শিক্ষার হেরফের গল্পের পুর্নাঙ্গ আলোচনা; আমাদের আজকের এই আর্টিকেলটির আলোচনার বিষয় বস্তু বর্তমান কলেজের মানে কল্যাণী ইউনিভারসিটির নিয়মানুসারে AECC এর অন্তর্গত বাংলা সিলেবাসের একটি গল্প যা কিনা শিক্ষার হেরফের। জেটি তোমাদের প্রথম বর্ষের প্রথম সেমিস্টারে রয়েছে। তাহলে চলো দেখে নেওয়া যাক আজকের পুরো আর্টিকেলটি।
শিক্ষার হেরফের – রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর পুর্নাঙ্গ আলোচনা।
জাগিয়া উঠেছে প্রাণ,
ওরে উথলি উঠেছে বারি
ওরে প্রাণের বাসনা প্রাণের আবেগ
রুধিয়া রাখিতে নারি
শিক্ষার হেরফের গল্পের লেখক পরিচিতিঃ
একটিমাত্র পরিচয় আমার কাছে সে আর কিছু নয় আমি কবি মাত্র – এই সত্য উচ্চারণ করে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলা সাহিত্যের আবির্ভূত হয়েছিলেন। শৈশবকাল থেকে মৃত্যুর আগের মুহূর্ত পর্যন্ত মানবজীবনের কান্নাহাসির-দোল-দোলানো পৌষ-ফাগুনের পালা রচনা করে তিনি বিশ্বসাহিত্যের সূচিপত্রের এক অনন্য সাধারণ ব্যক্তিত্ব রূপে দেদীপ্যমান।
সাহিত্যের সর্বক্ষেত্রে তার স্বচ্ছন্দ বিচরণ লক্ষ করা যায়। 1861 খ্রিস্টাব্দে কলকাতার জোড়াসাঁকোর ঠাকুর পরিবারের রবীন্দ্রনাথের জন্ম। পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর, মা সারদা দেবী। প্রথাগত শিক্ষার প্রতি রবীন্দ্রনাথের অনুরোধ ছিল কম। ঠাকুরবাড়ির ঐতিহ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বাড়িতেই তাঁর বাল্যশিক্ষার ব্যবস্থা করা হয়।
আসলে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন অনন্য প্রতিভার কবি। মাত্র 12 বছর বয়স থেকে তার কবিতা রচনার সূত্রপাত। তারপর থেকে তাকে আর থামায় কে? মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্তে তার কন্ঠ থেকে নিশ্চিত হয়েছে কাব্য বীণার সুর ঝংকার।
1913 খ্রিস্টাব্দে গীতাঞ্জলি কাব্যের জন্য রবীন্দ্রনাথ নোবেল পুরস্কার লাভ করেন। কবিতা ছাড়া অস্ত্র ছোট গল্প নাটক উপন্যাস প্রবন্ধ ইত্যাদিও রচনা করেছেন তিনি এবং বাংলা সাহিত্য ভান্ডারকে সমৃদ্ধ করেছেন। বীরভূম জেলার বোলপুর এবং পূর্ববঙ্গের পদ্ধতির শিলাইদহ রবীন্দ্র সাধন ক্ষেত্রের অন্যতম তীর্থস্থান রূপে স্মরণীয়। বোলপুরে তার প্রতিষ্ঠিত বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় আজও স্বমহিমায় ভাস্কর।
শুধু সাহিত্য রচনা নয় দেশহিতব্রতে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন নিবেদিতপ্রাণ। স্বদেশী আন্দোলনের সময় তাঁর রচিত গান ও কবিতা দেশবাসীর বেদ মন্ত্র হয়ে উঠেছিল। আমাদের গর্ব এই যে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের শ্রেষ্ঠ কয়েকজন মণিষীদের মধ্যে অন্যতম। বিশ্ববন্দিত এই মহান কবি 81 বছর জীবিত থেকে 1941 খ্রিস্টাব্দে আগস্ট তার জীবন লীলা সাঙ্গ করেন।
শিক্ষার হেরফের রচনার উৎসঃ
শিক্ষার হেরফের প্রবন্ধটি প্রথম প্রকাশ পায় 1999 সালের পৌষ মাসে। ভারতীয়দের শিক্ষার ব্যবস্থা সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যে কয়েকটি প্রবন্ধে তার নিজস্ব চিন্তাধারা প্রকাশ করেছিলেন শিক্ষার হেরফের প্রবন্ধটি তাদের মধ্যে অন্যতম। রবীন্দ্রনাথ প্রথম শিক্ষা ব্যবস্থায় পরিষ্কার করে বললেন শিক্ষার হেরফের প্রবন্ধে।
শিক্ষার হেরফের বিষয় সংক্ষেপঃ
মানুষ সাধারণভাবে তার নিজের প্রয়োজন টুকু নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে পারে না। সে যেমন প্রয়োজনে নিজেদের শৃংখলাবদ্ধ করে রাখেন তেমনি আবার স্বাধীনতারও কামনা করে। মানবদেহের সারেতিনহাত পরিমাণ গৃহ নির্মাণ করা হয় না তেমনি শুধুমাত্র বই পড়লেই শিক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় পরিপূর্ণতা মেটেনা। এইজন্যই স্বাধীনভাবে অন্যান্য পুস্তক পাঠ করতে হবে কেননা তা না হলে অসম্পূর্ণ রয়ে যাবে মানসিক বিকাশ। কিন্তু এখন প্রয়োজন অতি দ্রুত বিদেশী ভাষা শিক্ষা করে পাশ করে কর্মযজ্ঞে প্রবেশ করা।
সেই জন্য সময়ের বড় অভাব। লেখক এর ধারণা বাঙালির ছেলেরা হতভাগ্য কারণ তাদের ভাগ্যে ব্যাকরণ অভিধান আর ভূগোল বিবরণ ছাড়া কিছুই জোটে না। আত্তীকরণ নয় পড়া মুখস্ত করতে হয়। না হলে পাঠশালার হজম করতে হয়। ছেলেবেলার এই অপুষ্টি রয়েই যায়। তাই অনেক বড় বড় ডিগ্রী অর্জন করলেও বাঙালি ছেলে মেয়েদের মধ্যে যথার্থ শিক্ষা না থাকার ফলে সৃজনী শক্তির বিকাশ হয় না।
নিচু ক্লাসের সমস্ত শিক্ষকরা শিক্ষা দান করেন, তারা সকলেই অল্প শিক্ষিত। হয়তো সবাই এই শ্রেণীতে পড়ে না। কিন্তু ইংরেজি সাহিত্য ও আদব কায়দা সম্পর্কে সিংহভাগই অজ্ঞ। lion is a noble animal – এই ইংরেজী বাক্যটির অনুবাদ করতে গিয়েই নানারকম অসুবিধার মুখোমুখি হতে হয়. এর ঠিকঠাক অনুবাদ বাংলায় সম্ভব নয়। কিন্তু তা নিয়ে কারো মাথাব্যাথা নেই, উদ্দেশ্য একটাই পাশ করে চাকরি জোটানো।
ছেলেরা যদি ভালোভাবে বাংলা পড়তো তাহলে অন্তত রামায়ণ মহাভারত ভাল করে জানতে পারত। কিন্তু ইংরেজি শিখতে গিয়ে না হল জ্ঞান অর্জন না হল খেলাধুলা, শরীর গঠন। শুধু তাই নয় শিক্ষাব্যবস্থার প্রচলিত ব্যবস্থার ফলে কল্পনাশক্তি চিন্তাশক্তির বিকাশের পথও রুদ্ধ। এর ফলে শুধু সময় কাটে। চিন্তাশক্তি কল্পনা শক্তির বিকাশ সাধন ঘটে না।
বাস্তবে এটাই সত্যি – আমরা যেভাবে জীবন নির্বাহ করি, সেই ভাবে বা অনুপাতে শিক্ষিত হয় না। কারণ প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার সঙ্গে জীবনের যোগ সাধন উপলক্ষ হয়ে পড়ে। সেই জন্যই পাশ্চাত্য দর্শন বিজ্ঞানে পন্ডিত হয়েও আমাদের দেশের শিক্ষিত ব্যক্তিরা কুসংস্কার গুলি অগ্রাহ্য করতে পারেন না। অর্থ রোজগারের চিন্তা এতটাই বড় হয়ে উঠেছে তারা নিজেদেরকে উচ্চতর ভাবের আদর্শকে অধিষ্ঠিত রাখেন না। স্বাভাবিকভাবেই পার্থক্য রয়েই যায় বিদ্যার ব্যবহারের মধ্যে। অথচ প্রয়োজনটাই হলো শিক্ষার সঙ্গে জীবনের সামঞ্জস্য বিধান।
রবীন্দ্রনাথের মতে এই গুরু দায়িত্ব পালনে সক্ষম বাংলা ভাষা ও বাংলা সাহিত্য। এতোকাল বাঙালি শিক্ষা ও ব্যবহারের মধ্যে যে অসামঞ্জস্য ছিল ইংরেজি শিক্ষা ও আদর্শের প্রতি পালিত হওয়ার ফলে হঠাৎ ঐ বঙ্গদর্শনের আবির্ভাবে সেই অসামঞ্জস্য দূরে সরে গিয়ে আনন্দের জোয়ারে ভেসে গেল বাঙালি মনীষা। বঙ্কিমের বঙ্গদর্শনে এমন কিছু ছিলনা যা বাঙালির কাছে নতুন ছিল। তবুও ইংরেজি শিক্ষা আর বাঙালি হৃদয়ের মধ্যে যে ব্যবধান ছিল তা ঘুচিয়ে ছিল বঙ্গদর্শনই।
আমাদের শিক্ষার সঙ্গে ভাষা এবং জীবনের সামঞ্জস্য সাধিত হয়নি, রচিত হয়নি যোগাযোগের রাস্তাও। এই কারণেই যখন সেটি দরকার পড়ে তখন আমরা হাতের কাছে সেটিকে পাইনা। এই হেরফের টি মুছে যাওয়া দরকার। এ যেন জলের মধ্যে থেকেও মাছের তৃষ্ণা। ভালো আছে তৃষ্ণাও আছে তবু পান করার উপায় নেই। কি অবস্থা! হাসি চাপতে পারছেনা, আর আমরা পারছি না অশ্রু সংবরণ করতে। মিটছে না পিপাসা। পরিপূর্ণতা পাচ্ছেনা শিক্ষাও – দুঃখ তো এখানেই।
শিক্ষার হেরফের গল্পের গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আলোচনাঃ
বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রতিভা-সূর্য শুধু সাহিত্যের অঙ্গনে আলোকিত করেনি, সমাজ শিক্ষা অর্থনীতি ইত্যাদি ক্ষেত্রেও তার হিরন্যদ্যুতির সম্যক প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। সাহিত্য সাধনা তার কাছে নিছক কল্পনা বিলাস ছিল না। সত্য মূল্য না দিয়ে সাহিত্যের খ্যাতি চুরি কে তিনি কখনও সমর্থন করেননি। কি সেই সত্য মূল্য?
সমাজ ও রাষ্ট্রের চিন্তায় হলো একজন কবি বা লেখকের এর প্রধান কাজ। কেননা সাহিত্যের বিষয় হল মানব সমাজ ও মানব চরিত্র। রবীন্দ্র ভাবনা একটা বিরাট অংশজুড়ে রয়েছে সমাজ ও রাষ্ট্র। বিশেষ করে তার অধিকাংশ প্রবন্ধই তার রাষ্ট্র ও সমাজ চিন্তার অনবদ্য ফসল। শিক্ষার হেরফের প্রবন্ধটি ও তার ব্যতিক্রম নয়।
ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা ব্যবস্থার প্রতি রবীন্দ্রনাথ বিরূপ মন্তব্য প্রকাশ করেছেন। উপনিবেশিক শাসন ব্যবস্থা কে মজবুত করতে ইংরেজরা এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থা চালু করেছিল তা নিছক কেরানি তৈরি ছাড়া আর কিছু নয়। রবীন্দ্রনাথ এই শিক্ষাব্যবস্থাকে কখনো সমর্থন করেননি। সেই শিক্ষার্থীর ওপর জোর দিয়ে প্রকৃত শিক্ষা অর্জিত হয়। শিক্ষার অপর নাম অভিযোজন প্রকৃত শিক্ষা একজন মানুষকে এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার উপযোগী করে তোলে। বিজ্ঞানের কথায় যোগ্যতমের জয়। পৃথিবীতে যে যোগ্য সেই টিকে থাকে। শিক্ষা মানুষকে পৃথিবীতে বেঁচে থাকার যোগ্য করে তোলে। সেই কারণে রবীন্দ্রনাথ বলেছেন, অন্তরের অমৃত তাহার সাহায্যে আমরা মৃত্যুর হাত এরাবোই।
অন্তরের অমৃত শিক্ষায় হলো প্রকৃত শিক্ষা। দেহ যেমন খাদ্য গ্রহণ করে, শিক্ষাকেও সেই ভাবে গ্রহণ করতে হবে। দেহে গৃহীত খাদ্য পরিপাক হয়ে পুষ্টি সাধন করে, শিক্ষাকে খাদ্য দ্রব্যের মত পরিপাক করতে হবে। তারপর তার আত্তীকরণ এর মাধ্যমে ব্যক্তিত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ সাধন করতে হবে। মানুষতো প্রয়োজনের সীমানায় আবদ্ধ নয়। আমাদের দেহের জন্য সাড়ে তিন হাত জায়গা দরকার তাই বলে কেউ সাড়ে তিন হাত জায়গা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে না। স্বাধীনভাবে বাঁচতে হলে সারেতিনহাত এর বাইরে বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু প্রথাগত বা গণ্ডিবদ্ধ শিক্ষার ক্ষেত্রে কেউ পূর্ণ মানুষ হয়ে উঠতে পারে না, তার সঙ্গে স্বাধীনতার পাট নামেসালে প্রকৃত মানুষ হওয়া যায়না।
Read More বাংলা চিত্রকলা চর্চায় অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুরের অবদান আলোচনা করো।
ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষা আমাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটাতে পারেনি। পার্থ নির্ধারিত কিছু বইয়ের গন্ডিতে বাল্যশিক্ষার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধ হতে পারেনা। স্বাধীন শিক্ষা না হলে শিশু শিশু থেকে যায় পূর্ণাঙ্গ হয়ে ওঠে না। ঔপনিবেশিক শিক্ষা ছিল মুখস্থনির্ভর।
ধান চাল গম প্রভৃতি খাদ্য শস্য ভান্ডার এমন করলে তার ক্ষয় হয় না। ইংরেজ আমলে শিক্ষার্থীরা ধান-চালের মত শিক্ষাকে মজুদ করে রাখত। ফলে তাঁর পরিপাকের কোন প্রশ্ন ছিল না। আমাদের পাক যন্ত্র দুটি – একটিতে খাদ্যের পরিপাক হয় অন্যটিতে শিক্ষার পরিপাক হয়। ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষায় আমাদের মানসিক পাক যন্ত্রটা ছিল উপবাসী। সেই কারণে আমাদের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটেনি। আনন্দহীন শিক্ষা নিরস জ্ঞানচর্চা ছাড়া আর কিছুই নয়। মুখস্ত বিদ্যার দাড়া একটা চাকরি কোনরকমে জুটবে- এই আশায় মানুষের বিদ্যা চর্চার ক্ষেত্রটি নির্দিষ্ট ছিল, তাই রবীন্দ্রনাথ বলেছেন – হাওয়া খাইলে পেট ভরেনা আহার করে পেট ভরে; কিন্তু আহাট রীতিমতো হজম করার জন্য হাওয়া খাওয়া দরকার। তেমনি একটা শিক্ষা পুস্তকের রীতিমতো হজম করতে অনেকগুলি পাঠ্যপুস্তক এর সাহায্য আবশ্যক।
এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বাঙালির ইংরেজি শিক্ষার পদ্ধতি কে তুলে ধরেছেন। বাংলা ভাষাকে অবহেলা করে শুধু ইংরেজিতে শিখতে গিয়ে বাঙালির একুল-ওকুল দু’কুলই গিয়েছিল। চিন্তাশক্তি এবং কল্পনাশক্তি জীবনযাত্রা নির্বাহের পক্ষে দুটি আবশ্যক শক্তি। ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষায় সেই পথ একেবারেই অবরুদ্ধ হয়েছিল। বিদ্যা জমা করার বস্তু নয়। তার আত্তীকরণ না ঘটলে চিন্তাশক্তিও কল্পনা শক্তির বিকাশ ঘটে না। সেই কারণে রবীন্দ্রনাথ অতি দ্রুত ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষাব্যবস্থার গণ্ডি থেকে বেরিয়ে আসতে বলেছেন। তার বক্তব্য – ছেলে যদি মানুষ করিতে চাই তবে ছেলেবেলা হইতে তাকে মানুষ করিতে আরম্ভ করিতে হইবে; নতুবা সেই ছেলেই থাকিবে মানুষ হইবে না। তাই আমাদের কর্তব্য শিশুকাল থেকে কেবল স্মরণ শক্তির উপর সমস্ত ধরনা দিয়ে চিন্তা ও কল্পনা শক্তির বিকাশের ওপর জোর দিতে হবে।
Read More: ওটা পাশবিক স্বার্থপরতা – কে, কোন বিষয়কে পাশবিক স্বার্থপরতা বলে উল্লেখ করেছে? তার এরকম বলার কারণ কী?
মনুষ্যত্বের সর্বাঙ্গীণ বিকাশ না ঘটলে মানুষ আর পশু তে কোন পার্থক্য থাকে না। ইংরেজ প্রবর্তিত শিক্ষায় আমরা ভারবাহী পশুর পরিণত হয়েছিলাম। আমাদের মনুষ্যত্বের বিকাশ ঘটেনি। নিরস শিক্ষায় আমাদের মন মরুভূমিতে পরিণত হয়েছিল। ফলে এই রূপ রস গন্ধ ভরা পৃথিবীর আহ্বান আমাদের কানে পৌঁছায় নি। সুন্দর কুসুমিতা মহাজগতের সৌন্দর্য আমাদের মনের আয়নায় ছায়া ফেলতে পারেনি। আসলে আমাদের বাল্যশিক্ষার ভাষার সঙ্গে ভাব ছিল না। আবার বয়স হলে তার বিপরীত ঘটে। তখন ভাব আসে কিন্তু ভাষা আসে না। ভাষার সঙ্গে ভাবের সম্মেলন না ঘটলে চিন্তার বিকাশ ঘটে না। আমাদের সব আছে, শুধু সম্মিলনের অভাব। আলোচ্য প্রবন্ধে এই শিক্ষার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য সম্পর্কে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বাণী রূপ লাভ করেছে।