন মৌসুমী বায়ু।
গ) আকস্মিক বায়ু প্রবাহঃ
ভূপৃষ্ঠের কোন স্থানে বায়ুচাপের তারতম্যের জন্য আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটলে অনিয়মিত ভাবে প্রবাহিত বায়ু কে আকস্মিক বায়ু প্রবাহ বলে। আকস্মিক বায়ু প্রবাহকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে, যে গুলি হল – ঘূর্ণবাত এবং প্রতীপ ঘূর্ণবাত।
১) ঘূর্ণবাতঃ
কোন স্থানে হঠাৎ উষ্ণতা বৃদ্ধি পেলে বায়ুর নিম্নচাপের সৃষ্টি হয়। এই সময়ে যে ঝড়ঝঞ্জা দেখা যায় তাকে ঘূর্ণবাত বলে। ঘূর্ণবাত এর প্রভাবে বায়ু কেন্দ্রমুখী ও ঊর্ধ্বগামী হয়। দুটি ভাগে ভাগ করা যায়, যে গুলি হল – ক্রান্তীয় মন্ডলের ঘূর্ণবাত এবং নাতিশীতোষ্ণ মন্ডলের ঘূর্ণবাত।
২) প্রতীপ ঘূর্ণবাতঃ
কোন স্থানে হঠাত শৈত্যের সৃষ্টি হলে বায়ুতে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। আবহাওয়া মেঘমুক্ত থাকে, একে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। প্রতীপ ঘূর্ণবাত এর প্রভাবে বায়ু বহির্মুখী ও নিম্নগামী হয়।
ঘ) স্থানীয় বায়ু প্রবাহঃ
স্থানীয় কারণে বায়ুমণ্ডলের উষ্ণতা ও চাপের পার্থক্য হেতু প্রবাহিত বায়ু কে স্থানীয় বায়ু বলে। যেমন রাজস্থানের লু, দক্ষিণ ভারতের আধি, পশ্চিমবঙ্গের কালবৈশাখি, সাহারা মরুভূমির সিরোক্কো, রকি পার্বত্য অঞ্চলের চিনুক ইত্যাদি।
আরো পরুন বদ্বীপ গঠনের অনুকূল পরিবেশ গুলি সম্পর্কে যা জানো লেখ
বিঃ দ্রঃ বায়ুপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগ; আমাদের আজকের এই উদাহরণসহ বায়ুপ্রবাহের শ্রেণীবিভাগ করো আর্টিকেলটি তৈরি করতে কিছু পাঠ্যবইয়ের সাহায্য নিতে হয়েছে, যদিও সেভাবে কোন প্রকাশকের কাছ থেকে অনুমতি নেয়া হয়নি, তাই আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটি নিয়ে আপনাদের কারো যদি কোন রকম সমস্যা থেকে থাকে তাহলে আমাদের ই-মেল করে জানান আপনার সমস্যার কথা। আমাদের ইমেইল এর ঠিকানা [email protected] আর এভাবেই https://artsschool.in এর পাশে থেকে তোমাদের সাপোর্ট দেখিও যাতে ভবিষ্যতেও আমরা এরকম আরো শিক্ষামূলক আর্টিকেল তোমাদের সামনে তুলে ধরতে পারি.